সাইনবোর্ড সর্বস্ব জাতীয় বাঁশ উদ্যান : হরিলোটে ব্যাস্ত কর্মরতরা
ফখরুল ইসলাম : সিলেটে জাতীয় বাঁশ উদ্যান এ বাঁশ নেই, শুধুমাত্র সাইনবোর্ডটি দেশের প্রথম জাতীয় বাঁশ উদ্যানের স্বাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে রয়েছে। কর্মরতদের অবহেলা ও দায়ীত্বশীলতার অভাবে বাঁশ উদ্যানটি এখন প্রায় বিলুপ্ত হয়েগেছে। সুত্র জানায়,কর্মরতরা ইকো-ট্যুরিজম উন্নয়ন’ প্রকল্পের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্বসাথের ফলে বর্তমানে বাশঁ বিহীন হয়ে পড়েছে এ উদ্যানটি। বন বিভাগ সুত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ৬ জুন ২৩টি প্রজাতির প্রায় ৭০০টি বাশের চারা রোপনের মাধ্যমে দেশের প্রথম জাতীয় বাঁশ উদ্যানের যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু বর্তমানে বাঁশ তো দূরের কথা যেন বাঁশের গন্ধও পাওয়া যাচ্ছেনা। স্বরজমিন ঘুরে দেখা যায় ,মরি মরি করছে প্রায় ১৫/২০টি বাঁশের চারা। আর চার দিকে চোখ মেলে তাকালেই মনে যেন ভূতের বাড়ি। গাছ-পালা আছে ঠিকই নেই যতœ। সৌন্দয্য মন্ডিত নানান স্থাপনাসহ সব কিছুই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এ হচ্ছে জাতীয় বাঁশ উদ্যান। জাতীয় করণ করার আগেই বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদেও অযতœ অবহেলায় এবং রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে প্রায় ধ্বংস হয়েগেছে এ বাঁশ উদ্যানটি।
‘জীব-বৈচিত্র সংরক্ষণ ও ইকো-ট্যুরিজম উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় সিলেটের বিমানবন্দর এলাকায় ফরেস্ট্রী সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের (এফএসটিআই) চত্বরে টিলা ভূমিতে গড়ে তোলা হয় এ উদ্যানটি। সূত্র জানায়, বৃষ্টিপ্রবণ অঞ্চল হওয়ায় পরিবেশগত কারণে বাংলাদেশের মধ্যে সিলেটে একসময় বাঁশের উৎপাদন বেশি হতো। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অতিপ্রয়োজনীয় এ বাঁশ উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে আশঙ্কাজনক হারে।
পরিবেশগত কারণে সিলেট বাঁশ চাষের জন্য খুবই উপযোগী। সিলেটে যত প্রজাতির বাঁশ রয়েছে, তা দেশের অন্য কোথাও নেই। তাই সিলেটে গড়ে তোলা হয় বাঁশ উদ্যান। ভবিষতে জাতীয় বাঁশ উদ্যান করার আশায় বাঁশের উৎপাদন বাড়ানো, বিলুপ্ত প্রায় বাঁশের প্রজাতি সংরক্ষণ ও সিলেটে আসা পর্যটকদের আকর্ষণ করতেই গড়ে তোলা হয় জাতীয় বাঁশ উদ্যান (প্রস্তাবিত)। এছাড়া এ উদ্যানটি একসময় উদ্ভিদ ও জীববিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের গবেষণাকাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করে ছিল বন বিভাগীয় উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ।
সূত্র আরো জানায়, অযতœ-অবহেলায় দুই বছরেই অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে উদ্যানটি। সরেজমিনে দেখা যায়, সিলেট বিমানবন্দর সড়কের পাশে পর্যটন মোটেলের বিপরীতে ৩০ একর জায়গায় বন বিভাগের ফরেস্ট্রী সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট। সুবিশাল এ ইনস্টিটিউটের পরিত্যক্ত দুটি টিলা ও সমতল ভূমির ১.৪১৭ হেক্টর জমি নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে বাঁশ উদ্যান। প্রবেশ পথের প্রধান ফটকে জাতীয় বাঁশ উদ্যানের নাম সংবলিত সাইনবোর্ডে বাঁশের জাত, নাম ও উদ্যানের তথ্যাদি উপস্থাপন করা হয়েছে। সাইনবোর্ডের মধ্যে ২৩ প্রজাতি বাঁশের নামও রয়েছে। কিন্তু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বন কর্মকর্তা জানান, ‘জীব-বৈচিত্র সংরক্ষণ ও ইকো-ট্যুরিজম উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় ২ লক্ষ টাকা ব্যায় করার কথা থাকলেও এবং সাইনবোর্ডে ২৩ প্রজাতির বাশেঁর চারার কথা লেখা থাকলে মূলত এখানে ৭০হাজার ৪শ ৭৬ টাকা ব্যয়ে ২০টি প্রজাতির চারা লাগানো হয়েছিল। বাকি টাকাগুলো বিভাগীয় বন সংরক্ষক দেলওয়ার হুসেন সহ কর্মরতরা আত্বস্বাত করেন।
সাইনবোর্ড দেখে প্রতিদিন পর্যটকরা সেখানে যাচ্ছেন। কিন্তু ভেতরে প্রবেশের পর হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হচ্ছে তাদের। উদ্যানের প্রায় সব বাঁশের চারাই মরে গেছে। ৭০০ চারার মধ্যে এখন ২০টিও টিকে নেই। কলসি, পেঁচা, রুপাহি, টেঙ্গা, জাই, মূলী, থাই বরুয়া, কাঁটা বরুয়া, পলি মরকা, কঞ্চি, বুদুম, কালী, সোনালি, ডলু, মাকাল, মৃতিঙ্গা, তেঁতুয়া, ওঙা, বেতুয়া, পরুয়া, বরুয়া, বোতম, রঙ্গন, পারুয়া মোট ২৩ প্রজাতির মধ্যে একটি প্রজাতির বাঁশও এখন নেই উদ্যানে। এ অবস্থার জন্য বন বিভাগের কিছু কর্মকর্তার উদাসীনতাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন এর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করতে চাইলে তা সম্ভব হয় নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, ইতোমধ্যে সরকারী সম্পদ আত্মসাত করে বাড়ি গাড়ি ও স্থাপনা নির্মানের অভিযোগে সিলেট দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক) তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্র দাখিল করায় তিনি বর্তমানে পলাতক রয়েছেন।