আলিগড়ে ‘আলিগড়’ নিষিদ্ধ!
বিনোদন ডেস্কঃ ভারতে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমকামী অধ্যাপককে নিয়ে নির্মিত একটি চলচ্চিত্র স্থানীয়দের বাধার মুখে খোদ আলিগড়েই দেখানো সম্ভব হচ্ছে না। ২০১০ সালে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রামচন্দ্র সিরাস-কে সমকামিতার দায়ে কর্তৃপক্ষ সাসপেন্ড করেন ও ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেন। দুমাস বাদে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। কিন্তু অধ্যাপক সিরাসের জীবন নিয়ে তৈরি ছবি ‘আলিগড়ে’র বিরুদ্ধে সেখানকার একটি মুসলিম সংগঠন প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। শহরের বিজেপি মেয়রও তাদের সমর্থন করেছেন।
লন্ডন থেকে বুসান – দুনিয়ার নানা ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল সার্কিটে সমালোচকদের বিপুল প্রশংসা পাওয়ার পর ‘আলিগড়’ ছবিটি ভারতে মুক্তি পেয়েছে শুক্রবার। কিন্তু যেখানকার গল্প নিয়ে এই ছবিটি তৈরি – উত্তরপ্রদেশের সেই আলিগড় শহরের কোনও সিনেমা হলেই পরিচালক হনসল মেহতা’র তৈরি এই ছবিটি দেখানো যাচ্ছে না। যদিও সেখানে একাধিক প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল।
আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে মারাঠি পড়াতে এসেছিলেন অধ্যাপক রামচন্দ্র সিরাস। অবিবাহিত মি সিরাস একাই থাকতেন ক্যাম্পাসে। ছ’বছর আগে স্থানীয় টিভি চ্যানেলের স্টিং অপারেশনে এক রিক্সাওলার সঙ্গে তাঁর আলিঙ্গনরত ছবি ছড়িয়ে পড়ার পরই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে বের করে দেন। কিছুদিন পর শহরের এক কোণে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়।
আপত্তি কেন?
ছবিটি নিয়ে শহরের মিল্লাত বেদারি মুহিম কমিটি নামে একটি মুসলিম সংগঠনের আপত্তির প্রধান কারণ ছবির টাইটেল বা নাম। সংগঠনের নেতা জসিম মোহাম্মদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘‘ছবিতে কী দেখানো হয়েছে তা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই – কিন্তু আমাদের আপত্তি আলিগড় নামটা নিয়ে। ছবির নাম আলিগড় রাখার প্রতিবাদে আমরা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদেরও চিঠি দিয়েছি।’’
“আসলে আলিগড় শুধু একটা শহর তো শুধু নয় – এটা একটা সংস্কৃতির নাম। মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় আর এখানকার তালা-শিল্পের জন্য সারা পৃথিবী আলিগড়কে চেনে, সারা দুনিয়া থেকে ছাত্ররা এখানে পড়তে আসে। সেই আলিগড়কে অপমান করতেই চক্রান্ত করে এমনটা করা হয়েছে বলে আমাদের বিশ্বাস”, বলছেন জসিম মোহাম্মদ।
এই বাধার মুখে আলিগড়ের সব সিনেমা হল থেকেই ছবিটি তুলে নেওয়া হয়েছে – যদিও প্রশাসন দাবি করেছে আলিগড়ে ছবিটি দেখানোর ব্যাপারে কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে কংগ্রেস মুখপাত্র মনীশ তিওয়ারি বলেছেন, কিছু অসহিষ্ণু লোকের চাপের কাছে নতিস্বীকার করা হচ্ছে।
তার কথায়, ‘‘আলিগড়ের এই লোকগুলো ছবিটা হজম করতে পারছেন না। ঘটনা হল, আমরা যেটাকে স্বাভাবিক যৌনতা বলে মনে করি, সমকামিতাও কিন্তু ততটাই স্বাভাবিক। আমাদের দেশের মানুষ যত তাড়াতাড়ি এই সত্যিটা মেনে নেন, ততই ভাল।’’
জসিম মহম্মদ প্রথমে বলেছিলেন ছবির বিষয়বস্তু নিয়ে তাদের কিছু বলার নেই – কিন্তু একটু পরেই তিনি মন্তব্য করেন ছবি দেখে মনে হচ্ছে পুরো আলিগড়েই যেন সমকামিতার চর্চা হয়ে থাকে – সেটা তাদের পক্ষে মানা সম্ভব নয়। তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, ‘‘আলিগড়ের মানুষ এটা ভালভাবে নিচ্ছে না। বিষয়টা নিয়ে উত্তেজনা আছে?’’
‘‘এই জন্যই কিন্তু আমাদের মেয়র শকুন্তলা ভারতী থেকে শুরু করে শহরের হিন্দু-মুসলিম-শিখ-খ্রীষ্টান সবাই ছবিটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে মুখর। ছবিটা আলিগড়ে দেখানো হচ্ছে না এ কারণেই’’।
কারণটা যা-ই হোক, আলিগড় থেকেই ছবিটা বিদায় নেওয়ার পর এই ছবির নির্মাতারা যথারীতি হতাশ। পরিচালক হনসাল মেহতা টুইট করেছেন, ‘প্রফেসর সিরাস-কে আলিগড় আজ দ্বিতীয়বার হত্যা করল’। সূত্র: বিবিসি বাংলা।