বিশ্বনাথে সুন্নি জনতার পাল্টা সংবাদ সম্মেলন: সমুচিত জবাব দিতে আমরা প্রস্তুত
ডেস্ক রিপোর্টঃ বিশ্বনাথে মুসলিম সুন্নি জনতার ব্যানারে শুক্রবার বেলা ২টায় ১৫ মিনিটে স্থানীয় একটি অভিজাত হোটেলে বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবের কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছে। সংবাদ সম্মেলনে সুন্নি জনতার পক্ষে লিখিত বক্তব্যে পাঠ করেন মাওলানা হাবিবুর রহমান।
তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত ২২ ফেব্রুয়ারী বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবে আয়োজিত কওমী উলামায়ে কিরামের নামে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত বক্তব্য বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে দৃষ্টিগোচর হওয়ায় এ বিষয়ে আমাদের প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্যে এ সংবাদ সম্মেলনের আহবান করা হয়েছে। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের প্রতিবাদে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন নিয়ে আমাদের কোন বক্তব্য নেই। কারণ আলোচিত পত্রিকাদ্বয়ের সংবাদ কতটুকু বস্তুনিষ্ট ছিল তা সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক ও পত্রিকা কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবেন। তবে উক্ত পত্রিকাদ্বয়ের প্রকাশিত সংবাদ যে শতভাগ সত্য, সে দিন বাগিছাবাজারে উপস্থিত হাজার হাজার মুসলিম জনতা তার স্বাক্ষী হয়ে আছেন। বরং, আমরা এ জন্য আনন্দিত যে, ‘‘বিশ্বনাথে মিলাদ-কিয়াম নিয়ে বাহাছ: শেষ পযর্ন্ত দেখা মিলেনি ওহাবীদের’’ এই শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের কারণে তাদের গাত্রদাহ সৃষ্টি হওয়ায় তারা নিজেরাই নিজেদের ওহাবী বলে মেনে নিলেন। অথচ এ ওহাবী মতবাদ যে একটি বাতিল মতবাদ, তা ইসলামের ইতিহাসে সর্বজন স্বীকৃত। তাছাড়া পরের দিন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে দূরবর্তী মুসলিম জনতার মাঝে যে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছিল, তাদের সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ বিভ্রান্তিরও নিরসন হয়ে গেল। আবারো প্রমাণিত হল আমরা বাগিছা বাজারে ছিলাম বরং তারা-ই সেদিন বাগিছা বাজারে আসেননি। এ দুটি কারণে তাদেরকে ধন্যবাদ জানাতেই পারি।
তিনি বলেন, গত ১৯ ফেব্রুয়ারী বাগিছা বাজারে কোন বাহাছ ছিলনা বলে তারা অপপ্রচার চালিয়ে ছিলেন, অথচ তাদের সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ কথা সুস্পষ্ট ভাবে প্রমাণিত হল যে, তারা-ই ১৫ ফেব্রুয়ারী তারিখে তাদের আল-বালাগ তাফসিরুল কোরআন পরিষদ’র মাহফিলে বাহাছের ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং বাহাছের জন্য থানায় অনুমতিও চেয়েছিলেন। এরপর ১৮/০২/১৬ ইংরেজি তারিখ রাত্রে “তৌহিদি জনতার উদ্যোগে, দেওবন্দি উলামায়ে কিরামের পক্ষে মাইকিংও করা হয়। যদিও তাদের সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন “বাগিছা বাজার সংলগ্ন মাঠে ১৯/০২/২০১৬ ইংরেজি বিকাল ২ ঘটিকার সময় ঈমান আকিদা বিনষ্টকারী এবং সমাজে চরম উত্তেজনা ও হানাহানি অপপ্রচারের বিরুদ্ধে এক জরুরী প্রতিবাদ সভার আহবান করা হয়।” কিন্তু তাদের এ বক্তব্য ও মাইকিংয়ের ঘোষণার সাথে যে আকাশ পাতাল ব্যবধান, তা মাইকিংয়ের ঘোষণা শুনেছেন এমন হাজার হাজার মানুষই তার জলন্ত স্বাক্ষী। তবে, এ ব্যাপারে আমাদের বক্তব্য হলো, বাহাছের তারিখ দিয়ে মাইকিং করে যথা সময়ে যথা স্থানে উপস্থিত হতে না পারলে মধ্যস্ততায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের কাছেতো অপারগতার কারণ সম্বলিত সংবাদ পৌছানো উচিত ছিলো। তা না করে ঘটনার ৩ দিন পর সংবাদ সম্মেলন করে যে কোন অজুহাত উপস্থাপন কি অনুপস্থিতির উপযুক্ত জবাব হতে পারে? তাছাড়া ১৯/০২/১৬ ইংরেজি তারিখ বিকাল ২ ঘটিকায় বাগিছা বাজার সংলগ্ন মাঠে উপস্থিতির মাইকিং করে বাগিছা বাজারে জড়ো না হয়ে এই তারিখে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে ময়নাগঞ্জ বাজারে পরামর্শ সভার জন্য জমায়েত হওয়ার কি যৌক্তিকতা থাকতে পারে? লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, বাহাছের তারিখ দিয়ে মাইকিং করে প্রতিপক্ষকে যে কোন অপারগতা বা অক্ষমতা না জানিয়ে যারা অনুপস্থিত থাকেন তাদেরকে যা বলার তা-ই বাগিছা বাজারে আয়োজিত বাহাছে ও সূন্নি মহা সমাবেশ থেকে বলা হয়েছে। একে মিথ্য বক্তব্য বা অপপ্রচার বলার কোন সুযোগ আছে বলে আমরা মনে করি না।
তাছাড়া সিলেট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরীর উপস্থিতিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিশ্বনাথ উপজেলা শাখার সভাপতি আলহাজ্ব পংকি খানের বক্তব্য আনুষ্ঠানিক ভাবে মাইকে প্রচার করা হয়েছে, সিলেটের স্থানীয় এবং জাতীয় পত্রিকাসহ বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে ২০/০২/১৬ ইংরেজি তারিখে প্রকাশিত হয়েছে। ভিডিও ক্লিপসহ এর প্রমাণও আমাদের কাছে রয়েছে। এটা যে আমাদের অপপ্রচার নয়, তার স্বাক্ষী উপস্থিত হাজার হাজার জনতা। আকিদাগত নানাবিধ মত-প্রার্থক্য থাকা সত্ত্বেও বিশ্বনাথ তথা বাংলাদেশের আলিয়া-কওমী সকল পন্থী উলামায়ে কিরামসহ তাদের অনুসারী মুসলিম জনতা সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি বজায় রেখে পরস্পর সহাবস্থান করে আসছেন। কিন্তু অখ্যাত একজন কথিত মাওলানা কি কারণে যে তাফসিরের নামে এ অমূলক ওয়াজের মাধ্যমে বাড়াবাড়ি করে শান্তি প্রিয় মুসলিম জনতার মাঝে অশান্তি সৃষ্টির পায়তারা করলেন, তা আমাদের বোধগম্য নয়। আমাদের সন্দেহ, মুসলমানদের মাঝে বিশৃংখলা সৃষ্টির জন্য এটা লা-মাযহাবি, সলফী কিংবা আইএস এর পরিকল্পিত কোন ষড়যন্ত্রের অংশ কি না? তা সকলের ভেবে দেখা দরকার। কওমী উলামায়ে কিরামের নামে সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হয়েছে “উল্লেখ্য যে বাহাছের জন্য বিষয়বস্তু নির্ধারণ করে উভয় পক্ষের উলামাদের স্বাক্ষরসহ প্রশাসনের অনুমতি একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু এখানেতো সূন্নি ও কওমী উলামায়ে কিরাম স্বাক্ষরকৃত কোন কাগজপত্র ছিল না” অন্যত্র তারা উল্লেখ করেছেন “শান্তি-শৃংখলা নিশ্চিত করে নিয়মতান্ত্রিক বাহাছের ব্যবস্থা হলে যে কোন সময় বাহাছের জন্যে প্রস্তুত।” আমরা তাদের এ বক্তব্যের জবাবে ঘোষনা করছি যে, পূণরায় যদি তাদের বাহাছ করার ইচ্ছা জাগে তাহলে তাদের উপস্থাপিত নীতিমালা অনুযায়ী বাহাছের মাধ্যমে সমুচিত জবাব দেয়ার জন্য বিগত দিনের মত অপেক্ষায় থাকবো।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, মাওলানা লুৎফুর রহমান মাওলানা মঞ্জুর আহমদ রফীকুল ইসলাম মুবীন,আলী আনহার শাহান ফয়জুল ইসলাম, মাও. আখতার আলী, আকমল হোসেন শাকুর, ফয়জুল ইসলাম ফয়েজ,নুরুল ইসলাম, আবদুর রহিম শিকদার,মালেক মিয়া, সাইফুল আলম, সমছু মিয়া প্রমুখ।