সংঘর্ষের ঘটনায় থমথমে বিয়ানীবাজার, অঘোষিত অবরোধ : মামলা নিয়ে রাজনীতি
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ বিয়ানীবাজারে সিএনজি স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রয়নে নেয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ ও শ্রমিকলীগ এর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও গুলিতে নিহত কিশোর রাজুর লাশ দাফন করা হয়েছে। মৃত্যুর খবর শুনার পর থেকে পরিবারে চলছে শোকের মাতম। মা সহ পরিবারের সকল সদস্য বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। কান্নায় ভারি হয়ে উঠছে এলাকার আকাশ বাতাস।
এদিকে রাজু হত্যাকান্ডকে নিয়ে বিয়ানীবাজারে শুরু হয়েছে রাজনীতি। সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া দু’পক্ষই রাজুকে দাবার চাল হিসেবে ব্যবহার করে ফায়দা লুটার পায়তারা করছে। ওসি বলেছেন, রাজু হত্যার বিষয়ে দু’পক্ষই বাদী হয়ে মামলা করতে চাচ্ছে। একেকজন একেক ধরণের আসামী দিয়ে এজাহার দিচ্ছে। তবে পুলিশ বিষয়টি গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তবে শনিবার রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মামলা দায়ের হয়নি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নিহত রাজুর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। রাতে এজাহার পেলেই মামলা হিসেবে তা রেকর্ড করা হবে বলে জানিয়েছেন ওসি জুবের আহমদ।
অপরদিকে শনিবার সকাল থেকে বিয়ানীবাজারে শুরু হয়েছে অঘোষিত শ্রমিক ধর্মঘট। সিএনজি অটোরিক্সা শ্রমিকেরা উত্তর বাজারে অবস্থান নিয়ে এবং ট্রাক চালক শ্রমিকেরা দক্ষিণ বিয়ানীবাজারে অবস্থান নিয়ে অবরোধ পালন করেছে। সকাল থেকে সিএনজি অটোরিক্সা চলাচল না করায় লোকজনকে অবর্ননীয় দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। অনেকে দুর দুরান্ত থেকে পায়ে হেঁটে শহরে এসে কিংবা শহর থেকে দুরে গিয়ে তাদের কার্য সম্পাদন করতে হয়েছে। ঘটনার পর থেকে বিয়ানীবাজারে বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা। যদিও কোন ধরণের সংঘর্ষ কিংবা সংঘাত হয়নি। তারপরও ব্যবসায়ী পথচারীদের মধ্যে লক্ষ করা গেছে আতংকের ছাঁপ।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বিয়ানীবাজারের দক্ষিন বাজারে সিএনজি স্ট্যান্ডের পরিচালনায় আধিপত্য নিয়ে সাবেক ছাত্রলীগের আহবায়ক জামাল হোসেনের সাথে শ্রমিকলীগ নেতা জাবিদ আহমদের বিরোধ চলে আসছিল। সমপ্রতি জামাল হোসেন নিজেকে সভাপতি করে জেলা থেকে কমিটি নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে জাবিদ আহমদ কমিটি বাতিল করান। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে চলে যায়। বিষয়টি নিয়ে কয়েক দফা আপোশের চেষ্ঠাও করা হয়। কিন্তু তাতে কোন কাজ না হলে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করতে থাকে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় অটোরিক্সা ট্রেড ইউনিয়ন (২০৯৭) এর ম্যানেজার আলমের সাথে অটোরিক্সা শ্রমিক ফয়ছল আহমদের বাকবিতন্ডা শুরু হয়। এ ঘটনার জের ধরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফয়ছল আহমদের চাচা ট্রাক চালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাবুল আহমদের সাথে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক জামাল হোসেনের আরেক দফা বাকবিতন্ডা ঘটে। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত জামাল হোসেন তার সহযোগি ১০/১২ জন সশস্ত্র অবস্থায় রাত ১১টার দিকে পুলিশ সাথে নিয়ে সাবুল আহমদের মোবাইলের দোকানে হামলা চালায়। এ সময় উভয় পৰের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে গেলে জামাল ও তার সহযোগিদের বন্দুকের গুলি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হোটেল কর্মচারী রাজু আহমদ ঘটনাস্থলে মারা যায়। তার শরীরে ৩০টি গুলির স্পিন্টার লাগে। সে দক্ষিন বাজারের একটি হোটেলের কর্মচারী। নিহত রাজু পৌরসভার কসবা গ্রামের সুবল মিয়ার পুত্র। এ সময় হামলায় গুরুতর আহত হোটেল ব্যবসায়ী মুল্লাপুর এলাকার আবুল কালাম (৪৫), ট্রাক চালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাবুল আহমদ (৩০), সুপাতলা গ্রামের রিপন আহমদ (২৩), তারেক আহমদ (২৪) নুর্বল হক (৫০), ফয়ছল আহমদ (২৫), বিমল চন্দকে (৩৪) প্রথমে বিয়ানীবাজার উপজেলা হাসপাতাল এবং পরে আশংকাজনক অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহতদের সবার মাথা ও শরীরে ধারালো অস্ত্র ও গুলির আঘাত রয়েছে।
অটোরিক্সা শ্রমিক নেতারা বলেন, জামাল হোসেন প্রয়াত অটোরিক্সা শ্রমিক সমিতির সভাপতি শামীম আহমদের ছোট ভাই। শামীম মারা যাওয়ার পর অটোরিক্সা স্ট্যান্ডের (২০৯৭) সভাপতি হিসেবে জামালের নাম ঘোষনা করে জেলা কমিটি। পরে এর প্রতিবাদ করেন সহ-সভাপতি জাবিদ আহমদ। এরই কারণে কমিটির অনুমোদন স্থগিত করে জেলা কমিটি। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে বিরোধ চলে আসছে। যার ধারাবাহিকতায় এ হামলা, সংঘর্ষ ও খুনের ঘটনা ঘটে।
এদিকে জামাল হোসেন অজ্ঞাত স্থান থেকে মোবাইলে জানান, তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কয়েকজন শ্রমিক নামধারী সন্ত্রাসী ঘটনার রাতে হামলা করে। এ ঘটনার পর তিনি পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস’ল পরিদর্শন করে। পুলিশ সরেজমিন পরিদর্শন শেষে একটু দুরে গেলেই আবারো হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রতিপক্ষের গুলিতে রাজু নিহত হয়েছে বলে জানান জামাল।
ওসি জুবের আহমদ জানিয়েছেন, পরিস্থিতি বতর্মানে শান্ত রয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত শাহজাহানকে আটক করা হয়েছে। থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। সম্ভাব্য সকল আসামী আটকের জন্য বিভিন্ন বাসা বাড়ীতে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করছে। পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা বিষয়টি সম্পর্কে খোজ খবর রাখছেন উল্লেখ করে ওসি বলেন, আইন শৃঙ্খলা পরিসস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।