পঞ্চদশ সংশোধনী মৃত বাকশালের প্রেতাত্মা: খালেদা জিয়া
ডেস্ক রিপোর্টঃ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘পঞ্চদশ সংশোধনী হচ্ছে মৃত বাকশালের প্রেতাত্মা, যা বর্তমানে ভয়াল দুঃশাসনের আত্মপ্রকাশকে প্রণোদিত করেছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘পঞ্চদশ সংশোধনীতে প্রধানমন্ত্রীকে একচেটিয়া ক্ষমতা দিয়ে মূলত গণতন্ত্রকে সমাধিস্থ করে তার ওপর একক কর্তৃত্ববাদী নির্দয় শাসনের ইমারত নির্মাণ করা হয়েছে।’
রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে খালেদা জিয়া এ কথা বলেন। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে’ বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এ বাণী দিয়েছেন।
বাণীতে খালেদা জিয়া বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করার লক্ষ্যে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করে একদলীয় সরকারব্যবস্থা ‘বাকশাল’ কায়েম করে। এই ব্যবস্থা কায়েম করতে গিয়ে তারা জাতীয় সংসদে বিরোধী মতামতকে উপেক্ষা করে একপ্রকার গায়ের জোরেই অমানবিক মধ্যযুগীয় চতুর্থ সংশোধনী আইন পাস করে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী মানুষের বাক, ব্যক্তি, চলাচল ও সমাবেশের স্বাধীনতাসহ সকল মৌলিক অধিকার হরণ করে।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘সব সংবাদপত্র বাতিল করে তাদের অনুগত চারটি প্রকাশনা চালু রাখার ফরমান জারি করে। এর ফলে চিরায়ত গণতন্ত্রের প্রাণশক্তিকেই তারা সেদিন নিঃশেষ করে দেয়। দেশবাসীর দীর্ঘদিনের সংগ্রামের ফলে অর্জিত মানুষের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে তারা ভুলুণ্ঠিত করে সমাজে এক ভয়াবহ নৈরাজ্যের ঘন অমানিশা ছড়িয়ে দেয়।’
খালেদা জিয়া আরো বলেন, ‘এমনি এক দুঃসময়ে ৭৫’-এর ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার সম্মিলিত শ্রোতধারায় শহীদ জিয়া রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। স্বেচ্ছাচারিতার লৌহ কপাটের ভেতর থেকে তিনি গণতন্ত্রকে অর্গলমুক্ত করেন। পুনরায় শুরু হয় বহুদলীয় গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা। নিশ্চিত হয় মানুষের মৌলিক মানবিক অধিকার।’
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘এদের ঐতিহ্যই হচ্ছে গণতন্ত্র ও মানুষের মৌলিক অধিকার বিপন্ন করা। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে তাদের ভরাডুবির বিপদ টের পেয়ে তারা সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে।’ তিনি আরো বলেন, ‘কথা, চিন্তা, বিবেক, মতপ্রকাশ, সংগঠন ও সমাবেশের স্বাধীনতা তথা সামগ্রিকভাবে মানুষের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে এই সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় দুঃশাসন কায়েম করে। বহুত্ববাদিতা বিনষ্ট করে সামাজিক স্থিতি ও ভারসাম্য নষ্ট করা হয়েছে। তাই এখন সর্বত্রই ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর দখলবাজদের দখলের জয়জয়কার চলছে। অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের শান্তি, নিরাপত্তা, আশ্রয়, পেশা, ব্যবসা বাণিজ্য সবকিছু এখন নৈরাজ্যের করাল গ্রাসে নিপতিত। সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী আরেকটি কালো অধ্যায় এবং এই সংশোধনীর প্রণেতাগণ জনগণ, রাষ্ট্র ও গণতন্ত্রের শত্রুপক্ষ।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী স্বাক্ষরিত অন্য এক বাণীতে বলা হয়, ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ বর্তমানে ১৯৭৫ সালের সেই দুঃশাসনেরই পুনরাবৃত্তি করছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি সব সময় জনগণের মৌলিক অধিকার, বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ।’