সরকার বর্তমানে খাদে ও ফাঁদে পড়েছে : কর্নেল অলি
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপির) সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম বলেছেন, সরকার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দেশের সর্ববৃহৎ দল বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলিকে নির্বাচনের বাইরে রেখে বর্তমানে তারা খাদে ও ফাঁদে পড়েছে। বিতর্কীত নির্বাচনের কারনে বর্তমান বিশ্বয়ায়নের যুগে সরকার প্রায় একঘরে হয়ে পড়েছে। বর্তমান সরকার গণতন্ত্র হত্যাকারী হিসেবে ইতিহাসে চিহিƒত হয়ে থাকবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসার রাজনীতি শিকড় গেড়ে বসেছে। এ অবস্থার জন্য দায়ী সাবেক প্রধান বিচারপতি। তার বিতর্কীত রায়ের মাধ্যমে দেশে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দুর্নীতিবাজেরা বেপরোয়া হয়ে পড়েছে এবং নতুন নতুন মৌলবাদী গোষ্ঠী জš§ নিচ্ছে। এই অবস্থা কারো জন্য শুভকর নয়।
কর্নেল (অব.) অলি আহমদ আজ তার প্রেস সেক্রেটারি সালাহ উদ্দিন রাজ্জাক স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ২০ দলীয় ঐক্যজোটের নেতা বেগম খালেদা জিয়া তার গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ। পুলিশ পিপার স্প্রে করে তাকে শয্যাশায়ী করে রেখেছে। এতে সাধারণ মানুষ ক্ষিপ্ত। ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরাও রাগান্বিত। ফলে আন্দোলন প্রতিদিন তীব্র থেকে তীব্রতর আকার ধারন করছে।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ২০ দলীয় ঐক্যজোটের নেতা বলছেন, সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ এবং হরতাল পাশাপাশি অব্যাহত থাকবে। কোনো অবস্থাতেই এই কর্মসূচি হতে বিরত হব না। এমন পরিস্থিতিতে সরকার কি আরো ধ্বংসের জন্য বসে থাকবে? হয়তো এমন সময় আসবে তখন না থাকবে রাধা, না থাকবে বাসুরি। বসে বসে মুড়ালি না বাজিয়ে বর্তমানের পরিস্থিতি হতে উত্তরনের জন্য সরকারকেই অগ্রনী ভূমিকা পালন করতে হবে। সরকাকে বুঝতে হবে প্রতিদিন দেশের সর্বত্র সাধারণ মানুষ এবং ২০ দলীয় ঐক্যজোটের নেতাকর্মীদের উৎসাহ বিদ্ধি পাচ্ছে এবং সরকার বিরোধী আন্দোলনে তাদের অংশ গ্রহণ লক্ষনীয়। গ্রেফতার করে বা পুলিশ দিয়ে বিরোধী দলের কমসূচি দমন করা সম্ভব নয়। বেগম জিয়াও আন্দোলনের জন্য সর্বতো ভাবে প্রস্তুতি নিয়ে, তার গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে সুদৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন।
হরতাল বন্ধে আইন চেয়ে ব্যবসায়ীদের করা সংবাদ সম্মেলন প্রসঙ্গে কর্নেল অলি বলেন, ইদানিং কিছু রাজনীতিবীদ ও বিতর্কীত ব্যবসায়ী সমস্যা সমাধানের কথা না বলে হরতাল অবরোধ বন্ধ করার জন্য আইন তৈরি করার কথা বলছেন। তাদের অবগতির জন্য বলতে চাই সমস্যা সমাধান না করে আইন প্রনয়োন করে কোনো লাভ হবেনা।
আওয়ামী লীগের সংবিধান রক্ষা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলন, ১৯৬৯-৭০ সালের শেখ মুজিবুর রহমানের অসহযোগ আন্দোলন, ১৯৯০ সালের স্বৈরচার বিরোধী আন্দোলন, ১৯৯৬ সালের বিএনপিকে ক্ষমতাচ্যুত করার আন্দোলন কোনটাই সংবিধান অনুযায়ী হয়নি। ১৯৯৬ সালের পূর্ববর্তী আন্দোলনগুলি দেশের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য হয়েছিলো। ১৯৮২ সালে এরশাদ সংবিধান মেনে সামরিক আইন জারি করেনি। ১৯৭৫ সালে খন্দকার মোশতাক সংবিধান মেনে আইন জারি করেনি। তাই খালেদা জিয়া যে অবরোধের ডাক দিয়েছেন তা ক্ষমতা দখলের জন্য নয় তা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও জনগনের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য।
কর্নেল অলি বলেন, আমাদের সকলকে যখন, একদিন এই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যেতে হবে, তাহলে কেন আমরা ক্ষমতার মোহ ত্যাগ করতে পারছিনা। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত এবং চেষ্টা করতে হবে, যেন ভবিষ্যতে যোগ্য, সৎ এবং ন্যায় পরায়ন ব্যক্তিরাই দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পান। তাহলেই সকলের মুক্তি আসবে। হানাহানি, প্রতিশোধ এবং প্রতিহিংসার রাজনীতি বন্ধ হবে। এই অচলাবস্থা থেকে বের হওয়ার এক মাত্র পন্থা হচ্ছে, উভয় নেতা ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করে, সরকারকে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য পন্থায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। অন্যাথায় যা হওয়ার তাই হবে।