কমলগঞ্জে বার গ্রামে বোরো আবাদ অনিশ্চিত ॥ মহালের বাঁশ স্থানান্তরে ছড়ার উৎস মুখে বাঁধ
বিশ্বজিৎ রায়, কমলগঞ্জ প্রতিনিধি: কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ইউনিয়নের কুরমা মহালের বাঁশ স্থানান্তরের সুবিধার্থে পাহাড়ি ডালুয়া ছড়ার উৎস মুখে বাঁধ দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ছড়ার পানি সরবরাহ। উজান থেকে পানি সরবরাহ না থাকায় ছড়া শুকিয়ে মৃত্যু মুখে পতিত হচ্ছে। অন্যদিকে সেচ সুবিধার অভাবে চলতি মৌসুমে ইসলামপুর ও আদমপুর ইউনিয়নের বারোটি গ্রামের কৃষকদের বোরো আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। শনিবার বিকালে সরেজমিন ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার সীমান্তবর্তী কুরমা মহালের মুলি বাঁশ কেটে নি¤œাঞ্চলে স্থানান্তরের সুবিধার্থে পাহাড়ি টিলার আন্ডু নামক একটি লেকে পানি জলাবদ্ধ রাখা হয়েছে। এই লেক থেকেই পাহাড়ি ডালুয়া ছড়ার উৎপত্তি হয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পানি ডালুয়া ছড়া দিয়ে ইসলামপুর ও আদমপুর ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ফি-বছর শুষ্ক মৌসুমে ছড়ার পানি দিয়ে এসব গ্রামের কৃষকরা সেচ সুবিধা নিয়ে বোরো ও সবজি আবাদ করেন। কুরমা মহালের বাঁশ শ্রীমঙ্গলের মহালদার কিবরিয়া ইজারা গ্রহন করে ইজারাকৃত বাঁশ স্থানান্তরের সুবিধার্তে ডালুয়া ছড়ার উৎস মুখে স্থায়ীভাবে বাঁধ দিয়ে ছড়ায় পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিকল্প হিসাবে ওই স্থানের পাহাড়ি টিলা কেটে ড্রেন তৈরি করে ইছা ছড়া নামক একটি ছোট নালা দিয়ে পানির সাথে বাঁশ ছাড়া হচ্ছে। ফলে পানি শুন্য পাহাড়ি ওই ডালুয়া ছড়াটি মৃত্যু মুখে পতিত হচ্ছে। এই ছড়া থেকে সেচ সুবিধা নিয়ে আদমপুর ও ইসলামপুর ইউনিয়নের মধ্যভাগ, খারগাঁও, উত্তরভাগ, নইনারপার, নোয়াগাঁও, দক্ষিণ কাঠালকান্দি, কালারায়ের বিল, ছয়ঘরি, পূর্বজালালপুর, আদকানি, বনগাও, জালালপুর গ্রামের কৃষকরা বোরো আবাদ করে থাকেন। কিন্তু ছড়ায় পানি না থাকার কারনে এ বছর তাদের বোরো আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ফলে বিপর্যস্ত হচ্ছে এখানকার কৃষি ও জলজ জীববৈচিত্র্য।
মধ্যভাগ গ্রামের কৃষক তাওহিদ মিয়া, হানিফ উল্লা, এলাইচ মিয়া, কাওছার মিয়া, আব্দুল মোতালিব, উত্তর ভাগ গ্রামের আবুল কালাম বলেন, ডালুয়া ছড়ার পানি ব্যবহার করে প্রতি বছর বোরো চাষাবাদ করি। সবজি ক্ষেতে এই ছড়া থেকে সেচ দেই। কিন্তু ছড়ার উৎস মুখে বাঁধ দেয়ার কারনে এখন ছড়ায় পানি পাওয়া যাচ্ছে না। তারা আরও বলেন, বোরো চাষাবাদের জন্য বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। এখন পানি না থাকায় জমি তৈরি করা যাচ্ছে না, চাষাবাদ সম্পূর্ণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
অভিযোগ বিষয়ে ইজারাদার মোঃ কিবরিয়ার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর কেয়ারটেকার মোস্তফা মিয়া বলেন, সহজে বাঁশ স্থানান্তরের জন্য ডালুয়াছড়ার উৎস মুখে বাঁধ দেয়া হয়েছে। বিকল্প স্থানে টিলা কেটে ড্রেন করে পানির সাথে বাঁশ ছাড়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বাঁশ ছাড়ার সময়েই পানি ছাড়া হয়। বাঁশ ছাড়া শেষ হলে আবার ড্রেন বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য কৃষি বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন।