বাহুবলে ৪ শিশুকে হত্যা, শেয়াল-কুকুরের কামড়ে বিক্ষত শরীর
ডেস্ক রিপোর্টঃ হবিগঞ্জের বাহুবলের সুন্দ্রাটিকি গ্রামে এখন শোকের ছায়া। সুন্দ্রাটিকিতে সুখ নেই। বুধবার সকালে এই গ্রামের ৪ শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
মরদেহ উদ্ধারের পর থেকেই নিহতদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। প্রিয় সন্তানদের হারিয়ে নিহতদের মা বাবারা বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন। পুরো সুন্দ্রাটিকি গ্রামই যেন শোকের ছায়া নেমে এসেছে। যদিও এই নৃশংস ঘটনার সাথে কারা জড়িত তা কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি।
তবে পুলিশ ও বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, প্রায় তিন মাস আগে ওই গ্রামের জনৈক আব্দুল আলীর ছেলে রুবেল ইভটিজিং করার প্রতিবাদে ফয়েজাবাদ স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরা মানব বন্ধন আয়োজন করলে এ সময় রুবেলের সাঙ্গ পাঙ্গরা হামলা চালায়। এনিয়ে গ্রামবাসীদের সাথে আব্দুল আলীর লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
এদিকে এক মাস আগে সাজিদ মিয়ার বাড়ীর সীমানা নিয়ে জনৈক প্রতিবেশীর মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে আব্দুল আলী সালিসের জন্য এগিয়ে আসেন। সাজিদ মিয়া তাকে পঞ্চায়েতের মুরব্বী না মানায় তাকে বাজারে হামলা করে আব্দুল আলী ও তার লোকজন। সাজিদের পক্ষে নিহত শিশুদের বাবা চাচারাও প্রতিবাদ করেন। এনিয়ে সংঘর্ষ হয়। এরপর থেকেই আব্দুল আলী নিহতদের অভিভাবকদের নানাভাবে হুমকী দিয়ে আসছিল। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বিরোধের মিমাংসা করে দেন বলে জানা গেছে।
এদিকে, বুধবার সন্ধ্যায় হত্যাকান্ডের ঘটনায় আব্দুল আলী ও জুয়েল নামে দুজনকে আটক করে পুলিশ।
হবগিঞ্জরে পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র জানান, গত মঙ্গলবার আব্দুর ওয়াহিদ বাহুবল খানায় নিখোজের ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করলে মামলাটি জেলা গোয়েন্দা বিভাগে দায়িত্ব দেয়া হয়। ওই মামলায় কাউকে আসামী করা হয়নি। তিনি ধারনা করছেন, শুক্রবারেই খুনীরা শিশুদেরকে হত্যা করে কোন এক সময় প্রায় দুই ফুট নিচে গর্তে ওই শিশুদের বালি চাপা দেয়া হয়। ঘটনারস্থল থেকে বড়দের পায়ের এক জোড়া চামড়ার স্যান্ডেল উদ্ধার করেছে পুলিশ।
স্থানীয় লোকজনের সাথে আলাপ করে জানা যায়, বুধবার সকাল ১০টার দিকে ওই গ্রামের এক ব্যাক্তি বালুর স্তুপের পাশ দিয়ে যাবার সময় পচা গন্ধ পান। তিনি বালুর স্তুপের কাছে একটু এগিয়ে দেখেন এক শিশুর ক্ষত বিক্ষত হাত বের হয়ে আছে। এ দৃশ্য দেখে তিনি গ্রামের লোকজনকে খবর দিলে হাজার হাজার নরনারী ঘটনাস্থলে পৌছেন। ইতোমধ্যে খবর পৌছে যায় বাহুবল থানায়। লাশ পাওয়ার খবর পেয়ে ছুটে যান হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র, র্যাব ৯ শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পের সদস্য, ডিবি পিআইবির সদস্যরা। সকাল সাড়ে ১১টায় বালু কুড়ে নিহত ৪ শিশুর লাশ উদ্ধার কাজ শুরু হয়। বেলা পৌনে একটায় লাশগুলো হবিগঞ্জ সদর আধুনিত হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
খবর পেয়ে ছুটে আসেন সিলেটের ডিআইজি মিজানুর রহমান ও হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক সাবিনা আলম। ডিআইজি মিজানুর রহমান খুনীদের সন্ধানদাতাকে এক লাখ পুরস্কার দেয়া হবে জানান সাংবাদিকদের। জেলা প্রশাসক নিহত প্রত্যেক শিশুর পরিবারকে ২০ হাজার টাকা দেয়া হবে বলে জানান।
ময়না তদন্ত শেষে ডা. দেবাশীষ জানান, প্রাথমিক ভাবে শিশুদেরকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। শিয়াল কুকুরের কামড়ে ২ শিশুর শরীরের বিভিন্ন অংশ ক্ষতের আলামত পাওয়া গেছে।
গত শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বাড়ির পাশের মাঠে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলো ৪ শিশু। বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার একটি বিল থেকে মাটিচাপা দেওয়া অবস্থায় এই ৪ শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় লোকজন মরদেহ দেখে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে মরদেহগুলো উদ্ধার করে।
নিহত চার শিশু হলো- বাহুবল উপজেলার সুন্দ্রাটিকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র জাকারিয়া শুভ (৮), প্রথম শ্রেণির ছাত্র মনির মিয়া (৭), চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র তাজেল মিয়া (১০) ও সুন্দ্রাটিকি মাদ্রাসার ছাত্র ইসমাইল মিয়া (১০)। এদের মধ্যে তিনজন সম্পর্কে আপন চাচাতো ভাই।