অবরোধের কবলে চাষনী পীরের বানর!
ইয়াহইয়া মারুফঃ খাদ্যের অভাবে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে, চারিদিকে ছোটাছুটি করে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়ায়, এতিমের মত রাস্তার দিকে চেয়ে তাকে কোন খাবারদাতা আসছেন কিনা; কাউকে দেখামাত্র একটু খাবার পাবে এমন আশায় দৌড়ে আসে ক্ষুর্ধাতরা। এ যেন দেশে ঘটে যাওয়া খাদ্য সংকট। কোন মানুষ রাস্তা দিয়ে কোন কিছু নিয়ে নিরাপদে যেতে ও পারছেনা তাদের জন্য। থাদ্য সামগ্রী দেখলেই জাপটে মেরে নিয়ে খেতে চায়, চেহেরা গুলো ও মলিন হয়ে গেছে, তাদের দেখার যেন নেই কেউ! দায়িত্ব যাদের তারা বছরে মাত্র একবার এসে স্বাস্থ পরীক্ষা করেই দায়িত্বের খাতা পুরণ করেন।
এ কোন ব্যক্তি বা জাতির কাহিনী নয়! সিলেট নগরীর উত্তর কাজিটুলাস্থ কলবাখানী এলাকার গোয়াইটুলায় অবস্থিত হযরত শাহ জালালের অন্যতম সফর সঙ্গী ও ৩৬০ আউলিয়ার বিশেষ একজন হযরত সৈয়দ চাষনী পীর (র:)‘র মাজারে থাকা বানরদের কাহিনী। টানা অবরোধ-হরতালের কারণে মাজার ভক্তরা আগের মত আসতে পারছেন না, যেখানে প্রতিদিন প্রায় শতশত মানুষের সমাগম হত সেখানে এখন বিরাজ করছে সোন-সান নিরবতা, আর জীবনের ঝুকি নিয়ে যারা আসছেন তারা পরছেন নানা সমস্যায় ও আতঙ্কে। মাজারে আসা ভক্তদের দেওয়া খাবারই এই বানরদের একমাত্র ভরসা। টানা অবরোধ-হরতালের কারণে মাজার ভক্তরা আগের মত না আসায় খাদ্যের চরম সংকটে পরেছে মাজারে থাকা বন্যপ্রানী বিশেষ করে বানররা, বলতে গেলে প্রায় উপোসই দিন যাচ্ছে এই প্রাচীন মানবরূপী প্রানী বন্যপ্রানীদের।
মাজার ও স্থানীয় সুত্রে জানাযায়, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০দলীয় জোটের ডাকা টানা অবরোধ-হরতালের কারণে হযরত চাষনী পীর (র:)‘র মাজারের ভক্তদের একদমই সমাগম নেই, এখানে প্রায় প্রতিদিন শতশত চাষনী পীর ভক্তদের আগমন হত, এখন তা দাড়িয়েছে শূন্যের কোটায়, আর যারা জীবনের ঝুকি নিয়ে পীরের দরবারে আসছেন তারা পরছেন বিভিন্ন সমস্যায় ও আতঙ্কে। মাজারে ভক্তদের হাতে করে আনা খাবারই মাজারে থাকা প্রাচীন মানবরূপী প্রানি বানরদের একমাত্র ভরসা ছিল। কিন্তু গত ৫ জানুয়ারী থেকে টানা অবরোধ-হরতালের কারণে মাজারে ভক্তদের সমাগম না থাকায় বানরদের পেটে পরছেনা খাবার। আর মাজার গিরে থাকা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অবস্থা ও নাজুক, ক্রেতা শূন্য থাকায় নেই বেচা-কেনা একেবারেই হচ্ছেনা, তাই ব্যবসা ঘুঠিয়ে নেওয়ার চিন্তা করছেন তাদের অনেকেই।
না খেয়ে প্রায় অসুস্থ হয়ে পরেছে বানররা। খাবার নিয়ে ব্যস্ত থাকা মানবরূপী এই বন্যপ্রানীদের এখন রাস্তার দিকে চেয়ে সময় পার করতে হয়, যদি কেউ আসেন দৌড়াইয়া সবাই আসে একটু খাবারের আসায়। অনেক সময় মাজারের আসা ভক্ত, রাস্তা দিয়ে যাওয়া পথচারীদের উপর ও ক্ষুধার জ্বালায় চরাও হয়ে যায় তারা। মাজার কর্তৃপক্ষ ভক্তদের দানের টাকা থেকে প্রতিদিন মাত্র দুই কেজি চাউলের ভাত পাক করে দেন, যা মাজারে থাকা শতশত বানরের এক মোট করে ও হয় না। যারা প্রতিদিন কলা, কমলা, বনরুটি সহ বিভিন্ন ধরনের খাবার খেয়ে অব্যস্থ তাদের কি করে হয় এক ধরনের চাল-ভাতে, তাও আবার মাত্র দুই কেজি চাউলের। মূলত এই বানরদের রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব বনবিভাগের কিন্তু এব্যাপারে তাদের কোন পাত্তা নেই। বছরে একবার স্বাস্থ পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের দায়িত্ব শেষ। খাবার ও কোন ধরণের সমস্যা আছে কিনা তা নিয়ে বনবিভাগের কোন মাথাব্যথা নেই বল্লেই চলে।
মাজারে আসা ঢাকার মুন্সিগঞ্জের আদনান বলেন, অন্য সময় এখানে আসলে ভাল লাগতো অনেক ভক্তরা আসতো কিন্তু আজ একদম নিরব লাগছে। কেউ নেই শুধু আমি আর এখানে থাকা বানর, আমি এক কুড়ি কলা নিয়ে আসছিলাম ভাই এক মিনিট ও লাগেনি শেষ হতে, বের হয়ে যাওয়ার সময় আমার ব্যাগে যাপ্টি মারে বানর, শুনেছি টানা অবরোধ-হরতালের কারণে মানুষ না আসায় এরা ক্ষুর্ধাত হয়ে রয়েছে তাই এমন করছে, অন্য সময় তো এমন করেনি, খুব ভয় পাচ্ছি।
মাজারের সামনে থাকা মিম ষ্টোরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সেলিম আহমদ জানান, স্বাভািিবক অবস্থায় প্রতিদিন ৩/৪ হাজার টাকার বিক্রি হত কিন্তু এখন প্রায় একমাস ধরে দিনে কোন মতে হাজার টাকার বিক্রি হচ্ছেনা। দোকান ভাড়া কর্মচারীর বেতনই দিতে পারব না। ব্যবসা ছেড়ে অন্য কিছু করার চিন্তা করছি।
মাজারে পাশের বাসার এক মহিলা রোকেয়া বেগম জানান, খাবার না পাওয়ায় বানর আমাদের বাসা বাড়িতে গিয়ে কাপড়, খাবার সামগ্রী নিয়ে আসে, রাস্তায় ব্যাগ হাতে থাকলে দল ভেদে আক্রমন করে।
মাজারের খাদিম মো: মুহিত হাসান জানান, টানা অবরোধ-হরতালের কারণে মাজার ভক্তরা আগের মত না আসায় বানরা ঠিক মত খাবার পাচ্ছেনা, তাই আমরা প্রতিদিন দুই কেজি চাউলের ভাত পাক করে দেই তাও তাদের ঠিক মত হয়না। এগুলো দেখা শোনার দায়িত্ব বনবিভাগের কিন্তু তারা বছরে একবার মাত্র স্বাস্থ পরীক্ষা করে দায়িত্বের খাতা পুরণ করে। তাই আমরা এলাকাবাসি প্রানিদের ভারবাসি তাই দেখাশোনাও করছি।
এব্যাপারে দায়িত্বের কথা শিকার করে সিলেট বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন জানান, এখন আমাদের কাছে কোন প্রকল্প নেই তাই এলাকাবাসিকে বলব প্রনির প্রতি ভালবাসার দৃষ্টি দেওয়ার জন্য। ধ্বংস না করার জন্য অনুরোধ ও করেন এই বন কর্মকর্তা।
এই স্থানে পূর্ব থেকেই জঙ্গল ছিল, স্বাধীনতার পর অন্যান্য প্রানীরা চলে গেলেও বানর এলাকার মানুষের ভালবাসা পেয়ে এখানেই রয়ে যায়। ১৩৫৪ ইংরেজীতে এই অঞ্চেলের মুরুব্বিরা সৈয়দ চাষনী পীরের আর্বিভাবের নির্দশন পেয়ে এখানে মাজার স্থাপন করেন। সৈয়দ চাষনী পীর (র:) হযরত শাহ জালাল ইয়ামনী (র:)‘র মামার নির্দেশে এক মুষ্টি মাটি নিয়ে কোন মাটির সাথে এই মাটির মিল রয়েছে তার সন্ধানে বের হলে পথে হিন্দুস্থানে দেখা হয় সৈয়দ চাষনী পীরের সাথে তিনি ছিলেন ভূ-তথ্যবিদ (মৃত্তিকা বিজ্ঞানী) হযরত শাহ জালাল ইয়ামনী (র:)‘র মামার দেওয়া মাটি পরীক্ষা করে সৈয়দ চাষনী পীর সিলেটের মাটির সাথে এই মাটির মিল রয়েছে বলে তথ্য পান। এবং শাহ জালাল ইয়ামনী (র:) কে তা অবহিত করলে, তিনি সিলেটে আসেন ও সৈয়দ চাষনী পীর কে তার সফর সঙ্গী করে নিয়ে আসেন। তবে এখানেই সৈয়দ চাষনী পীরের আর্বিভাবের নির্দশন ছিল কিনা তার কোন নির্দিষ্ট তথ্য-প্রমান আজও মিলেনি বলে স্থানীয়রা জানান।