বিয়ের স্বপ্ন পদ্মায় বিলীন
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ সাবুর চোখে ছিলো রঙিন স্বপ্ন। এই ফাল্গুনেই বিয়ে হওয়ার কথা। গত শুক্রবার মানিকগঞ্জে এসে মেয়েকে নাকফুল পরিয়ে আশির্বাদও করে যায় ছেলেপক্ষ। কিন্তু সাবুর সেই স্বপ্ন ডুবে গেলো পদ্মায়। গতকাল রোববার লঞ্চ দুর্ঘটনায় মারা যান সাবু (২৬), তার মা মদিনা খাতুন (৫৭) ও ভাতিজি মুক্তা (১২)। গতকাল রোববার রাত সাড়ে এগারটার দিকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিবুল ইসলাম গনমাধ্যমকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, সাবুর বড় ভাই লাবু মিয়া মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলায় বিয়ে করেছেন। বিয়ের পর তিনি সেখানেই স্থায়ীভাবে বাস করছেন। ছোট ভাই লাবুর সঙ্গে তার শালিকাকে বিয়ে দেয়ার কথাবার্তা আগে থেকেই পাকা ছিলো।
গত শুক্রবার কুষ্টিয়া থেকে লাবুর ছোট ভাই তার মাকে নিয়ে দৌলতপুরের বাঘুটিয়া ইউনিয়েনের চরকাটারি পাড়া গ্রামে মেয়েকে দেখতে আসেন। ছেলের হবু বউকে নাকফুল পরিয়ে আশির্বাদ করেন মা মদিনা খাতুন।
গতাল বোরবার সাবুর বড় মেয়ে মুক্তাও তার নানীর সঙ্গে কুষ্টিয়া যাওয়ার জন্য রওনা দেয়। কিন্তু কেউই আর শেষ পর্যন্ত বাড়ি ফিরে যেতে পারেননি। তিন জনই পদ্মায় লঞ্চডুবিতে মারা যান।
এদিকে মা-মেয়ে-ভাইকে হারিয়ে পাগলপ্রায় সাবুকে মানিকগঞ্জ সদরহাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। সবাই এক নজর মুক্তাকে দেখার জন্য ভিড় করছেন সাবুর বাড়িতে। মুক্তা বাঘুটিয়া আলিম মাদরাসার ৬ষ্ঠ শেণীর ছাত্রী।
স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক ডা. মাহমুদুল হাসান গনমাধ্যমকে বলেন, ‘নিহত সাবু ও তার মায়ের মরদেহ কুষ্টিয়ায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। আর মুক্তার মরদেহ আজ সোমবার জানাযা শেষে দাফন করা হবে।’
উল্লেখ্য, গতকাল রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিবালয় উপজেলার পাটুরিয়া ঘাট থেকে এমভি মোস্তফা দৌলতদিয়া ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ১৫ মিনিট পরই কার্গো জাহাজ নার্গিস-১-এর ধাক্কায় লঞ্চটি পাটুরিয়ার অদূরে পদ্মায় ডুবে যায়। লঞ্চটিতে দুই শতাধিক যাত্রী ছিল। এ ঘটনায় ৭০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৬৮ জনের পরিচয় সনাক্ত শেষে ৬৫ জনের মৃতদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ডুবে যাওয়া ‘এমভি মোস্তফা-৩’ লঞ্চের উদ্ধার কাজ আজ সোমবার সকালে সমাপ্ত করা হয়েছে।