রাজন হত্যা : আসামিদের ভ্যানগাড়ি নেই, তবু চুরির অপবাদ দিয়ে হত্যা
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ সিলেটের কুমারগাও বাসস্ট্যান্ডে কিশোর শেখ মো. সামিউল আলম রাজনকে (১৪) ভ্যানগাড়ি চুরির কারণে নির্যাতন করা হয় বলে আসামিপক্ষ দাবি করেছিল।সেই নির্যাতনে মৃত্যুও হয়েছিল সেই ১৪ বছরের কিশোর সামিউল আলম রাজনের।কিন্তু ঘটনায় জড়িত কোনো আসামিরই ভ্যানগাড়ি ছিল না, তারপরও চুরির অপবাদ দিয়ে নির্যাতন কওে হত্যা করা হয় রাজনকে।আলোচিত এ ঘটনার তদন্তে বের হয়ে এসেছে এই তথ্য।আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্রে (চার্জশিট) আসামিপক্ষের কারওরই ভ্যানগাড়ি না থাকা এবং এরপরও ভ্যানগাড়ি চুরির অপবাদের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিলেট মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক সুরঞ্জিত তালুকদার এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন।ডিবি পুলিশ সূত্র জানায়, আদালতে ঘটনার দায় স্বীকার করে দেওয়া আটজন আসামির মধ্যে সাতজনই জবানবন্দিতে রাজনকে ভ্যানগাড়ি চুরির অভিযোগে আটক করে পেটানো হয় বলে স্বীকার করেন। কিন্তু কার ভ্যানগাড়ি সে বিষয়ে কোনো তথ্যই দিতে পারেননি তাঁরা।মাত্র একজন আসামি ভ্যানগাড়ি চুরির অভিযোগটি মিথ্যা ছিল বলে আদালতে জবানবন্দি দেন।আর এর ভিত্তিতেই ডিবি পুলিশ তদন্ত করে নিশ্চিত হয়, আসামিদের কারও কোনো ভ্যানগাড়িই ছিল না।তবু চুরির অপবাদ দেওয়া হয়।
অভিযোগপত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তার মতামত ও পর্যবেক্ষণ অংশে বলা হয়, সামিউল রাজন গত ৮ জুলাই ভোরে নিজেদের খেতের ঝিঙে ও চিচিঙ্গা বিক্রি করার জন্য টুকেরবাজারে যায়। সবজি বিক্রি করে রাজন ঘটনাস্থল কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ডে যায়।খান ইঞ্জিনিয়ারিং নামের একটি দোকানের সামনে ঘোরাঘুরি করার সময় চৌকিদার ময়না মিয়া, ফিরোজ আলী, আয়াজ আলী ও দুলাল আহমদ রাজনকে আটক করেন।‘ভ্যানগাড়ি চুরির জন্য এসেছিস’ বলে রাজনকে ধরে তাঁরা দোকানের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন শুরু করেন।
অভিযোগপত্রে রাজনকে নির্যাতন করার বিষয়টি ‘নিষ্ঠুর’ ও আসামিরা ‘আত্ম-উল্লাসে’ ভিডিও চিত্র ধারণ করেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।নির্যাতনের পাশাপাশি আসামিরা অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে অশালীন বাক্য বিনিময় করেন। অশালীন কথাবার্তা রাজনের মুখ দিয়ে বলানোরও চেষ্টা করেন তাঁরা।অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, রাজন পানি খাওয়ার জন্য বেশি আকুতি জানানোয় যে লাঠি দিয়ে তাকে পেটানো হয়, সেই লাঠি পাশের একটি নালায় ভিজিয়ে এনে তার মুখে ঢোকানো হয়। অভিযোগপত্রে এ বিষয়টিকে ‘পৈশাচিক’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
তদন্তে পাওয়া এসব তথ্যের পক্ষে ভিডিও চিত্রের ডিভিডি, মুঠোফোন সেট, লাশ গুম করার কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসসহ (নম্বর ঢাকা মেট্রো চ-৫৪-০৫১৬) ১০টি আলামত অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ডে জালালাবাদ থানা এলাকার বাদেয়ালি গ্রামের মাইক্রোবাসচালক শেখ মো. আজিজুর রহমানের ছেলে সামিউল রাজনকে চুরির অপবাদ দিয়ে নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়। লাশ গুম করার সময় একজন আসামিকে আটক করে জনতা পুলিশে দিলেও ঘটনার মূল হোতা কামরুল ইসলাম দেশে ছেড়ে পালিয়ে যান। অন্য আসামিরাও গা ঢাকা দেন। ঘটনার চার দিন পর গত ১২ জুলাই ভিডিও চিত্র নিয়ে সিলেট টাইমস্ বিডি ভিডিও ধারণ করে রাজনকে হত্যা করা হয় শিরোনামে ভিডিওসহ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়।
সৌদি আরব পালিয়ে যাওয়ার পর সেখানে বাংলাদেশিদের হাতে ধরা পড়েন কামরুল।এরপর দেশে গা ঢাকা দিয়ে থাকা একে একে সব আসামিকে জনতা পুলিশে সোপর্দ করে। ঘটনার এক মাস আট দিনের মাথায় ১৬ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। অভিযোগপত্রে কামরুল ও তাঁর চার ভাইসহ ১৩ জনকে অভিযুক্ত হিসেবে দেখানো হয়। কাল সোমবার সিলেট মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগ শুনানির কথা রয়েছে।