সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বহীনতায় হুমকির মুখে ভাড়েরা বিল (ভিডিও)
হুমকির মুখে কৃষি জমির অস্থিত্ব : বাড়ছে পরিবেশ দূষণ
স্টাফ রিপোর্টারঃ সিলেট শহরের প্রবেশপথ দক্ষিণ সুরমার পারাইরচক লালমটিয়া এলাকায় অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী ভাড়েরা বিল। এক সময় ভাড়েরা বিলে ছিলো বিশাল জলরাশি আর মাছের অভয়ারণ্য। সেই সাথে বিলে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির মিলন মেলা বসতো। কয়েক’শ একর জমির উপর বিদ্যমান হাওড় ও ভাড়েরা বিলের অস্থিত্ব আজ নেই বললেই চলে। বিভিন্ন আবাসিক প্রকল্প নির্মাণ ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বহীনতার কারণে ভাড়েরা বিলটি অনেক আগেই হারিয়েছে তার জৌলস। সিটি কর্পোরেশনের ফেলে দেওয়া অপরিকল্পিত বর্জের ভাগাড়ের কারণে বিলের পরিবেশ নষ্ঠ হওয়ার পাশাপাশি এলাকার স্বাভাবিক পরিবেশের ভারসাম্য আজ হুমকির মুখে। সিটির বর্জের কারণে ভাড়েরা বিলের চারপাশের বিভিন্ন পাড়া মহল্লার কয়েক হাজার পরিবারের সদস্যরা প্রতিদিনই বিভিন্ন রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। রোগ ব্যাধির কারণ হিসেবে স্থানীয়রা জানান, সিটি কর্পোরেশনের ময়লা আবর্জনার দুৎগন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে আবাসিক এলাকার ভেতর। সিটি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও তাদের ফেলে দেওয়া বর্জের কারণে ভাড়েরা বিল সংলগ্ন গোটাটিকর, ছিঠাগোটাটিকর, গঙানগর, সামাল হাসান, হবিনন্দি,পাঠানপাড়া, আলমপুর, কুচাইসহ আশপাশ এলাকার মানুষ অতিষ্ট হয়ে পড়েছেন। বর্ষা মৌসুমে দুষিত বর্জগুলো পানির ¯্রােতে বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় ঢুকে তৈরি করে নোংরা ও সেঁতসেঁতে পরিবেশের। দুষিত বর্জের কারণে বিভিন্ন কৃষি জমির মাটির উর্বরতা নষ্ঠ হওয়ার পাশাপাশি চাষ অনুপযোগি হয়ে পড়ছে। আলমপুর এলাকার বাসিন্দা কামাল জানান, সিটি এলাকার বর্জ ফেলার কারণে ভাড়েরা বিল সংলগ্ন তার কৃষি জমিতে চাষ করতে পারছেন না, পলিথিন ব্যাগ,সিরিঞ্জ,প্লাষ্টিকসহ পরিবেশ দুষণকারী বর্জ জমিতে প্রবেশ করার ফলে কৃষি ক্ষেত নষ্ঠ হচ্ছে বলে জানান কামাল। অপরদিকে সামাল হাসান এলাকার বাসিন্দা জিলাল জানান,সিটি কর্পোরেশনের ফেলে দেওয়া বর্জের কারণে তার কৃষি জমি ব্যবহার অনুপযোগি হয়ে পড়েছে, শ্রমিকরা ক্ষেতে হালচাষ করতে গেলে দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়,বর্জের সাথে আসা বিষাক্ত সিরিঞ্জ পায়ের ভেতরে ঢুকে গেলে জখম হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়, কৃষি জমি রক্ষায় অচিরেই সিটির বর্জ ফেলার স্থানের চারপাশে দেয়াল নির্মাণ করার দাবী জানান তিনি। কুচাই এলাকার বাসিন্দা হুজাইফা আহমদ ভূট্রু অত্যান্ত ক্ষোভের সাথে বলেন,সিটি কর্পোরেশনের নোংরা ও পরিবেশ বিধ্বংসী এসব বর্জ্যরে কারণে এক দিকে যেমন পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে,অপরদিকে সাধারন বাসিন্দারা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন,সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বহীনতার কারণে এলাকার স্বাভাবিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে বলে জানান তিনি। হবিনন্দি এলাকার বাসিন্দা সানর মিয়া জানান,তিনি ক্ষেতের জমিতে চাষ করতে গিয়ে আহত হয়ে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, সিটি কর্পোরেশনের বর্জের সাথে আসা কাচ তার পায়ে লেগে কেটে গেলে তিনি আর ক্ষেতে হালচাষ করতে পারছেন না। আলমপুর এলাকার বাসিন্দা শামীম কবির জানান, সিটি কর্তৃপক্ষ বর্জ ফেলার স্থানটির একপাশে সড়কের সাথে দেয়াল নির্মাণ করলেও ভাড়েরা বিলসহ হাওড়মুখি এলাকায় নির্মাণ করা হয়নি কোনো দেয়াল। যার ফলে দুষিত বর্জ দ্রুত চলে যাচ্ছে হাওড়সহ ভাড়েরা বিলের গর্ভে। এলাকাবাসী বিল ও হাওড় থেকে বর্জ অপসারণ ও দেয়াল নির্মানের জন্য বার বার সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন করলেও সিটি কর্তৃপক্ষ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ আজ পর্যন্ত গ্রহন করছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি। এ ছাড়া অচিরেই এ ব্যাপারে এলাকাবাসী আন্দোলনে নামতে পারে বলে জানান তিনি। এ ব্যাপরে সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বে থাকা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামূল হাবীব বলেন, বর্জ খুব একটা অন্যত্র স্থানে যায়না। তারপর ও আমরা চেষ্ঠা করি বর্জগুলো এক জায়গায় ফেলার জন্য, দেয়াল নির্মাণ করা প্রসংঙ্গে তিনি বলেন,ময়লা আবর্জনা যেখানে ফেলা হয়,তার পেছনে সরকারী খাস জমি, কার ঘরে গিয়ে দেয়াল নির্মাণ করা হবে, আর বর্তমানে দেয়াল নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেই বলে জানান তিনি।