বিদায় বাংলাদেশ, সেমিতে ভারত
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন কে না দেখে। বাংলাদেশও দেখেছিল। টাইগারদের সঙ্গে ১৬ কোটি মানুষের চোখেও ছিল সেমিতে যাওয়ার প্রবল স্বপ্ন। তবে প্রতিপক্ষ ভারত বলেই স্বপ্নটা ভেস্তে গেছে। যেখানে আম্পায়ারদের নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্বের স্বাক্ষী হয়ে থাকল অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড। বিশ্বকাপের দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশকে ১০৯ রানে পরাজিত করে সেমিতে পা রেখেছে ধোনি শিবির। সেমির টিকিট পেয়েছে ভারত, এটা সত্য; সঙ্গে তাদের গায়ে সেটে থাকছে সমালোচনাও।
বিশ্বকাপের মঞ্চ থেকে বিদায় বাংলাদেশ। এতে রয়েছে কিছুটা আফসোস, তবে গর্বটাও অনেক বেশী। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। প্রতি ম্যাচেই লড়াই করেছে টাইগাররা। রিয়াদের ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি, রুবেলের বিধ্বংসি রুপ, মুশফিকের নির্ভরতার ব্যাটিং, আরও কিছু রেকর্ড। ফলে বিদায় নয়, বরং বলা ভালো ‘ব্রাভো বাংলাদেশ।’
সেমিতে যেতে হলে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের রেকর্ড ভাঙ্গতে হত বাংলাদেশকে। কারণ এই মাঠে তিনশ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড নেই। শেষ পর্যন্ত পারেনি বাংলাদেশ। টসে জিতে আগে ব্যাট করতে নামা ভারতের ৬ উইকেটে ৩০২ রানের জবাবে ৪৫ ওভারে ১৯৩ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।
জয়ের জন্য লক্ষ্য ৩০৩ রানের। যা পাহাড়সমই। তবে বাংলাদেশের বিশ্বস্ত ব্যাটিং আশাই জাগাচ্ছিল। শুরুটা আগের তুলনায় ভালোই করেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। তবে চারটি বাউন্ডারিতে ২৫ রান করার পর বিতর্কিত কট বিহাইন্ডে আউট হয়ে যান তামিম। পরের বলেই দ্রুত রান নিতে গিয়ে রানআউট হয়ে ফেরেন ওপেনার ইমরুল কায়েসও।
এরপর সৌম্য সরকারকে নিয়ে ৪০ রানের জুটি গড়ে ফেলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু ১৭তম ওভারের শেষ বলে এসে মোহাম্মদ শামির বলে একেবারে বাউন্ডারি লাইনে শিখর ধাওয়ানের হাতে ধরা পড়েন মাহমুদুল্লাহ।
ক্যাচটি নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ ছিল। কারণ, ধাওয়ানের পা ওই সময় বাউন্ডারি লাইন স্পর্শ করে ফেলেছিল। কিন্তু টিভি আম্পায়ার বিষয়টা ভালোমত না দেখেই আউটের সিদ্ধান্ত দিয়ে দিলেন। ৩১ বলে ২১ রান করে আউট হয়ে গেলেন পর পর দুই সেঞ্চুরি করা এই ব্যাটসম্যান।
এরপর বিদায় নেন মোটামুটি ক্রিজে সেট হয়ে যাওয়া সৌম্য সরকার। ২৯ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি। মোহাম্মদ শামির লাফিয়ে উঠা বল খেলতে গিয়ে ধোনির হাতে ক্যাচ দেন সৌম্য। আশা ছিল পঞ্চম উইকেট জুটিতে কিছু একটা করবেন সাকিব-মুশফিক। কিন্তু না, ৩৪ বলে ১০ রান করে বিশ্বসেরা অল রাউন্ডার জাদেজার বলে ক্যাচ দেন শামির হাতে।
এরপর সাব্বিরের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মুশফিক। খেলছিলেনও ভালো। ষষ্ঠ উইকেটে তারা যোগ করেন ৩৫ রান। দলীয় রান তখন ১৩৯। এমন অবস্থায় উমেশ যাদবের বল খেলতে গিয়ে মুশফিকের ব্যাটের কানায় বল লেগে উঠে যায় উপরে। যা বেশ সহজেই তালুবন্দী করেন ভারত ক্যাপ্টেন ধোনি। সাজঘরে ফেরার আগে ৪৩ বলে ২৭ রান করে যান মুশফিক।
সপ্তম উইকেট জুটিতে প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও আশার আলো দেখান সাব্বির রহমান ও নাসির হোসেন। এই জুটি থেকে আসে ৫০ রান। দলীয় ১৮৯ রানে জাদেজার বলে আশ্বিনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৩৫ রান করা নাসির। এরপর দলীয় স্কোরের সঙ্গে তিন রান যোগ না হতে বিদায় ক্যাপ্টেন মাশরাফি। ১৯৩ রানের মাথায় সাব্বির ও রুবেল আউট। ৪০ বলে ৩০ রান করেন সাব্বির।
ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন উমেশ যাদব। মোহাম্মদ শামি ও রবীন্দ্র জাদেজা দুটি, মুহিত শর্মা নেন একটি উইকেট।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ছয় উইকেটে ৩০২ রান সংগ্রহ করে ভারত। ১২৬ বলে ১৩৭ রানের দুরুন্ত ইনিংস খেলেন ভারত ওপেনার রোহিত শর্মা। রায়না করেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬৫ রান। তবে এই দুজনেই আউট হতে পারতেন আগেই। সেঞ্চুরির করার আগেই রুবেলের বলে ইমরুল কায়েসের হাতে ক্যাচ দিয়েছিলেন রোহিত শর্মা। তবে ইংলিশ আম্পায়ার গোউল্ড নো বল দেন। যা রিপ্লেতে মোটেই নো বল মনে হয়নি।
আবার রায়নাও বেঁচে গেছেন এলবিডব্লিউর হাত থেকে। যদিও রিভিউতে দেখা গিয়েছিল তার লেগ স্ট্যাম্প উপড়ে যেত। আলিমদার ও গোইল্ড, দুই আম্পায়ারে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ না হলে হয়তো ভারত আরও কম রানে আটকে যেত। যেখানে বাংলাদেশের টার্গেটও হত ছোট, ঘটে যেতে পারত নতুন ইতিহাস।
সেঞ্চুরির সুবাদে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পান রোহিত শর্মা। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ তিন উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ। একটি করে উইকেট নেন রুবেল, সাকিব ও মাশরাফি।