ইভটিজিংয়ে বাঁধা দেয়ায় শিবগঞ্জে ব্যবসায়ীর উপর হামলা
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ ইভটিজিং এবং অশ্লীলতায় বাঁধা দেয়ায় ক্ষিপ্ত বখাটেদের সন্ত্রাসী হামলায় মারাত্মক আহত হয়েছেন নিরীহ এক টেইলার্স ব্যবসায়ী। গত সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় নগরির শিবগঞ্জ সাদীপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। হামলার সময় বখাটেরা ভাংচুর করে টেইলার্সের ৩০ হাজার টাকার ক্ষতি সাধন করে । এ সময় ওরা নগদ টাকা এবং কাপড়-চোপড়সহ প্রায় ৩৫ হাজার টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। ঘটনার পর পরই স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)’র শাহপরাণ (রহঃ) থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নং-৬ পুলিশ ঘটনা তদন্ত করে এফআইআর করেছে। তবে ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি।
মামলা সুত্রে জানা গেছে, ইদানিং বেশ কিছুদিন থেকে নগরির শিবগঞ্জস্থ সৈয়দ হাতিম আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা যাওয়া আসার পথে কিছুসংখ্যক চিহ্নিত বখাটে তাদেরকে উত্যক্ত করতো। এ নিয়ে অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছিল। সম্প্রতি এ ধরণের অব্যাহত বেপরোয়া বখাটেপনা বন্ধের লক্ষ্যে এলাকাবাসী, বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি, পুলিশ প্রশাসন এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে স্থানীয় ব্যবসায়ীদেরকে বিষয়টি নজরদারি এবং ছাত্রীদেরকে উত্যক্ত করতে দেখলে বখাটেদের বারণ করার জন্য পুলিশ প্রশাসন এবং এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার দিন স্কুল ছুটির পর সাদীপুর এলাকার দিকে যাওয়ার পথে কিছুসংখ্যক ছাত্রীকে চিহ্নিত কয়েকজন বখাটে উত্ত্যক্ত করতে দেখে সাদীপুর গলির মুখে অঙ্গরূপ টেইলার্সের মালিক স্থানীয় মৃত আব্দুল মতিন বাবু মিয়ার পুত্র আব্দুল্লাহ আল জুমন (৩১) তাদের বাঁধা দেন। বাঁধার মুখে সন্ত্রাসীরা হুমকী-ধমকি দিয়ে তাৎক্ষণিক চলে যায়। ওইদিন রাত প্রায় সাড়ে ৯টার দিকে শিবগঞ্জ সোনারপাড়া নিবাসী জনৈক মতছির (২২) এবং শিবগঞ্জ লাকড়িপাড়া নিবাসী পারু মিয়ার ছেলে তাছনিম (২১)-এর নেতৃত্বে অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জন মুখোশধারী বখাটে লোহার রড, পাইপ ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্র নিয়ে টেইলার্সে ঢুকে জুমনের উপর হামলা চালায়।
বখাটেরা জুমনকে প্রচন্ড মারপিট করে ডান হাত ভেঙ্গে দেয়। হামলাকারীরা টেইলার্সের থাই গ্লাস, দরোজা-জানালা, শো-কেস ইত্যাদি ভাঙচুর করে ৩০ হাজার টাকার ক্ষতি সাধন করে। যাওয়ার সময় টেইলার্সের ক্যাশ থেকে নগদ ১৫ হাজার টাকা এবং শো-কেসে থাকা ২০ হাজার টাকা মূল্যমানের নতুন কাপড়-চোপড় লুট করে নিয়ে যায়। আহত জুমনের আর্ত-চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এলে হামলাকারিরা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন জুমনকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালের ৩য় তলার ৯নং ওয়ার্ডে ৩/৪দিন চিকিৎসা গ্রহণ শেষে বর্তমানে বাসায় অবস্থান করছেন।
ঘটনার খবর পেয়ে ২০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সৈয়দ হাতিম আলী উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির কমকর্তা এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা বখাটেদের হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। পরে আহত জুমনের সহোদর আব্দুর রাজ্জাক রাজু বাদী হয়ে এসএমপির শাহপরাণ (রহঃ) থানায় মতছির ও তাছনিমসহ অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জনকে বিবাদী করে মামলা দায়ের করেন।
এদিকে, সৈয়দ হাতিম আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের সাথে বিদ্যালয়ে আসা যাওয়ার পথে কিছুসংখ্যক চিহ্নিত বখাটের উত্যক্ত বন্ধ এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ওয়ার্ড কাউন্সিলর, স্থানীয় এলাকাবাসী, ম্যানেজিং কমিটির পক্ষ থেকে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার বরাবরে গত ১০ অক্টোবর শনিবার একটি স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। স্মারকলিপিতে এলাকাবাসীর পক্ষে প্রায় ১শ’ ব্যক্তি স্বাক্ষর করেছেন। স্মারকলিপির অনুলিপি র্যাব-৯-এর কমান্ডিং অফিসার, এসএমপি’র ডিসি (দক্ষিণ) এবং শাহপরাণ (রহঃ) থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবরেও দেয়া হয়েছে।