অল্প দিনে আস্থা, অল্প দিনেই বিদায়
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ সেনা কর্মকর্তা থেকে কূটনীতিক। এরপর রাজনীতিক। রাজনীতিতে যোগ দেয়ার অল্প দিনের মধ্যেই তিনি দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হন দলের চেয়ারপারসনের। ফলে এক বছরের মাথায় সামনের সারির নেতা বনে যান সমশের মবিন চৌধুরী।
ক্ষমতাহারা বিএনপি যখন সেনা-সমর্থিত সরকারের চাপে কোণঠাসা, তখন দলে যোগ দেন এই সাবেক কূটনীতিক। ফলে বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বৃদ্ধির কাজে তার কাছে বড় প্রত্যাশা ছিল দলের। কয়েক বছর সে কাজটি করেছেনও। কিন্তু দলের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি তেমন। উপরন্তু সরকারের সঙ্গে সমঝোতার রাজনীতি করার গুঞ্জন আছে তার বিরুদ্ধে। সর্বশেষ শারীরিক অসুস্থতার অজুহাতে রাজনীতিকে বিদায় জানালেন বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান।
অবশ্য বেশ কিছুদিন ধরেই রাজনীতির মাঠ থেকে দূরে ছিলেন এই সাবেক কূটনীতিক। তবে হঠাৎ করে তার রাজনীতি ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা অনেকটা বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। বুধবার তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে দলের চেয়ারপারসন বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন।
পরদিন বৃহস্পতিবার সমশের মবিন তার বনানীর পুরনো ডিওইচএসের বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেন দল থেকে পদত্যাগ নিয়ে। সেখানে তিনি জানান, কোনো চাপ বা দলের প্রতি অভিমান থেকে নয়, অসুস্থতার কারণেই রাজনীতিকে বিদায় জানালেন। বললেন, “অন্য কোনো দলে যোগ দেয়ার ই্চ্ছা নেই।লেখালেখি করেই এখন অবসর কাটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
বীর বিক্রম খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধা সমশের মবিন চৌধুরী বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকাকালে সেনাবাহিনী থেকে জনপ্রশাসনে আসেন কূটনীতিক হিসেবে। ২০০১ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালে পররাষ্ট্রসচিব এবং যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনের পর ২০০৭ সালে অবসরে যান তিনি।
পরে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালে রাজনীতিকদের জন্য কঠিন সময়ে বিএনপির সঙ্গে যুক্ত হন সমশের মবিন। কাজ করেন খালেদা জিয়ার পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে। পরে ২০০৯ সালের কাউন্সিলে হন দলের ভাইস চেয়ারম্যান।
তবে খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে সমশের মবিনের এত বড় পদ পাওয়া নিয়ে দলের মধ্যে নানা কথাবার্তা শোনা যেত। তবে জিয়াউর রহমানের অধীনে সেনাবাহিনীতে চাকরি করার সুবাদে জিয়া পরিবারের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল।
কিন্তু এই ‘ঘনিষ্ঠ’ মানুষটি এমন এক সময় রাজনীতি তথা বিএনপি থেকে বিদায় নিলেন, যখন বিএনপি সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে; নানামুখী চাপে সংকটকাল পার করছে। তাই প্রশ্ন উঠছে, দলের এই নাজুক অবস্থায় নিজেকে গুটিয়ে নেয়া কিংবা সরকারের পক্ষ থেকে চাপের কারণে দল ছেড়েছেন কি না।
আর একটি বিষয় বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, দলের চেয়ারপারসন যখন চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে অবস্থান করছেন, তখনই কেন তাকে পদত্যাগ করতে হবে। চেয়ারপারসন দেশে ফেরার পরও তিনি পদত্যাগ করতে পারতেন।
বিএনপি থেকে পদত্যাগের কারণ হিসেবে অসুস্থতার কথা বললেও এর পেছনে নানা গুঞ্জনের কথা শোনা যাচ্ছে। দলের ভেতরে তাকে নিয়ে টানাপোড়েন যেমন ছিল,তেমনি ছিল সরকারের সঙ্গে ‘যোগাযোগ রক্ষারৎ সন্দেহও।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে আন্দোলন চলাকালে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে তার ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর থেকেই মূলত সমস্যার শুরু। বিএনপির অনেকের সন্দেহ, সমশের মবিনই অডিও রেকর্ড করে তা ফাঁস করেছেন। ফোনালাপে তারেক তাকে ভর্ৎসনাও করেন।
এ ছাড়া ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর নির্দেশনা ছিল তার ওপর। সেখানে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। এমনকি ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠক না হওয়ার পেছনেও তাকে দায়ী করছেন কেউ কেউ।
এখানেই শেষ নয়। এ বছরের শুরুর দিকে আন্দোলন শুরুর পর বিএনপির শীর্ষ অনেক নেতার সঙ্গে গ্রেপ্তার হন শমসের মবিন। ৮ জানুয়ারি নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেফ্তার করা হয়। এরপরই গুঞ্জন ওঠে তিনি আঁতাত করে গ্রেপ্তার বরণ করেছেন। তার মুক্তি নিয়েও আছে একই গুঞ্জন।
২২ মে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে তাকে আর কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। কূটনীতিকদের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধিদলের অনেক বৈঠকেও তাকে আমন্ত্রণ জানানো বা রাখা হয়নি। এমনকি বারবার চেষ্টা করেও খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পাননি সমশের মবিন।
গত রমজানে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের ইফতারে তিনি রাজনীতিবিদদের জন্য নির্ধারিত আসনে না বসে অন্য আসনে বসেন বলে জানা গেছে।
বিএনপির একটি সূত্রের খবর বলছে, দীর্ঘদিন ধরে কূটনৈতিক বিষয়গুলো দেখভাল করলেও প্রতিবছরের মতো গত ২৪ জুনের বিএনপির ইফতারেও তাকে দাওয়াত দেয়া হয়নি। চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে একজন প্রভাবশালী কর্মকর্তা এমনটা করেছেন বলে শোনা যায়। বিএনপির চেয়ারপারসনের একজন কর্মকর্তাও বিষয়টি স্বীকার করেছেন।(Dhaka Times 24)