কমলগঞ্জে বনবেগুনের সাথে টমেটোর চারার গ্রাফটিং করে অনেকেই স্বাবলম্বী
বিশ্বজিৎ রায়, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) থেকে : কৃষি অধ্যুষিত কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর ও আদমপুর ইউনিয়নের তিলকপুর, জামিরকোনা ও ঘোড়ামারা গ্রামের প্রায় দেড় শতাধিক পরিবার বন বেগুন গাছের চারার সাথে টমেটোর গ্রাফটিং চারা উৎপাদন করে পলী দারিদ্র্য বিমোচনে অবদান রাখছেন, হচ্ছেন স্বাবলম্বী। টমেটোর চারার গ্রাফটিং এর সাথে কেউ কেউ লাউ গাছের চারার সাথে তরমুজের চারার গ্রাফটিং করে ক্ষেতে লাগাচ্ছেন। গ্রাফটিং পদ্ধতি অবলম্বন করে চারা উৎপাদন, বিক্রির মাধ্যমে কৃষকরা তাদের নিজ বাড়ীতে বসেই যেমন আয় করছেন লাখ লাখ টাকা তেমনি অমৌসুমে টমেটো উৎপাদনেও রেখে চলেছেন অগ্রণী ভূমিকা।
জানা যায়, শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদকৃত টমেটোর চারা বর্ষা মৌসুমেও বেডিং পদ্ধতিতে চারা উৎপাদনের পর ক্ষেতে লাগানো হয়। উভয় মৌসুমে চাষযোগ্য হওয়ায় ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে চারা উৎপাদনের এই প্রক্রিয়াটি । এমনকি এ পদ্ধতিতে ধানখেতের মধ্যে অতিরিক্ত ফসল হিসেবেও উৎপাদন করে আয় করছেন লাখ লাখ টাকা। কৃষকরা জানিয়েছেন, এ পদ্ধতিতে আবাদ করে তারা এখন স্বাবলম্বী। এ পদ্ধতিতে ৬০ দিনের বনবেগুন গাছের চারা সংগ্রহ করে ৩০ দিন বয়সি টমেটো বারী-৪-এর চারার সঙ্গে গ্রাফটিং করে ৭ থেকে ১০ দিন রেখে বাঁচানোর পর খেতে লাগানো হয়। উপরে ও নিচে কালো পলিথিন দিয়ে শেড তৈরি করে প্রথমে চারা উৎপাদন এবং যেখানে চাষাবাদ হয় সেখানেও পলিথিনের শেড তৈরি করে টমেটো চাষাবাদ করতে হয়। এই সময়ে গোবর, সার, কীটনাশক ও পরিচর্চাসহ বাড়তি পরিশ্রম করতে হয়। দিনে মাথাপিছু চার থেকে সাড়ে চার শ চারার গ্রাফটিং করা সম্ভব। গ্রাফটিং পর্যন্ত দুটি চারার খরচ আসে ৪ থেকে ৫ টাকা। এরপর ১০ থেকে ১৫ টাকা হারে প্রতি চারা বিক্রি করা সম্ভব। কৃষক ব্রজেন্দ্র কুমার সিংহ প্রথমে তরমুজের চাষাবাদ ও গ্রাফটিং করতেন। পরবর্তী সময়ে টমেটোর গ্রাফটিং করে লাভবান হন। এক মাসে তিন হাজার চারার মূল্য বাবদ ৩০ হাজার টাকা আয় করেছেন। কমলগঞ্জ উপজেলা উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুন নবী বলেন, কমলগঞ্জের এই টমেটোর চারার গ্রাফটিং আবাদ বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম। এখান থেকে বিভিন্ন স্থানের চাষিরা চারা সংগ্রহ করে চাষাবাদ করছেন এবং উচ্চ মূল্যে বাজারজাত করছেন।
তিলকপুর গ্রামের কৃষক ব্রজেন্দ্র কুমার সিংহ জানান, বনবেগুন গাছের সঙ্গে টমেটোর চারার গ্রাফটিং পদ্ধতি নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর প্রকাশের পর এই পদ্ধতি নিয়ে আগ্রহ জন্মে তার । তিনি কৃষিকথা বই থেকে টমেটোর গ্রাফটিং পদ্ধতি জেনে ১৯৯০ সাল থেকে এই পদ্ধতি শুরু করেন। ১৯৯০ সাল থেকে পরীক্ষামূলক তিনি এ পদ্ধতিতে আবাদ করে সফল হন। এরপর তার দেখাদেখি ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ে এ পদ্ধতির আবাদ।
তিনি জানান, ৬০ দিনের বন বেগুন গাছের চারা সংগ্রহ করে বারি-৪ টমেটো ৩০ দিনের চারার সাথে গ্রাফটিং করে ৭ থেকে ১০ দিন রেখে বাঁচানোর পর ক্ষেতে লাগানো হয়। উপরে ও নীচে কালো পলিথিন দিয়ে শেড তৈরি করে চারা উৎপাদনের পরপর তা বাজারজাত করা হয়। দিনে মাথাপিছু চার থেকে সাড়ে চারশ’ চারার গ্রাফটিং করা সম্ভব। গ্রাফটিং পর্যন্ত দুটি চারার খরচ আসে ৪ থেকে ৫ টাকা। এরপর ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে প্রতি চারা বিক্রি করা হয়। ব্রজেন্দ্র কুমার সিংহ বলেন, তিনি প্রথমে তরমুজের চাষাবাদ ও গ্রাফটিং করতেন। পরবর্তীতে টমেটোর গ্রাফটিং করে লাভবান হওয়ায় গত এক মাসে তিন হাজার চারার মূল্য বাবদ ৩০ হাজার টাকা আয় করেছেন এবং আরও প্রায় ১০ হাজার চারা বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন। তার মতে, শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে টমেটোর গ্রাফটিংকৃত চারা বিক্রি করে লক্ষাধিক টাকা আয় করা সম্ভব ।