কোকোর জানাজায় প্রবাসীদের ঢল : জাহিয়ার কান্নায় কাঁদলেন প্রবাসীরাও
মালয়েশিয়া থেকে আহমেদুল কবিরঃ বিএনপির চেয়ারর্পাসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মরদেহ আগামীকাল মঙ্গলবার দেশে আনা হবে। বর্তমানে তার মরদেহ রাখা হয়েছে মালয়েশিয়ার মালায়া ন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি হাসপাতালের মর চোয়ারিতে। আজ মালয়েশিয়ার সময় সকাল সাড়ে ১০ টায় হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় তাঁর দ্বিতীয় জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল রোববার মালয়েশিয়ার উইজমা সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে এমন তথ্য জানিয়েছেন মালয়েশিয়ায় বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আগামীকাল মঙ্গলবার মালয়েশিয়ান সময় সকাল সাড়ে ৯টায় মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স এমএইচ-১০২ ফ্লাইটে আরাফাত রহমান কোকোর মরদেহ নিয়ে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা হবে। ওই দিন বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ১১টায় তাঁর মরদেহ দেশে এসে পৌছবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, মালয়েশিয়া বিএনপির সদস্য সচিব মোশারফ হোসেন, বিএনপি নেতা মাহবুবুল আলম শাহ, তালহা মাহমুদ, কোয়ালালামপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি ওয়ালি উল্লাহ জাহিদ, শামিম আহমদ, যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন সাগর, সেচ্চাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক বশির আলম, শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজু ইসলাম আলী, হানিফ প্রমুখ। এর আগে গতকাল বাদ যোহর মালয়েশিয়ার জাতীয় মসজিদে (মসজিদ নিগারা) বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর নামাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশী জানাজার নামাজে অংশ নেয়। জানাজার নামাজকে কেন্দ্র করে স্থানীয় সময় ১২ টার পর থেকে মানুষের ঢল নামতে থাকে রাজধানী কুয়ালালামপুরের জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গনে। এছাড়া জানাজায় অংশ নিতে ঢাকা থেকে বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী আসেন। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে ছিলেন, মোসাদ্দেক হোসেন ফালু, নুরুল ইসলাম মনি, আলি আসগর লবি, মুজিবুর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামিম ইস্কান্দার। গতকাল রোববার জানাজা শেষে তার মরদেহ কুয়ালালামপুর মালয় ইউনিভার্সিটি সেন্টারে হিমঘরে রাখা হয়েছে। আগামিকাল মঙ্গলবার মরদেহ দেশে নিয়ে যাবেন খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দর। কেন্দ্রীয় মসজিদ নিগারায় জানাজা শেষে কুয়ালালামপুর মালয় ইউনিভার্সিটি সেন্টারের হিমঘরে রাখা হয়েছে আরাফাত রহমান কোকোর মরদেহ। মালয়েশিয়ার প্রায় সব জেলা থেকে বিএনপির নেতাকর্মী ও মালয়েশিয়ায় বসবাসরত হাজার হাজার প্রবাসীরা আরাফাত রহমান কোকোর জানাজার নামাজে অংশ গ্রহণ ও তাকে এক নজর দেখার জন্য এসেছিলেন মসজিদ নিগারায়। মালয়েশিয়ার জহুরবারু মালাক্কা পেনাং, কোয়ানতান এর মত জেলা থেকেও প্রবাসীরা আসছেন। যেখান থেকে শুধু বিমানেই আসা যায় তারপরও তারা আসছেন এবং তার আত্মার শান্তি কামনায় তারা এসেছিলেন।
আরাফাত রহমান কোকোর মরদেহ মালয়েশিয়ার জাতীয় মসজিদ চত্তরে নিয়ে আসা হলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। তাঁর ছোট মেয়ে জাহিয়া রহমানের বুকফাটা কান্না উপস্থিত সকলকেই আবেগতাড়িত করে। এসময় অনেকেই জাহিয়ার সাথে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। কোনো কিছুতেই জাহিয়ার কান্না থামানো যাচ্ছিলো না। বাবার কফিনে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে আরাফাত রহমান কোকো’র ছোট্ট মেয়ে জহিয়া। তাদের কান্নায় মসজিদ নিগারার আশ পাশ ভারি হয়ে উঠে। ছোট্ট মেয়ের কান্না দেখে জড়ো হওয়া প্রবাসীরাও কান্না থামাতে পারেননি। সবার চোখে পানি এসে যায়। মেয়ের কান্না থামাতে এগিয়ে আসেন মোসাদ্দেক হোসেন ফালু। কোকোর স্ত্রী শারমিলী রহমান, বড় মেয়ে জাফিয়া রহমানও মসজিদ নিগারায় এসেছিলেন।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ওই বছর ৩ সপ্টেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঢাকা সেনানিবাসের বাড়ি থেকে আরাফাত রহমান কোকোকে আটক করা হয়। ২০০৭ সালের ১৭ই জুলাই কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে স্ত্রী সৈয়দ শর্মিলী রহমান সিঁথি, দুই মেয়ে জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমানকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড যান কোকো। এরপর থাইল্যান্ড থেকে মালয়েশিয়ায় চলে যান তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়ার একটি ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে থাকতেন। অসুস্থ থাকায় তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন।