জাতীয় কবি’র ৩৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৩৯ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ ১২ ভাদ্র বৃহস্পতিবার। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের শোকাবহ ঘটনার এক বছর পর শোকের মাসের এদিনেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (সাবেক পিজি হাসপাতাল) তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। সেখানেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।
জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশন ও বিভিন্ন বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে। জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের এক সংবাদ বিঞ্জপ্তিতে বলা হয়, কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ সকালে ফজরের নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে কোরআনখানি অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া সকাল ৭টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সমাবেশ ও সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে উপাচার্যের নেতৃত্বে শোভাযাত্রা সহকারে কবির সমাধি প্রাঙ্গণে গমন, পুষ্পার্পণ এবং ফাতেহা পাঠ। পরে কবির মাজার প্রাঙ্গণে উপাচার্যের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সকাল ৮টায় জাতীয় কবির সমাধিতে পুষ্পমাল্য নিবেদন, ফাতেয়া পাঠ ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের এ কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকার আহবান জানিয়েছেন।
বিশ্ব বাঙ্গালি সম্মেলন ও বিশ্ব কবিতা কংগ্রেস সকালে ৮টা ৩০ মিনিটে কবির সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও রুহের মাগফেরাত কামনা সহ মোনাজাত এবং কবিতা পাঠের আয়োজন করেছে । এ দিকে কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা একাডেমী আজ বিকেল ৪টায় একাডেমীর কবি শামসুর রাহমান মিলনায়তণে একক বক্তৃতা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ।
৩৯তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে তার স্মৃতিজড়িত কুমিল্লায় নজরুল পরিষদের উদ্যোগে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। এদিন সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে চেতনায় নজরুল স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো হবে। এছাড়াও দিবসের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- আলোচনা সভা, কবিতা আবৃত্তি, হাম-নাত পরিবেশন ও দোয়া মাহফিল।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম ‘দুখু মিয়া’। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুন। বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টি করে বাংলা সঙ্গীত জগতকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন।
প্রেম, দ্রোহ, সাম্যবাদ ও জাগরণের কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ও গান শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রামে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছে। মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস। নজরুল বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, নজরুল ইতিহাস ও সময় সচেতন মানুষ ছিলেন যার প্রভাব তার লেখায় স্পষ্টভাবে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, তুরস্কে কামাল পাশার নেতৃত্বে প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা, রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব আর ভারতবর্ষে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের তরঙ্গকে নজরুল তার সাহিত্যে বিপুলভাবে ধারণ করেছেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পরই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে স্বপরিবারে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তার বসবাসের ব্যবস্থা করেন। বঙ্গবন্ধু ধানমন্ডিতে কবির জন্য একটি বাড়ি প্রদান করেন।