বিদেশি খুন করে দেশের ভাবমূর্তি নষ্টের ষড়যন্ত্রে খালেদা
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ বাংলাদেশে অবস্থানকারী বিদেশি নাগরিকদের হত্যা করে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অভিযুক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসকে বরদাশত করা হবে না বলেও অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন তিনি।
তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের কোন স্থান নেই এবং আমরা চাই না, কেউ এ ধরনের অপরাধ করুক। বরং আমরা চাই প্রত্যেকেই একটি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ জীবন-যাপন করুক এবং আমরা দেশটিকে এই পথেই গড়ে তুলতে চাই।
শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া যখন দেশে ছিলেন তখন আগুনে পুড়িয়ে দেড় শতাধিক লোককে হত্যা করেছেন। তাদের এই নৃশংসতা থেকে বাসচালক, হেলপার, কলেজ ছাত্রী এবং শিশুদের কেউ রেহাই পায়নি। বিএনপি নেতা এখন বিদেশে বসে বাংলাদেশে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকদের হত্যা করে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার ষড়যন্ত্র করছেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে এখানে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক বিশাল জনসমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিনুল ইসলাম মঞ্জু মণ্ডলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন— আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, লেখক সৈয়দ শামসুল হক ও কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাফর আলী প্রমুখ।
২০০৩ সালে ও চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বিএনপি-জামায়াত জোটের নৃশংসতা এবং সংঘর্ষের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা হচ্ছে জন্তু, তারা মানুষ নয়। তারা সরকার বিরোধী আন্দোলনের নামে বহু লোককে পুড়িয়ে মেরেছে এবং দুই থেকে আড়াই হাজার বাস, প্রাইভেটকার ও অন্যান্য যানবাহনে আগুন দিয়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত দেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে। এই অশুভ শক্তিই দেশে এই ধরনের অপরাধ করে যাচ্ছে। কেউ তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না।
শেখ হাসিনা লেখাপড়ায় মনযোগী হতে এবং মাদকাসক্ত হওয়া থেকে নিজেদের বিরত রাখতে তরুণদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আমরা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তরুণদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। তাদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। আমরা তাদেরকে আর মাদকাসক্তির শিকার হওয়ার সুযোগ দেব না।
প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার সরকারের সাফল্যের উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বে একটি রোল মডেল। কিন্তু কিছু লোক এটি পছন্দ করছে না। তারা দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছে।
প্রধানমন্ত্রী ভারতের সঙ্গে ছিটমহল সমস্যার সমাধানের উল্লেখ করে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারই দীর্ঘদিনের এ সমস্যার সমাধান করেছে। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু এই সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তার হত্যাকাণ্ডের পর জিয়া, এরশাদ এবং খালেদা জিয়া কেউই এ বিষয়টি সমাধানের জন্য কোন পদক্ষেপ নেয়নি।’
তিনি বলেন, ঐতিহাসিক স্থল সীমানা চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ছিটমহলবাসীদের বঞ্চনার অবসান ঘটেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, অতীতের ছিটমহলগুলো এখন আর ছিটমহল নয় এবং এগুলো বাংলাদেশের অংশ। তিনি বলেন, ‘তারা এখন বাংলাদেশের নাগরিক এবং তাদের পাশে যারা থাকবেন তাদেরকে তাদের আপনজন হিসাবে বিবেচনা করতে হবে।’
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সাবেক ছিটমহল বাসিন্দাদের কল্যাণে তার সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।
এর আগে সকাল ১১টা ১০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুড়িগ্রাম, নীলফামারি ও পঞ্চগড় জেলার পাঁচটি উপজেলার (ফুলবাড়ি, দেবীগঞ্জ, বোদা, পঞ্চগড় ও ডিমলা) ২৫৬১টি পরিবারের মাঝে বিদ্যুৎ সংযোগ উদ্বোধন করেন। এরপর পাঁচটি পরিবারের মাঝে সোলার হোপ সিস্টেম বিতরণ করা হয়।
পরে তিনি ছিটবাসীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘ছিটবাসীদের জীবনমান উন্নয়নে সরকারের সকল বিভাগকে একযোগে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে তারা কাজ শুরু করেছেন।’
এ ছাড়াও মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য ও বিরোধী দলের চিপ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানী বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী, কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন, ছিটবাসীর পক্ষে হৈমন্তী শুকলা প্রমুখ।