চার নেতার ছাত্রদল ছাড়ার ঘোষনা – আসলেই কি তাই ?

Chhaatrodol Press Conferenceসুরমা টাইমস ডেস্কঃ সিলেট ছাত্রদলের রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন সিলেটে জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের চার নেতা। শনিবার বিকালে সিলেট ছাত্রদলের কমিটি প্রত্যাখ্যানকারি বিদ্রোহীদের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এ ঘোষণা দেন। চার নেতাই বর্তমান সিলেট জেলা ও মাহানগর কমিটি প্রত্যাখ্যানকারি। সুরমা টাইমস সহ আরও দু একটি পত্রিকায় এমন সংবাদ প্রচারিত হয়। ইতোমধ্যেই ওই চার নেতার পাঠানো এক বিবৃতিও পাঠানো হয় সকল পত্রিকায়। সুরমা টাইমসে প্রকাশিত ওই সংবাদটি সিলেটের অন্য একটি অনলাইন পোর্টাল থেকে নেয়া ছিল। সংবাদটি আসলেই বিভ্রান্তিকর ছিল। সিলেট জেলা প্রেস ক্লাবের ওই সংবাদ সম্মেলনের হুবহূ বক্তব্য এখানে তুলে ধরা হলঃ

প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা,
আসসালামু আলাইকুম
দীর্ঘ এক যুগ পর গত ১৮ই সেপ্টেম্বর ২০১৪ইং তারিখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সিলেট জেলা ও মহানগর এর কমিটি ঘোষণা করা হয়। আজ কমিটি গঠনের ১ বছর অতিবাহিত হতে চলছে। আপনারা জানেন, সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার পরপরই আমরা প্রত্যাখ্যান করি এবং ত্যাগী, পরীক্ষিত ও দলের আদর্শের প্রতি অবিচল নেতৃত্বের মাধ্যমে ছাত্রদলের কমিটি গঠনের দাবীর পাশাপাশি নবগঠিত কমিটির সকল কার্যক্রম প্রতিরোধ এবং প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে আমরা সরকার বিরোধী আন্দোলন অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছি।

সুপ্রিয় সংবাদকর্মী ভাইয়েরা,
সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের কমিটির মেয়াদ আজ ১ বছর অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু আজও এই কমিটির নেতৃবৃন্দরা দলের ত্যাগী, পদবঞ্চিত এবং মূলধারার নেতাকর্মীদের প্রতিরোধের মুখে তাদের স্বাভাবিক কোন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছেন না। যা বিগত ১ বছরের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করলেই দেখা যায়। আপনারা জানেন, অবৈধ পকেট কমিটির নেতৃবৃন্দ কমিটির কার্যক্রম শুরু করতে বিভিন্ন ছল-চাতুরির আশ্রয় নিয়েছেন, ১০ টাকার বিনিময়ে দলের সদস্য ফরম বিলি করেছেন। ওয়ার্ড, উপজেলা এবং কলেজ পর্যায়ে যে সকল কর্মসূচী ঘোষণা করেছিলেন এবং ২-৩ টি থানায় কর্মী সম্মেলনের নামে কমিটি করার কথা বলে একপাশ কমিটি অনুমোদন করেন যা ছাত্রদলের মধ্যে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে এবং উক্ত থানাগুলোতে পাল্টা কমিটিও গঠন করা হয়। ইতিপূর্বে যদিও লোক দেখানো কিছু ফটোসেশন ও প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিতে আপনারা লক্ষ্য করেছেন, কিন্তু তাতে স্ব-স্ব ইউনিটের মূল ধারার নেতৃত্বের অংশগ্রহণ ছিল না।

প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা,
সিলেট ছাত্রদলের গত ১ বছরের ইতিহাসের একটি উদাহরণ আপনাদের সম্মুখে তুলে ধরতে চাই। যেটি সিলেটের রাজনীতিতে এক নতুন ধারার জন্ম দিয়েছে। আপনারা দেখেছেন অতীতে ছাত্রদলের কমিটি গঠন করার পর কমিটির পক্ষে-বিপক্ষের মধ্যে পাড়া-মহল্লায় সংঘর্ষ ও নানান ধরণের বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটত। কিন্তু আমরাই প্রথম যারা সংগঠিত হয়ে দলের বৃহত্তর স্বার্থে এ ধরনের কার্যক্রমকে এড়িয়ে গেছি। আমরা সবাইকে সংগঠিত হয়ে কাজ করতে শিখিয়েছি।

প্রিয় সংবাদকর্মী ভাইয়েরা,
আপনারা জাতির বিবেক। বিএনপির অন্যতম অঙ্গ সংগঠন হচ্ছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। কিন্তু বিতর্কিত কমিটির নেতারা সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি এবং তৃণমূল নেতাকর্মীর সাথে বিগত ১ বছরে কোন সমন্বয়ই করতে পারেননি। সুতরাং এ থেকেই প্রমাণিত হয় যে, তাঁদের দ্বারা সিলেট ছাত্রদলকে নেতৃত্ব দেয়া সম্ভব নয়।

প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা,
৫ই জানুয়ারী গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ডাকে রাজপথে ঐক্যবদ্ধভাবে নামার জন্য আমরা ছাত্রদলের অবৈধ পকেট কমিটিকে আহ্বান জানাই। কিন্তু তারা আমাদের আহ্বানে কোন ধরনের সাড়া দেননি, এমনকি কোন ধরণের সহযোগিতাও করেননি। পদ পেয়েও কমিটিকে যারা প্রত্যাখ্যান করে আমাদের সাথে ছিলেন, তাদের মধ্যে আহমদ চৌধুরী ফয়েজ, মাহফুজুল করিম জেহিন ও এখলাছুর রহমান মুন্না। ৫ই জানুয়ারী ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাজপথে মিছিল করতে গিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। কিন্তু অবৈধ কমিটির কোন নেতৃবৃন্দ কখনই তাদের পক্ষে কোন নিন্দা জানাননি।

সুপ্রিয় সংবাদকর্মী ভাইয়েরা,
অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত হাজার হাজার নেতাকর্মী আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে হুলিয়া, জেল, জুলুম, নির্যাতন উপেক্ষা করে রাজপথে স্বক্রীয় ভূমিকা পালন করছেন। কিন্তু সুবিধাবাদী বিতর্কিত কমিটির নেতারা বহাল তবিয়তে প্রকাশ্যে ঘোরা ফেরা করছেন। তৃণমূল নেতাকর্মীদের সন্দেহ তাঁরা দালালীর আশ্রয় নিয়ে এবং আমাদের কাছে বিশ্বস্ত সূত্রে খবর আছে ক্ষমতাসীনদের সাথে আতাত করে বিতর্কিত কমিটির নেতৃবৃন্দ মামলা, গ্রেফতার থেকে নিজেদেরকে রক্ষায় ব্যস্ত।
প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা,
আপনারা জানেন, আমাদের আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ডাকে গত ৫ই জানুয়ারী থেকে শুরু করে আজ অবধি রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে আমাদের অসংখ্য নেতা-কর্মীদের পুলিশি হয়রানির স্বীকার ও একাধিক বার কারাবরণ করতে হয়েছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েজনের নাম উল্লেখ না করলেই নয়।
তারা হচ্ছেন, ১। আহমদ চৌধুরী ফয়েজ (যিনি ৫ই জানুয়ারী গ্রেফতার হয়েছিলেন), ২। মাহফুজুল করিম জেহিন, ৩। নজরুল ইসলাম, ৪। বেলাল আহমদ, ৫। এখলাছুর রহমান মুন্না, ৬। লিটন আহমদ, ৭। আব্দুর রউফ, ৮। বুরহান উদ্দিন রাহেল, ৯। রুবেল বক্স, ১০। সাবের আহমদ চৌধুরী, ১১। আলী আহমদ আলম, ১২। আব্দুল আলীম, ১৩। সাইদুল ইসলাম হৃদয়, ১৪। শিহাব খাঁন, ১৫। এম. এ. মান্নান, ১৬। উসমান গণি, ১৭। নাবিন রাজা চৌধুরী, ১৮। রুবেল আহমদ, ১৯। আলী আকবর রাজন, ২০। নাজিম উদ্দিন, ২১। রাইসুল ইসলাম সানি, ২২। ফয়েজ আহমদ, ২৩। সেলিম আহমদ, ২৪। আফজল হুসেন, ২৫। শাওয়াল হোসেন সাগর, ২৬। মোঃ আখতারুজ্জামান, ২৭। তোফায়েল আহমদ মাহী, ২৮। নজরুল ইসলাম, ২৯। নাজমুল ইসলাম, ৩০। ফাহিম মজুমদার, ৩১। মূসা আহমেদ, ৩২। জিয়াউর রহমান জিয়া সহ অসংখ্য নেতা-কর্মী।

প্রিয় সংবাদকর্মী ভাইয়েরা,
আমাদের কয়েকজন শীর্ষ ছাত্রনেতার কথা না বললেই নয়। যারা সিলেট ছাত্রদলের কর্মীদেরকে রাজপথে আন্দোলন করতে সর্বদা প্রেরণা যুগিয়েছেন। যারা বহু মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা কাঁদে নিয়ে তৃণমূল ছাত্রদলকে সুসংগঠিত করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ডাকে আন্দোলন সংগ্রামে আজ পর্যন্ত নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা হচ্ছেন, সৈয়দ সাফেক মাহবুব, মাহবুবুল হক চৌধুরী, আহমদ চৌধুরী ফয়েজ, শাকিল মোরশেদ, রেজাউল করিম নাচন, লোকমান আহমদ প্রমুখ।

প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা,
আপনারা জানেন, গতকালও পুলিশ আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে ধাওয়া দিয়েছে। তাই আপনাদের মাধ্যমে আমাদের কয়েকটি দাবি এ সরকারের প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে তুলে ধরতে চাইঃ
১। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও দেশনায়ক তারেক রহমান সহ সমগ্র দেশের হাজার হাজার নেতা-কর্মীর উপর মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
২। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাজীব আহসান সহ সকল কারাবন্দী নেতা-কর্মীদের মুক্তি দিতে হবে।
৩। বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য এম. ইলিয়াছ আলী এবং সিলেটের ছাত্রনেতা ইফতেখার হোসেন দিনার সহ সকল গুমকৃত নেতা-কর্মীদের অক্ষত অবস্থায় আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দিতে হবে।
৪। কোন নেতা-কর্মীর বাসায় বেআইনীভাবে পুলিশী তল্লাশী করা চলবে না এবং পুলিশি হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
৫। শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ বেআইনীভাবে বাঁধা দিতে পারবে না।
এ সরকারের শাসন ব্যবস্থা দিন দিন চরম হয়ে উঠেছে। তাই আমরা আপনাদের মাধ্যমে জানাতে চাই, আমাদের এই ৫ দফা দাবি যদি মেনে নেওয়া না হয় তাহলে সিলেটের ছাত্রদল তৃণমূল সহ সকল নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভবিষ্যতে কঠোর কর্মসূচি ও আন্দোলনের ডাক দিতে বাধ্য হবে।

সুপ্রিয় সংবাদকর্মী ভাইয়েরা,
তীলে তীলে গড়ে ওঠা সিলেটের ছাত্রদলকে আমরা যারা সুসংগঠিত করেছি এবং আজও ছাত্রদলকে রক্ষা করতে জীবন বাঁজি রেখে রাজপথে স্বক্রিয় ভূমিকা পালন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, কতটুকু পেরেছি তার রাজস্বাক্ষী আপনারা? ছাত্রদলের ইতিহাসে সবচাইতে বিতর্কিত এবং তৃণমূলের নেতা-কর্মী দ্বারা প্রত্যাখ্যাত অবৈধ পকেট কমিটি ছাত্রদলকে দিন দিন ধ্বংসের পথে ধাপিত করছে। আমরা দেশ ও জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে ছাত্রদলের বৃহত্তর স্বার্থে পেশাজীবী, শিবির থেকে বিতাড়িত সুবিধাবাদীদের অবিলম্বে অব্যাহতি দিয়ে, অপেক্ষাকৃত তরুণ, ত্যাগী ও মেধাবী নেতৃত্বের মাধ্যমে নতুন কমিটি ঘোষণা করে আপনাদের মাধ্যমে ছাত্রদলকে রক্ষার দাবি জানাচ্ছি।

প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা,
পরিশেষে আপনাদের এ কথাই বলতে চাই, দলের বৃহত্তর স্বার্থে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব। তাই আপনাদের মাধ্যমে বিতর্কিত অবৈধ কমিটিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। সরকার পতন নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব। ইনশাল্লাহ………………. আল্লাহ হাফেজ……
বাংলাদেশ জিন্দাবাদ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল জিন্দাবাদ………….
শহীদ জিয়া অমর হোক……. দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জিন্দাবাদ…….
তারুণ্যের অহংকার তারেক রহমান জিন্দাবাদ………….. জিন্দাবাদ………..

ধন্যবাদান্তে

ছাত্রদল ছাড়ার ঘোষণা দিলেন নাচন সহ সিলেটের চার নেতা