কমলগঞ্জে সমন্বিত ফল-ফসলের বাগান করে সাবলম্বী হাফেজ মতিন
বিশ্বজিৎ রায়, কমলগঞ্জ প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের কোনাগাঁও গ্রামের হাফেজ মোঃ আব্দুল ওহাব(মতিন) লেখাপড়ার পাশাপাশি নিজ বাড়ীতে খামারবাড়ীর আদলে সমন্বিত ফলÑফসলের চাষ করে নিজেকে একজন আদর্শ কৃষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন্ । নিজ বাড়ীর অনাবাদী জমিতে শখ ও ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশীয় প্রজাতির ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছ রোপন ও সারা বছরই বিভিন্ন মৌসুমের শাক-সব্জী,ফলÑফসল চাষ করে প্রতিবছর লক্ষাধিক টাকা উপার্জন করছেন।এতে তিনি যেমন নিজের পরিবারকে আর্থিক সাবলম্বী করেছেন,পাশাপাশি তার কৃষিকাজে শ্রম দিয়ে এলাকার কয়েকটি দুঃস্থ পরিবারেরও কর্মসংস্থান হয়েছে। কমলগঞ্জ সফাত আলী মাদ্রাসায় বর্তমানে স্নাতক সমমানের ফাজিল ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত হাফেজ মোঃ আব্দুল ওহাব(মতিন) মূলতঃ ২০১৩ ইং সালে সিলেটে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে কৃষিতে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। তার বিশাল বাড়ীর অধিকাংশই খালি বা অনাবাদী পড়ে থাকতো। পিতা হাজী মোঃ নিয়ামত উল্ল্যাহ সামাজিক ও ধর্মীয় কাজে বেশী ব্যস্ত থাকায় এবং অন্যান্য ভাইয়েরা সরকারী চাকুরীতে থাকায় কৃষিকাজে তেমন মনোযোগী নয়। কিন্তু ইমাম প্রশিক্ষণের পর হাফেজ মতিন স্থানীয় আল-ফালাহ মসজিদে ইমামতির পাশাপাশি বাড়ীর অনাবাদী জমিতে চাষাবাদে মনোযোগী হন। তিনি স্বপ্ন দেখেন কৃষিপ্রধান এ দেশে একজন আদর্শ কৃষক হিসাবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখবেন। সবুজ বিপ্লবে এগিয়ে নিবেন সোনার বাংলাকে। তার সাফল্য দেখে এখন অন্যান্য এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবকরাও আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির কল্যানে এ সময়ের তরুণ শিক্ষার্থীরা যখন লেখাপড়ার পাশাপাশি ফেসবুক,টুইটার,ভাইবারে আক্রান্ত তখন কৃষিতে সম্পৃক্ত হয়ে নিজের প্রতি ইঞ্চি জমির সদ্বব্যবহার করে উদাহরণ গড়ে তুলেছেন শিক্ষিত তরুণ হাজী নিয়ামত উল্যাহ্ ও মেহেরুন নেছার তৃতীয় পুত্র হাফেজ মোঃ আব্দুল ওহাব(মতিন)।সরজমিন তার বাড়ীতে গিয়ে টমেটো,করলা,বরবটি,শসা,আলু,মরিচ,লাউ,লিচু,কলা ইত্যাদি ফল-ফসলের সমাহারের পাশাপাশি পুকুরে মাছ চাষ ও গবাদী পশু পালন দেখে মনে হলো প্রকৃতির সকল রূপ বৈচিত্রে যেন প্রত্যন্ত এ বাড়ী রূপসী বাংলার বিমুর্ত প্রতীক । জানা গেলো, প্রতিদিন ফজরের নামাজ পড়ে মাদ্রাসায় যাওয়ার আগে ও মাদ্রাসা থেকে ফিরে আবার খামারবাড়ীতেই সময় দেন তিনি।তাকে সহযোগীতার জন্য কয়েকজন শ্রমিকও আছেন। এতে লেখাপড়া বা মসজিদে ইমামতির কোন ব্যাঘাত ঘটে কিনা জানতে চাইলে হাফেজ মতিনের মন্তব্য, আন্তরিকতা,অধ্যাবসায় ও সততা থাকলে সকল সৎ কাজই সুসম্পন্ন করা সম্ভব।তিনি ভবিষ্যতে একজন ইমাম হিসাবে দেশের একজন আদর্শ খামারী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন,কমলগঞ্জের ফিল্ড সুপারভাইজার ইকবাল হোসেন চৌধুরীর সাথে কথা হলে তিনি জানান,ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে হাফেজ মতিন দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন।তার কাজ দেখে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হবেন। স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রবীন্দ্র ব্যানার্জী জানান, ভবিষ্যতে হাফেজ মতিনের খামারবাড়ী আরও সমৃদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । বর্তমানে এ বাড়ীতে একাশি, পরশ, বেলজিয়াম, আম, কাঠাল,কমলা,লিচু. আনারস, কলা, পেপে, লেবু, নারিকেল, নিম গাছ সহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে।
প্রতিভাবান হাফেজ মোঃ আব্দুল ওহাব(মতিন) জানান, কমলগঞ্জ উপজেলা একটি সম্ভাবনাময় এলাকা প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। এ মাটিতে সোনা ফলে। যদি উপযুক্ত সময়ে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া য়ায় তা হলে এ এলাকার বেকার যুবকদের ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।