পরপর পাঁচদফা ভূমিকম্পে সিলেটেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ একের পর এক অনুভূত হচ্ছে ভূমিকম্প। এক ঘণ্টার ব্যবধানে পাঁচ দফায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে ঢাকাসহ সারা দেশে। যা একযোগে কাঁপিয়েছে ভারত ও নেপালকেও। সবকটি ভূমিকম্পেরই উৎপত্তিস্থল ছিলো নেপাল।
সিলেটে রিখটার স্কেলে ৭.২ মাত্রার অনুভূত হওয়া ভূমিকম্পে ফাঁটল দেখা দিয়েছে শাবিপ্রবির নবনির্মিত বেগম সিরাজুন্নেছা চৌধুরী হলে। ছাত্রীদের জন্য নবনির্মিত এ হলের এ এবং বি ব্লকের মধ্যবর্তী স্থানে ভূমিকম্পের প্রভাবে ৪ ইঞ্চি ফাঁটল সৃষ্টি হয়। এতে হলে থাকা ছাত্রীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্ভে দল এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং ছাত্রীদের আশ্বস্ত করে। আগামীকালের মধ্যে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান প্রভোস্ট।
সিলেট ফায়ার সার্ভিস, আবহাওয়া অফিস ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে- ভূমিকম্পে সিলেটে কোন ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। তবে ভূমিকম্পের ঝাঁকুনিতে স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের মাঝে দেখা দেয় আতঙ্ক। নগরীর বিভিন্ন বহুতল ভবনে অবস্থিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে নেমে আসেন নিচে। একইভাবে নগরীর বাসা-বাড়ির বাসিন্দারা বের হয়ে আসেন রাস্তায়।
লিডিং ইউনিভার্সিটির সুরমা মার্কেটস্থ ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে নিচে রাস্তায় নেমে আসেন। এসময় আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেন। শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসায় কিছু সময়ের জন্য সুরমা মার্কেট এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
সুনামগঞ্জে দুই দফা ভুমিকম্পে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে । অন্যদিকে ভুমিকম্প আতংকে সুনামগঞ্জ জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার রাতারগাও উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাড়াহুড়ো করে নামতে ১০ শিক্ষার্থী আহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
শনিবার প্রথমে দুপুর ১২টা ১৪ মিনিট থেকে প্রায় ১৬ মিনিট পর্যন্ত এর স্থায়ীত্ব ছিল। দ্বিতীয় দফায় আবারো দুপুর ১টা ৩৪ মিনিটে প্রায় ৪০ সেকেন্ড স্থায়ী ভুমিকম্প অনুভূত হয়। এ সময় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আবাসিক বহুতল ভবন, ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতংক দেখা দেয়।
সুনামগঞ্জ জেলার করচার হাওরের ফসল রক্ষার অন্যতম গজারিয়া বাধঁটিতে ফাটল দেখা দিলে স্থানীয় জনতা বাধঁটি মেরামতের চেষ্টা করছেন। ক্ষতিগ্রস্থ বাধঁটি পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী সাঈদ আহমদ, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার খন্দকার আব্দুল্লাহ আল মামুদ ও এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী ইকবাল আহমদ বাঁধ পরিদর্শনে গিয়ে দ্রুত মেরামতের নির্দেশ দেন।
দোয়ারাবাজারে ভূমিকম্পে সুরমা নদীতে নৌকাডুবিতে রন দাস (৩০) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার মান্নারগাঁও ইউনিয়নের ডুলপশি গ্রামের মৃত রমেশ দাসের পুত্র। স্থানীয় সুত্রে জানাযায়, শনিবার দুপুরে হাওরে নিজের জমির ধান কেটে বাড়ী ফেরার সময় একই ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের সন্নিকটে ভূমিকম্পের সময় মাঝ নদীতে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। এসময় নৌকায় থাকা ৪জন কৃষকের মধ্যে মাঝিসহ ৪জন সাঁতার কেটে উঠতে পারলেও নিখোঁজ হন ওই কৃষক। রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিখোঁজ কৃষকের লাশের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। নৌকাডুবিতে নিখোঁজ কৃষকের লাশ না পেয়ে পরিবারের লোকজনের মধ্যে চলছে এখন শোকের মাতম। বিকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম নৌকাডুবির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
শনিবার দুপুরের আকস্মিক ভূমিকম্পে উপজেলার দোয়ারাবাজার মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের পুরাতন একাডেমিক ভবন ও সুরমা ইউনিয়নের টেংরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবন ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেয়ালে বড় ধরণের ফাটল দেখা দিলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এসময় দিকবেদিক ছুটাছুটি করে বিদ্যালয়ের ৭/৮ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। ভূমিকম্পে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেয়ালে ফাটল দেখা দেয়ায় আতঙ্কের মধ্যে খোলা আকাশের নীচে পাঠদান করতে হচ্ছে। প্রায় ১মিনিট স্থায়ী ভূমিকম্পের সময় উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাড়ী-ঘর থেকে দিকবেদিক ছুটাছুটি করতে থাকেন মানুষজন।
ইউএসজিএ জানায়, প্রথম ভূমিকম্পটি অনুভূত হয় বাংলাদেশ সময় বেলা ১২টা ১৩ মিনিটে। এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিলো নেপালের পোখরায়। সেখানে রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিলো ৭.৯। বাংলাদেশে তা অনুভূত হয় ৭.৫ মাত্রায়। একই মাত্রায় ভারতকে কাঁপিয়ে তোলে ওই প্রথম ভূমিকম্পটি।
এর কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হয় ভূমিকম্পের পরাঘাত (আফটার শক) গুলো। প্রথম ভূমিকম্পের ১৭ মিনিটের মধ্যে ৫.৪ মাত্রার একটি কম্পন অনুভূত হয় বাংলাদেশে। এরপর ৭ মিনিট পর আরেকটি ভূমিকম্প অনুভূত হয় যাত্রা মাত্রা ছিলো ৬.৫। আর তার প্রায় ১০ মিনিট পরে বাংলাদেশ সময় ১২টা ৫৮ মিনিটে চতূর্থ কম্পনটি অনুভুত হয়। যার মাত্রা ছিলো ৫.৮। আর পঞ্চম ভূমিকম্পটি হয় বাংলাদেশ সময় বেলা ১টা ১৫ মিনিটে। যার মাত্রা ছিলো ৫.২।
এদিকে অনেকটা একই সময়ে জাপানে একটি ভূমিকম্প হয়। যার মাত্রা ছিলো ৬.০।
নেপালে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির কথা জানা গেছে। ঢাকায় একটি ভবনে ফাঁটল ধরার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। ময়মনসিংহের একটি স্কুলের ভবন ধসে শিক্ষক-ছাত্রসহ ১০ জন আহত হয়েছে।