আমেরিকায় আততায়ীর গুলিতে নিহত বিশ্বনাথের বাবুলের বাড়িতে শোকের মাতম
এটিএম আব্বাসঃ আমেরিকার মিশিগান রাজ্যের ডেট্রয়েট সিটিতে আততায়ীর গুলিতে নিহত বিশ্বনাথী ক্যাব ড্রাইভার বাবুল মিয়ার গ্রামের বাড়িতে চলছে এক অসহনীয় শোকের মাতম। পুত্রহারা মা এবং শোকাহত স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে পরিবেশ। বাবুলের জন্ম ও শৈশবের চিরচেনা জাগিরআলা গ্রামসহ আশপাশের এলাকায় নেমে এসেছে রাজ্যের নিরবতা। সর্বত্র বিরাজ করছে এক প্রিয়জন হারানোর শূন্যতা।
গতকাল দুপুরে সরেজমিন নিহত বাবুলের লামাকাজী ইউনিয়নস্থ জাগিরআলা গ্রামের বাড়িতে প্রবেশের সময়ই বাড়ির ভেতর থেকে থেমে থেমে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসতে থাকে। সংবাদকর্মীরা এসেছেন শোনে দৌড়ে ছুটে আসেন নিহত বাবুলের মামাতো ভাই শাহিন আহমদ শিশু। তার সাথে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতেই কান্নার আওয়াজ আরো ভারী হয়ে উঠে। ঘরে ঢুকতেই দেখা মেলে বাবুলের হতভাগী মমতাময়ী মায়ের। কিছু একটা বলতে গিয়েই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। কাঁদতে কাঁদতে চোখের জল শুকিয়ে ফেলা পুত্রহারা এই মায়ের চেহারাজুড়ে শূন্যতা আর বুকফাটা আর্তনাদের ছাপটা তার কণ্ঠেও নেমে এসেছে। অনেক কষ্টে ‘ও পুত বাবুলরে’ বলেই বুক চাপড়ে হাউমাউ করে কেঁদে ফেললেন। নিহত বাবুলের মায়ের এমন করুণ আহাজারীদের চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি উপস্থিত কেহই। এমনকি এ প্রতিবেদককেও বার বার চোখের জল মুছতে হয়েছে।
এই ফাঁকে পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও নিকটাত্মীর সাথে কথা বললে তারা জানান-বাবুলের মৃত্যুর সংবাদ শোনার পর থেকেই অবিরাম কাঁদছেন এই পুত্রহারা মা। অনেক সময় কাঁদতে গিয়ে মূর্চ্ছাও যাচ্ছেন তিনি। কোনো শান্তনাই তাকে নিবৃত্ত করতে পারছে না।
আমাদের কথাবার্তার মধ্যে কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আবার কথা বলার চেষ্টা করেন বাবুলের মা। কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান-মাত্র একটি নজর ছেলেটাকে কাছ থেকে দেখবো বলে ২৫বছর ধরে পথ চেয়ে বসে আছি। ফোনে কথা বললেই তাকে দেশে আসার জন্যে তাগাদা দিয়েছি। ‘পরের মাসে আসবে, পরের মাসে আসবে’ বলে বারবার আমাকে শান্তনা দিয়েছে। কিন্তু আমার বুকের ধন আমার বুকে ফেরত আসেনি। তার লাশ দেখব বলেই কি জীবনের ২৫টি বছর পথ চেয়ে বসেছিলাম।
পারিবারিক একটি সূত্র জানায়-গত দ’বছর ধরে বাড়ির লোকজনের সাথে এমনকি মায়ের সাথেও তেমন যোগাযোগ ছিল না বাবুলের। তবে কেন যোগাযোগ ছিল না তা ওই সূত্র জানে না। লাশ দেশে আসার ব্যাপারে বাবুলের মামাতো ভাই শাহিন আহমদ শিশু জানান- কিছু আইনী জটিলতার কারণে লাশ দেশে আসতে বিলম্ব হচ্ছে। তবে দু’একদিনের মধ্যে লাশ দেশে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি আরো জানান-লাশ দেশে এলে তা ঢাকা বিমান বন্দরে গিয়ে গ্রহণ করার কথা রয়েছে। এক্ষেত্রে ঢাকা গিয়ে ফুফুকে (বাবুলের মাকে) তা গ্রহণ করতে হবে।
এদিকে, নিহত বাবুলের মা, আত্মীয়-স্বজনসহ এলাকাবাসি দাবি জানিয়েছেন-বাবুলের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেন যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে। একই সাথে পুত্রহারা মা এবং স্বজন হারা বাবুলের পরিবারের সহযোগিতায় যেন তারা এগিয়ে আসেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৬শে মার্চ রাতে আমেরিকার মিশিগান স্টেট ডিট্রয়েট সিটিতে নিজ গাড়ীতে অস্ত্রধারী ছিনতাইকারীদের গুলিতে নিহত হন সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নের জাগিরআলা গ্রামের মৃত খুর্শিদ আলীর পুত্র বাবুল মিয়া। তিনি পেশায় ছিলেন টেক্সিক্যাব ড্রাইভার। ঘটনার সাথে সাথে সেখানকার পুলিশ অস্ত্রসহ চার ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে। ৩০শে মার্চ মিশিগানের আল-ফালাহ জামে মসজিদে তার জানাযা সম্পন্ন হয়। জানাযায় বাংলাদেশের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. ওসমান ফারুক ফারুকসহ বাঙ্গালী কমিউনিটির শত শত মানুষ অংশ নেন।