সিলেটে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে ১৪শ’ কোটি টাকার প্রকল্প
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ সিলেটে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রায় ১৪শ’ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। গত ২৫ আগস্ট ১৩৯০ কোটি টাকার এই প্রকল্পটি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড থেকে বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে।
সংশ্লিস্টরা জানিয়েছেন, এই প্রকল্প অনুযায়ী কাজ হলে সিলেটে বিদ্যুতের কোনো সমস্যা থাকবে না।
সিলেট বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে বিদ্যুতের কোনো ঘাটতি নেই। উপরুন্তু সিলেটে চাহিদার চেয়ে অধিক বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। তবে গ্রাহকদের অভিযোগ, প্রতিদিনই একাধিকবার লোডশেডিংয়ের যন্ত্রতা পোহাতে হয় তাদের। ঝড়-বৃষ্টি হলে এই যন্ত্রনা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিস্টদের মতে, সিলেটে বর্তমনে প্রতিদিন বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ১২২০ মেঘাওয়াট। অপরদিকে সিলট বিভাগে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে প্রতিদিন ৩৭০ মেঘাওয়াট। ফলে সঙ্কট নয়, বিতরণ ব্যবস্থার ত্রুটি, পুরনো ও জীর্ণ সঞ্চালন লাইন এবং পুরনো ট্রান্সমিটার ঘনঘন বিকল হয়ে পড়ায় বিদ্যুৎহীনতার দূর্ভোগে পড়তে হয় সিলেটবাসীকে। এই সঙ্কট সমাধানে ‘বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প, সিলেট বিভাগ’ নামে তিন বছর মেয়াদী ১৩৯০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। সিলেট অঞ্চলে নিরবিচ্ছিন্ন ও মানসম্পন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহই এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।
জানা যায়, সিলেটে বিদ্যুৎ যন্ত্রনায় অতীষ্ট হয়ে ২০১১ সালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষ সিলেটের বিদ্যুৎ সমস্যার কারণগুলো চিহ্নিত করার নির্দেশ দেন। এই নির্দেশনা অনুযায়ী সিলেটে ঘনঘন বিভ্রাটের পেছনে ১০ টি সমস্যা চিহ্নিত করে অর্থমন্ত্রী বরাবরে ৬ টি সুপারিশ করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করা ১০ টি সমস্যার মধ্যে ছিলো- পুরাতন ও জরাজীর্ণ বিতরণ (সঞ্চালন) লাইন, কিছু সংখ্যক সঞ্চালন ট্রান্সফর্মার ওভারলোড, সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্ধিত এলাকায় নতুন সঞ্চালন লাইন স্থাপন না করা, ১১ কেভি লাইনে স্থাপিত সঞ্চালন ট্রান্সফর্মার চুরি, অতি পুরাতন/মেরামতকৃত ট্রান্সফর্মার বিকল, সিলেট নগরীর জন্য বিকল্প গ্রিড উপকেন্দ্র না থাকা, নগরীর উপশহর এলাকায় ৩৩ ও ১১ কেভি উপকেন্দ্র ওভারলোড থাকা, ৩৩ কেভি ও ১১ কেভি সঞ্চালন লাইন ওভারলোড থাকা, উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৩৩ ও ১১ কেভি দুটি উপকেন্দ্র নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ সম্ভব না হওয়া এবং নগরীর আম্বরখানার আঞ্চলিক মেরামত কারখানায় আধুনিক যন্ত্রপাতি স্বল্পতার কারণে বিকল ট্রান্সফর্মার প্রত্যাশিত সময়ের মধ্যে মেরামত করতে না পারা।
এই সমস্যাগুলো সমাধানে সেসময় ৬ টি সুপারিশ করেছিলেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী।
সুপারিশগুলো হচ্ছে- বিকল ও ওভারলোডেড ট্রান্সফর্মারের বিপরীতে নতুন ট্রান্সফর্মার প্রতিস্থাপনের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ট্রান্সফর্মার মজুদ, এ অঞ্চলের আওতাধীন ৩৩ কেভি, ১১ কেভি ও শূণ্য দশমিক ৪ কেভি সঞ্চালন লাইনের সংস্কার/ক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ, নগরীর দক্ষিণ সুরমা এলাকায় নতুন গ্রিড উপকেন্দ্র নির্মাণ, উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৩৩ ও ১১ কেভি দুটি নতুন উপকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের কাজ তরান্বিত এবং আঞ্চলিক (ট্রান্সফর্মারসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি) মেরামত কারখানা আধুনিকায়ন ও ট্রান্সফর্মার চুরির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
সিলেটে বিদ্যুতের ১০ সমস্যা ও ৬ সুপারিশের প্রতিবেদন পেয়ে নিয়ে সমন্বিত একটি প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশ দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলীকে প্রধান করে এ জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়। এই কমিটি তৈরি করে সিলেট বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়নের প্রকল্প। সম্প্রতি এই প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়।
প্রস্তাবিত প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্র নির্মান ও সংস্কার, ১১/০.৪ কেভি উপকেন্দ্র নির্মান ও সংস্কার, পর্যাপ্ত পরিমাণ ট্রান্সফর্মার মজুদ, এ অঞ্চলের আওতাধীন ৩৩ কেভি, ১১ কেভি ও শূণ্য দশমিক ৪ কেভি সঞ্চালন লাইনের সংস্কার ও ক্ষমতা বৃদ্ধি। এই প্রকল্পের আওতাভূক্ত হিসেবে সিলেট বিভাগের ৪ টি জেলা ও সিটি করপোরশেন এলাকাকে দেখানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী রতন কুমার বিশ্বাস এঈ প্রতিবেদককে বলেন, অর্থমন্ত্রীর নির্দেশে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। ২৫ আগস্ট এই প্রকল্পটি বিদ্যুৎ মন্ত্রনালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় হয়ে একনেকে উঠবে। একনেকে পাস হলেই কাজ শুরু হবে।
এই প্রকল্পটি আরো ২০ বছর আগে নেওয়া উচিত ছিলো জানিয়ে রতন কুমার বিশ্বাস বলেন, সব বড় শহরেই এরকম প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্প অনুযায়ী কাজ করা গেলে লো-ভেল্টেজ ও অহেতুক বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে।