গ্যাস সঙ্কটে উৎপাদনে যেতে পারছে না সিলেটের ১৪১ শিল্প কারখানা
ডেস্ক রিপোর্টঃ গ্যাস সংযোগের নিশ্চয়তা থাকায় সিলেটের দিকে ঝুঁকেছিলেন শিল্প উদ্যোক্তারা। এরফলে সিলেটে কত কয়েক বছরে গড়ে ওঠে বেশকিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান। তবে হঠাৎ করেই গত বছর থেকে শিল্পে গ্যাস সংযোগ প্রদান প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে জালালাবাদ গ্যাস। কোনো ঘোষণা ছাড়াই গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন শিল্প উদ্যোক্তারা।
জালালাবাদ গ্যাস জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড সূত্রে জানা যায়, বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের সংযোগের জন্য ১৪১ টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। দীর্ঘদিন ধরে এই আবেদন জমা পড়লেও সংযোগ প্রদান করা হচেছ না।
সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা যায়, তীব্র গ্যাস সংকট সামাল দিতে ২০০৯ সালের ১ অক্টোবর সারা দেশে শিল্প ও বাণিজ্যিক সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে সিলেট অঞ্চলে তখন পর্যন্ত চালু ছিলো গ্যাস সংযোগ। এরফলে সিলেটের দিকে ঝুঁকতে থাকে বড় বড় শিল্পগ্রুপ। বিশেষত হবিগঞ্জের বিবিয়ানা গ্যাস ক্ষেত্রের আশপাশের এলাকায় গত ৩/৪ বছরে গড়ে ওঠে শতাধিক শিল্প কারখানা। স্কয়ার, আকিজ, প্রাণ, আরএকেসহ দেশের শীর্ষ বেশকিছু শিল্প উদ্যোক্তা গ্রুপ সিলেট অঞ্চলে বিনিয়োগ করে।
সিলেট জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সফিউশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেডের কর্মকর্তারা জানান, প্রথম দিকে নতুন গড়ে ওঠা এসব শিল্প প্রতিষ্ঠান আবেদন করলে সিলেট থেকেই যাছাই বাছাই করে সংযোগ প্রদান করা হতো। ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে ২৬ টি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে গ্যাস সংযোগ প্রদান করা হয়।
তবে গত বছর থেকে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আচমকা বন্ধ করে দেওয়া হয় সংযোগ। ফলে বিপাকে পড়েছেন শিল্প উদ্যোক্তারা। কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললেও গ্যাস সংযোগের অভাবে তা চালু করতে পারছেন না।
সংশ্লিস্টরা জানান, গ্যাস সংকট দেখা দেওয়ার পর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিল্পে সংযোগ দিতে ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে সরকার। কমিটির আহ্বায়ক করা হয় ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীকে। এখন জালালাবাদ গ্যাসের কাছে কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান সংযোগের জন্য আবেদন করলে তা যাছাই বাছাইয়ের জন্য প্রেরণ করা হয় এই কমিটির কাছে। তবে এই কমিটি থেকে এখন পর্যন্ত কাউকে সংযোগ প্রদানের অনুমোদন দেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
জালালাবাদ গ্যাসের কন্ট্রাক্টর ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন সিদ্দিকী জানান, গত আগস্টে আমি একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য সংযোগের আবেদন জাতীয় কমিটির কাছে প্রেরণ করি। এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। সংযোগ দেওয়া হবে কী হবে না তাও জানি না।
গ্যাস সংযোগের অপেক্ষায় থাকা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা জানান, প্রায় এক বছর আগে চাহিদাপত্রের টাকা জমা দিয়ে অপেক্ষা করছেন তারা। কিন্তু নতুন সংযোগ প্রদান করা হচ্ছে না। অথচ গ্যাস সংযোগ পাওয়ার আশায়ই সিলেট অঞ্চলে বিনিয়োগ করেছিলেন তারা।
এ ব্যাপারে সিলেটের ভোগ্যপণ্য প্রস্ততকারী প্রতিষ্ঠান ফিজা’র ব্যবস্থাপনা পরিচলক নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, আমি প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেটের গোটাটিকর বিসিকে নতুন কারাখানা নির্মান করেছি। কিন্তু গ্যাস সংযোগের অভাবে তা চালু করতে পারছি না। আগে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে না জানালে তো এতো টাকা বিনিয়োগ করতাম না।
তিনি বলেন, কারখানা চালু করতে না পারায় এখন আমাকে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বাবুল বলেন, আমি তো ২৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। শতকোটি টাকা বিনিয়োগ কর্ওে অনেকে সিলেট অঞ্চলে শিল্প কারখানা গড়ে তুলেছেন। তারাও গ্যাস সংযোগের অভাবে বিপাকে পড়েছেন। সিলেটে গ্যাসের মজুদ থাকা সত্ত্বেও সংযোগ প্রদান না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
সিলেট গোটাটিকর বিসিক শিল্প নগরী কর্মকর্তা শেখ ফজলুল হক বলেন, গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় এই বিসিকের ৫ টি কারখানা উৎপাদন শুরু করতে পারছে না। উদ্যোক্তাদের দ্রুত উৎপাদন শুরুর জন্য তাগাদা দিলে তারা গ্যাস সংযোগ না পাওয়ার কথা জানান।
একইভাবে সিলেটের খাদিম বিসিক শিল্প নগরী কর্মকর্তা সৈয়দ বখতিয়ার উদ্দি আহমদ জানান, গ্যাস সংযোগের অভাবে তার বিসিকে ৩ টি প্রতিষ্ঠান উৎপাদন শুরু করতে পারছে না।
এ ব্যাপারে সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সালাউদ্দিন আলী আহমদ বণিক বার্তাকে বলেন, গ্যাস সংযোগে অভাবে শিল্প উদ্যোক্তারা বিপাকে পড়েছেন। অনেক বিনিয়োগ করেও উৎপাদন শুরু করতে পারছেন না।
জালালাবাদ গ্যাসের বিপনন শাখা থেকে জানা যায়, সংযোগের জন্য আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে, স্কয়ার ডেনিম, স্কয়ার ফ্যাশন, স্কয়ার টেক্সটাইল, এসএম স্পিনিং, পাইনিওর স্পিনিং, স্টার পেটেসেলিন, ফিজা, নাহিদ টেক্সটাইল প্রভৃতি।
এ ব্যাপারে জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সফিউশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজাউল ইসলাম খানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি দেশের বাইরে আছেন বলে জানানো হয়। অন্য কোনো কর্মকর্তা এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাননি।