ক্ষতিপূরণ তহবিল আদায়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা
সুরমা টাইমস ডেস্ক: আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে প্যারিসে অনুষ্ঠিতব্য জলবায়ু সম্মেলনে ক্ষতিপূরণ হিসেবে তহবিল আদায়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো (এনজিও)।তাদের দাবি, যে প্রতিনিধি দল প্যারিসে যাচ্ছেন, তাতে দর কষাকষির জন্য উপযুক্ত লোক রাখা হয়নি। এতে নিঃশর্ত জলবায়ু তহবিল গঠনের যে দাবি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে করে আসছেন, সে দাবি সঠিকভাবে উপস্থাপনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রী যেন তার দাবিগুলোই প্রতিনিধিদলকে জোরালোভাবে উপস্থাপন করতে নির্দেশনা দেন।সোমবার (২৩ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের দ্বিতীয় তলায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন এনজিও এবং উন্নয়নকর্মীরা এসব কথা বলেন।উন্নয়ন সংস্থাগুলোর পরামর্শক জিয়াউল হক মুক্তা বলেন, আসছে প্যারিস সম্মেলন সাতটি বিষয় জোরালোভাবেই উপস্থাপন করতে হবে। এগুলো মধ্যে রয়েছে- শাস্তির ব্যবস্থাসহ আইনগত বাধ্যবাধতামূলক চুক্তি করা এবং আন্তর্জাতিক জলবায়ু ন্যায়বিচার আদালত গঠনের দাবি জানাতে হবে। এছাড়া চুক্তিতে ২০৫০ সাল পর্যন্ত প্রত্যেক দেশের কার্বন নির্গমনের প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপন ও নির্গমন হ্রাসের পরিকল্পনা থাকতে হবে, যেন বৈশ্বিক তাপমাত্রা কোনোভাবেই ১.৫ ডিগ্রি সেলিসিয়ালের ওপরে না যায়।কার্বন নির্গমনের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বাস্তুচ্যূতি ব্যবস্থাপনার বিষয়ে কপ-১৬ সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নেরও দাবি জানাতে হবে।জলবায়ু ফাণ্ড গঠনের ক্ষেত্রে ধনী দেশগুলো যেন দায় এড়াতে না পারে সে বিষয়েও বাংলাদেশকে প্যারিস সম্মেলনে জোরালো অবস্থান রাখতে হবে। আবার জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য প্রভাব মোকাবেলায় যে প্রযুক্তির প্রয়োজন সে সহয়তাও ধনী দেশগুলো থেকেই আদায়ের দাবি তুলতে হবে।স্থায়িত্বশীল গ্রামীণ উন্নয়নের জন্য প্রচারাভিযানের প্রধান শরমিন নিলোর্মি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ক্ষতিপূরণ নিঃশর্তভাবে সাহায্য হিসেবেই দিতে হবে, ঋণ বা অন্য কিছু হিসেবে নয়। এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারই দাবি। কিন্তু অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত সম্প্রতি বলেছেন, ঋণ হিসেবে হলেও ক্লাইমেট ফাণ্ড নেবো। তাই অধিকার আদায়ে বাংলাদেশের ভূমিকা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে।তিনি বলেন, ঋণ কেবল সেসব ক্ষেত্রে নেওয়া যেতে পারে, যেখানে অভিযোজনের জন্য অনেক বড় বড় প্রজেক্ট হাতে নিতে হবে। যার আকার হবে ৪-৫ বিলিয়ন ডলারের। আর ক্ষতিপূরণ যেটা পাবো সেটা সাহায্য হিসেবেই দেওয়ার দাবি প্যারিস সম্মেলনে তুলতে হবে।তিনি দাবি করেন, প্যারিস সম্মেলনে ইনফরমড ডেলিগেশন অর্থাৎ জলবায়ু পরিবর্তন জনিত আন্দোলন নিয়ে জানাশোনা অভিজ্ঞ প্রতিনিধিই সম্মেলনে পাঠাতে হবে। কেননা, সম্মেলনের প্রসিডিউর জানতেই চার-পাঁচদিন সময় চলে যায়। কাজেই এবার যাদের প্রতিনিধি হিসেবে পাঠানো হবে, তারা যেন প্রধানমন্ত্রীর দাবিকেই উপস্থাপন করেন, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। সাংবাদিক কামরুল হাসান বলেন, বর্তমানে যাদের ডেলিগেট হিসেবে রাখা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তাদের তেমন কোনো পরিচিতিই নেই। অনেকে তাদের চেনেই না। তাই ডেলিগেটরা যেন দেশের হয়ে ভূমিকা রাখতে পারেন প্রধানমন্ত্রীকে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর থেকে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ইউনাইটেড নেশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ এর ২১তম সম্মেলন বা কনফারেন্স অব পার্টিস-কপ অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে কপ এর ২০টি সম্মেলন অুনষ্ঠিত হয়েছে।সংবাদ সম্মেলনটি যৌথভাবে আয়োজন করে অ্যাক্ট অ্যালায়েন্স, বাংলাদেশ ইন্ডিজিনিয়াস পিপলস অন ক্লাইমেট জেঞ্জ অ্যান্ড বায়োডাইভারসিটি, বাংলাদেশ পরিবেশ সাংবাদিক ফোরাম, ইক্যুইটি অ্যান্ড জাস্টিজ ওয়ার্কিং গ্রুপ-বাংলাদেশ (ইক্যুইটিবিডি), ক্যাম্পেইন ফর সাসটেইনেবল রুরাল ডেভেলপমেন্ট, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম, কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট পার্টানারশিপ এবং ফোরাম অন অ্যানভায়রনমেন্ট জার্নালিস্ট।ইক্যুইটিবিডি’র সভাপতি রেজাউল করিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় সম্মেলনে বাপার সাধারণ সম্পাদক ড. আব্দুল মতিনও বক্তব্য রাখেন।