রাগীব আলীর দখল থেকে দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও শাস্তি দাবি
ডেস্ক রিপোর্ট :: সিলেটের ‘ কথিত দানবীর’ হিসেবে পরিচিত রাগীব আলীর দখল থেকে দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার করে তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান আদিবাসী পার্টি। আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানানো হয়।
সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি মিঠুন চৌধুরী প্রশ্ন তুলে বলেন, রাগীব আলী মুসলিম। তিনি কীভাবে দেবোত্তর সম্পত্তির সেবায়েত হন। দেবোত্তর সম্পত্তি দখলের অভিযোগে রাগীব আলীর বিরুদ্ধে করা মামলায় আপিলের ওপর গত ১৯ জানুয়ারি রায় দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির বেঞ্চ। রায়ে তারাপুর চা বাগানের দেবোত্তর সম্পত্তির ওপর নির্মিত রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থাপনা ৬ মাসের মধ্যে সরিয়ে আবার সেখানে চা বাগান করার নির্দেশ দেওয়া হয়। স্থাপনা অপসারণের সব ব্যয় বহন করবে রিট আবেদনকারী। বলা হয় ওই চা বাগান দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে কোনোভাবে সেবায়েত বা তাঁর মনোনীত ব্যক্তি স্থানান্তর করতে পারবেন না। এ ছাড়াও সরকারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৩০ লাখ ৭৬ হাজার টাকা ও ওই বাগান থেকে চা রপ্তানি বাবদ আয়ের ৫ কোটি টাকা সেবায়েতের কাছে ফেরত দিতে বলা হয়। রিট আবেদনকারীদের সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করাসহ রায়ে ১৭টি নির্দেশনা দেওয়া হয়। এই রায়ের কথা উল্লেখ করে মিঠুন চৌধুরী বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের রায়কে স্যালুট জানাচ্ছি। এই রায় দ্রুত বাস্তবায়নের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হোক।
মানববন্ধনের প্রধান অতিথি হীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, রাগীব আলী মানুষের সম্পত্তি আগ্রাসন করে এভাবেই শিল্পপতি হয়েছেন। অবিলম্বে তাঁর দ্বারা বেহাত হওয়া সম্পত্তি দ্রুত পুনরুদ্ধারের ব্যবস্থা করা হোক। মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন পার্টির সদস্য দুলাল সাহা, সুনীল চন্দ্র মল্লিক প্রমুখ।
মানববন্ধনে সাংবাদিকদের দেওয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিলেটের তারাপুর চা বাগানের মালিক ছিলেন সিকে হারাধন। তাঁর মৃত্যর পর এই চা বাগানসহ তাঁর সব স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি স্থানান্তর করা হয় বৈকুণ্ঠ চন্দ্র গুপ্তের নামে। পরে তিনি শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ জিউর দেবতার নামে রেজিস্ট্রি দানপত্র করে দেন। ১৯৬৮ সাল থেকে এই সম্পত্তি দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছিল। বৈকুণ্ঠ চন্দ্রের মৃত্যুর পর রাজেন্দ্র লাল গুপ্ত সম্পত্তির সেবায়েত নিযুক্ত হন। রাজেন্দ্র গুপ্ত মারা গেলে তাঁর ছেলে পঙ্কজ কুমার গুপ্ত সেবায়েতের দায়িত্ব পান। পঙ্কজ ভারতে চলে গেলে কথিত পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মূলে দেবোত্তর সম্পত্তির সেবায়েত বনে যান রাগীব আলীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় দেওয়ান মোস্তাক মজিদ। ১৯৮৯ সালে মোস্তাক রাগীব আলীর ছেলে আবদুল হাইকে এ সম্পত্তি ৯৯ বছরের জন্য লিজ দেন। এ জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সহকারী সচিব মির্জা ফজলুল করিমের সাক্ষর জাল করে চিঠি দেখানো হয়। চা বাগান উদ্ধারে গঠিত সংসদীয় তদন্ত কমিটি সে সময় তারাপুর চা বাগান আত্মসাতের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়েরের সুপারিশ করেন। এরপর বিভিন্ন সময় রাগীব আলীর বিরুদ্ধে দেবোত্তর সম্পত্তি দখল ও তালীবপুরের নাম পাল্টে ‘রাগীবনগর’ করার চেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়।