স্ত্রীর পরকীয়ায় এসআই ‘খুন’
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ দেশের অস্থির রাজনীতির কারণেই দিনের পর দিন থাকতে হয়েছে বাইরে। সময় দেয়া হয়ে ওঠেনি ঘরের স্ত্রীকে। এ কারণে দিন দিন দাম্পত্য জীবনে দেখা দিয়েছে ফাটল। আর এ সুযোগেই স্ত্রীর মন দখল করে নেয় নিকটাত্মীয় এক যুবক। অবশেষে সেই পরকীয়া প্রেমই কাল হয়ে দেখা দেয় এসআই আকরাম হোসেনের জীবনে।
স্ত্রী বনানী বিনতে বশিরের পরকীয়ার জের ধরেই ‘খুন’ হন পুলিশ কর্মকর্তা আকরাম। পরকীয়া প্রেমিকের সহযোগিতায় স্বামীকে লোকজন দিয়ে কুপিয়ে মারত্মক জখম করেন বনানী। গত ১৩ জানুয়ারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এসআই একরামের মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ পরিবারের।
এ ঘটনায় নিহতের বোন জান্নাত আরা পারভীন রিনি বাদী হয়ে গত ২০ জানুয়ারি ঝিনাইদহ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামি করা হয়েছে একরামের স্ত্রী , তার পরকীয়া প্রেমিক পাবনার ঈশ্বরদী থানার কাচারীপাড়া জামতলার এনামুল হকের ছেলে সাদিমুল হক মুন, বনানীর বাবা বশির উদ্দিন বাদশা ও মা সেলিনা খাতুন।
আদালতের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন।
‘খুন’ হওয়া পুলিশ কর্মকর্তা আকরাম হোসেন ঝিনাইদহ শহরতলী হামদহ এলাকার আবুল হোসেন ছেলে। তার স্ত্রী বনানী বিনতে বশির একই উপজেলার ভগবান নগর গ্রামে বশির উদ্দিনের মেয়ে।
মামলার এজাহার উল্লেখ করা হয়, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ভগবান নগর গ্রামে বশির উদ্দিনের মেয়ে বনানী বিনতে বশিরের সঙ্গে ২০০৬ সালে ১৩ জানুয়ারি বিয়ে হয় পুলিশ অফিসার আকরামের। বিয়ের দুই বছর পর বনানী একটি মেয়ের জন্ম হয়। এর পর থেকে আকরাম চাকরির কারণে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করেন। মেয়ে হওয়ার পর থেকেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হতে থাকে। এক একপর্যায়ে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দিনের অধিকাংশ সময় বাড়ির বাইরে থাকার কারণে স্ত্রী বনানীর নিকটআত্মীয় সাদিমুল হক মুনের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন।
বিষয়টি জানাজানি হলে চাপের মুখে পড়ে বনানী। গোপনে মোবাইলে কথা বলা, স্বামীর অবর্তমানে লুকিয়ে প্রেমিকের সাথে দেখা করতেন। এক পর্যায়ে স্বামীকে অবহেলা ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করতে থাকে। বনানীর পরিবারও এ পরকীয়ায় সহযোগিতা করে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
কিন্তু আকরাম একমাত্র শিশু কন্যা আফরিনের কথা চিন্তা করে নিরবে সহ্য করতে থাকেন। সংসারে চরম অশান্তি শুরু হলে এসআই আকরাম স্ত্রীকে খুশি করতে ঢাকার মগবাজারে একটি বাড়ি কিনে দেন। বিমানবন্দরের এসবি শাখায় চাকরির সুবাদে সেখানে বসবাস করতে থাকেন।
পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর রাত ১১ টার দিকে মোটর সাইকেলে যমুনা সেতু হয়ে বাড়ি ফেরার পথে শৈলকুপার বড়দাহ নামক স্থানে পৌঁছালে স্ত্রী বনানী ও পরকীয়া প্রেমিক মুন ষড়যন্ত্র করে লোকজন নিয়ে তাকে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে। পরে সড়ক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে।
পরে স্থানীয়রা তাকে মারাত্মক জখম অবস্থায় উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসতাপালে রেফার করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৩ জানুয়ারি তার মৃত্যু হলে স্ত্রী বনানী ময়নাতদন্ত ছাড়াই স্বামীর লাশ এলাকায় নিয়ে আসে এবং দাফনের চেষ্টা করে।
তার মাথায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন ছিল বলে ঝিনাইদহ ও ঢাকার চিকিৎসরা জানিয়েছেন। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে স্ত্রী বনানী লাশ ফেলে রেখে মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যায় এবং এখন পর্যন্ত গা ঢাকা দিয়ে আছেন।
এ ব্যাপারে বনানী বিনতে বশিরের সঙ্গে ঢাকার শাহবাগ থানা থেকে লাশ হস্তান্তরের আবেদনপত্রে থাকা মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।