পাল্টে যেতে পারে সু চির হিসাব
সুরমা টাইমস ডেস্ক : মিয়ানমারে গত ২৫ বছরের মধ্যে রোববার প্রথমবারের মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কয়েক দশক ধরে সেনা শাসনের অধীনে থাকা দেশটিতে এ নির্বাচনকে ঘিরে ভোটারদের মধ্যে দেখা গেছে ব্যাপক উৎসাহ। মিয়ানমারের এবারের নির্বাচনে ৪৯৮ আসনের বিপরীতে ছয় হাজারেরও বেশি প্রার্থী এবং ৯১ টি রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে। তবে নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে সেনা সমর্থিত ক্ষমতাসীন ইউনিয়ন সলিডারিটি পার্টি ও এনএলডির মধ্যে। দেশটির তিন কোটি ভোটার নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নেবেন। তবে দেশটির অন্তত ৫ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিমকে দেশটির নাগরিকত্ব দেয়া হয়নি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যবেক্ষকরা বলছেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) জয়ে সম্ভাবনা বেশি। এছাড়া সু চিও তার দলের জয়ের ব্যাপারে বেশ আশাবাদী। তবে সু চির এ হিসেব পাল্টে যেতে পারে। কেননা দলটির প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের অন্তত ২০ শতাংশ নেতাকর্মী এখনো জীবিত রয়েছেন। তারা যথাযথ মূল্যায়ন না পাওয়ায় দল থেকে মুখ ফিরিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। তাদের অভিযোগ, দলের সংকটকালীন অনেক অভিজ্ঞ প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতন, হয়রানি ও কারাবরণ করলেও দল মূল্যায়ন করেনি। আর এ কারণেই এনএলডির প্রার্থীদের বিরুদ্ধে লড়তে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। ফলে নির্বাচনে এনএলডির প্রার্থীদেরকে সরকার দলীয় প্রার্থীদের বাইরে দলের সাবেক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেও লড়তে হচ্ছে। নির্বাচনী হিসেবের খাতায় এ বিষয়টিও ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। ইয়াংগুনে জন্ম এবং বেড়ে উঠেছেন ৫৭ বছর বয়সী ইউ মিয়ো খিন। ব্রিটেনের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য ইন্ডিপেনডেন্টকে খিন বলেন, ১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বরে অং সান সু চি তার সহকর্মীদের মিলে ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) গঠন করেন। প্রথম দিন থেকেই এনএলডির স্বেচ্ছাসেবক কর্মী হিসেবে কাজ করেছি। শুধুমাত্র এনএলডির সমর্থক হওয়ার কারণে ১২ বছর জেল খেটেছি। তবে নির্বাচনে এনএলডির সমর্থন চেয়েও না পাওয়ায় নিজ দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়তে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তিনি। মিয়ো খিন বলেন, আমার মতো অনেকেই শরীরের রক্ত, চোখের পানি দলের জন্য উৎসর্গ করেছেন। কিন্তু দল থেকে এসবের কোনো মূল্যায়ন করা হয়নি। নির্বাচনের আগে এনএলডির প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয়কে বিবেচনায় নেয়া হয়। অভিজ্ঞ, তরুণ, নারী ও বার্মিজ প্রার্থীদেরকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। খিন আরো বলেন, তার আসনের এনএলডির মনোনীত প্রার্থী বয়সে দশ বছরের ছোট। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে সম্পর্ক ভাল থাকায় তিনি মনোনয়ন পেয়েছেন। আর এ কারণেই গত ১ আগস্ট দল থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তিনি। এছাড়া সংখ্যালঘু নৃতাত্বিক গোষ্ঠী ও কোনো মুসলিম প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়নি এনএলডি। ইয়াংকিনের আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী ও এনএলডির সাবেক কর্মী দাউ নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, দেশের জনগণ প্রতিনিয়ত কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু সু চি তা অনুভব করতে পারছেন না। এছাড়া তিনি তৃণমূল মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ো নিয়ো থিন। গত আগস্টে খিনের মতো এনএলডির মনোনয়ন দৌড়ে নাম থাকলেও শেষ পর্যন্ত ছিটকে পড়েন। এখন তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। মিয়ো খিন বলেন, দলের মধ্যে এটি সাধারণ সমস্যা। সংকটকালীন সময়ে যারা দলের জন্য লড়াই করেছেন তারা বঞ্চিত হয়েছেন। সে সময়ের অন্তত ২০ ভাগ কর্মী এখনো বেঁচে আছেন এবং দলের জন্য কাজ করতে আগ্রহী। কিন্তু শক্তিশালী প্রার্থী হওয়ার পরও তাদেরকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। দীর্ঘদিন গৃহবন্দী থাকা সু চি বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী হিসেবে পরিচিত। সেনা শাসনের কবল থেকে দেশটিতে গণতন্ত্রের ধারা ফিরিযে আনতে লড়াই চালিয়ে করছেন তিনি। তবে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে তিনি গণতান্ত্রিক রীতি অনুসরণ করেননি বলে সাবেক কর্মীদের অভিযোগ রয়েছে। এদিকে, নির্বাচনের একদিন আগে শনিবার ইয়াংগুনে শতাধিক এনএলডির সমর্থক পদত্যাগ করেছেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শত শত ভোটার এনএলডি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। তারা বলছেন, দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়নের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ এবং নিবেদিতদের মূল্যায়ন করা হয়নি। ফলে ভোটের ফলাফলে জয়ের ব্যাপারে সু চির হিসেব-নিকেশে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে এসব সাবেক নেতাকর্মীরা।