সারা দেশে সংগ্রাম পরিষদ গঠনের আহ্বান বঙ্গবন্ধুর
স্টাফ রিপোটার :: একাত্তরের উত্তাল মার্চে একেকটি দিন যাচ্ছে আর বাঙালিরা ইস্পাত কঠিন শপথে বলীয়ান হয়ে উঠছে। কোণঠাসা হয়ে পড়ছে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। প্রগতিশীল মুক্তমনা মানবতাবাদী সব শ্রেণি- পেশার মানুষ বাঙালিদের দাবির প্রতি একাত্ম হয়ে পড়ছেন। ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিকামী বাঙালিকে স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন বাঙালি সে অনুযায়ী লড়াই করার মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। তারই অংশ হিসেবে দেশব্যাপী প্রতিবাদ বিক্ষোভের মাত্রা বেড়ে চলেছিল। সারাদেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অসহযোগ আন্দোলন ও স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন চলতে থাকে। এ অবস্থায় বঙ্গবন্ধু নিজ নিজ এলাকায় সবাইকে সংগ্রম পরিষদ গঠনের আনুষ্ঠানিক আহ্বান জানান। সব ইউনিট ও ইউনিয়নে সংগ্রাম পরিষদ গঠনের নির্দেশ দেয় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটি। জাতীয় শ্রমিক লীগের জরুরি সভায় স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
একাত্তরের এই দিনে জাতীয় পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ জহির উদ্দিন পাকিস্তান সরকারের দেয়া খেতাব বর্জন করলে আন্দোলনকারীদের ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত করে। এদিকে সামগ্রিক পরিস্থিতিতে ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসের নির্ধারিত কর্মসূচি বাতিল করতে বাধ্য হয় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। রাওয়ালপিন্ডিতে সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ঘোষণা দেয়া হয়। এদিন বঙ্গবন্ধুর খবর প্রচারের নিয়ন্ত্রণ আরোপের প্রতিবাদে রেডিওর করাচি কেন্দ্রের প্রখ্যাত বাংলা খবর পাঠক সরকার কবীর উদ্দিন রেডিও পাকিস্তান বর্জন করেন। তার এই সিদ্ধান্ত অন্য সহকর্মীদের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। রেডিও পাকিস্তানে সৃষ্টি হয় এক ভিন্ন আবহ। গত কয়েকদিনের মতো এদিনও বগুড়া জেলখানা ভেঙে ২৭ কয়েদি পালিয়ে যান।
অসহযোগ আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব সিনেমা হল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন চলচ্চিত্র প্রদর্শকরা। গণঐক্য আন্দোলনের প্রধান এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান লাহোরে এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তান রক্ষা করার জন্য ইয়াহিয়াকে তাগিদ দিয়ে বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা ছাড়া বিকল্প নেই। লাহোরে ন্যাপের মহাসচিব সিআর আসলাম বলেন, শক্তি প্রয়াগের নীতি অব্যাহত থাকলে পূর্ব পাকিস্তানে বিচ্ছিন্নতার মনোভাব শক্তিশালী হবে।