সিলেট ও সুনামগঞ্জে তারেকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ সিলেটে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সিলেট ও সুনামগঞ্জে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা দায়ের করেছ ছাত্রলীগ। সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি রাহাত তরফদার বাদি হয়ে রবিবার মহানগর হাকিম ১ম আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। আদালতের বিচারক শাহেদুল করিম মামলাটি গ্রহণ করে সিলেট কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশকে রাষ্ট্রের অনুমতি নিয়ে ৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘রাজাকার’ বলে আপত্তিকর মন্তব্য করায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছে ছাত্রলীগ। রবিবার বেলা দেড়টায় সুনামগঞ্জের আমল গ্রহণকারী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শ্যামকান্তি সিনহার আদালতে সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ফজলে রাব্বী স্মরণ বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
বাদী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন, অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান, অ্যাডভোকেট নানু মিয়া, অ্যাডভোকেট আজাদুল ইসলাম রতন প্রমুখ।
মামলার এজহার সূত্রে জানা যায়- গত ১৫ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যের ইস্ট লন্ডনস্থ অ্যাট্রিয়াম ব্যাংকোয়েট হলে যুক্তরাজ্য বিএনপির আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি তারেক রহমান স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের সৃষ্টির বিরোধিতা ও তার দলীয় লোকজনকে উস্কানী দিয়ে বক্তব্য দেন।
তিনি বলেন- ‘একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষনার ঠিক আগে ইয়াহইয়া খানকে প্রেসিডেন্ট মেনে তার সঙ্গে সমঝোতা করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। ৭ মার্চ তিনি যদি সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসারদের নিয়ে যুদ্ধ শুরু করতেন তাহলে যে সামান্য সংখ্যক পাকিস্তানী সৈন্য ছিল তাদেরকে সহজেই পরাজিত করা যেত। প্রাণহানী ও অর্থনৈতিক ক্ষতি অনেকটা কম হতো। এজন্য আমরা এককভাবে দায়ি করতে পারি শেখ মুজিবকে। আমরা তাকে যেভাবে রাজাকার বলেছি, আমরা তথ্য প্রমাণ দিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করে তাকে বলেছি রাজাকার। আমরা সত্য ঘটনাবলীর ভিত্তিতে বলেছি তিনি ছিলেন পাকবন্ধু। এরপর তারেক বলেন- আজকে যদি আমরা বলি এই যে, লক্ষ লক্ষ মানুষ একাত্তর সনে স্বাধীনতা যুদ্ধে মারা গেল, এই যে হাজার হাজার মা বোনের সমভ্রমহানী হলো এর জন্য এককভাবে কী শেখ মুজিবকে দায়ি করা যায় না? তাহলে এতো মানুষের হত্যাকারীকে একবাক্যে কি বলা উচিত। যে মানুষ মারে তাকে কী বলা যায়? তখন উপস্থিত বিএনপি নেতাকর্মীরা চিৎকার করে বলে রাজাকার।’
এজহারে আরও উল্লেখ করা হয়- ‘তারেক তার বক্তব্যে বলেন- আওয়ামী লীগ দাবি করে তারা মুক্তিযুদ্ধের দল। তবে শেখ মুজিব কেন দলটি বিলুপ্ত করে দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিরও দাবি করেন তারেক। শেখ হাসিনা একের পর এক অপকর্ম করে চলছেন। যখন বিপদে পড়েন তখনই জনগণকে বিভ্রান্ত করতে মুক্তিযুদ্ধের দোহাই দেন।’
মামলার এজহারে বলা হয়- ‘তারেকের এই বক্তব্য বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ পায়। ওইসব পত্রিকা সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের কার্যালয়ে পৌঁছলে মামলার বাদি ও তার দলীয় মতাদর্শের লোকজন সংবাদটি পাঠ করিয়া অনুধাবন করেন যে- বাংলাদেশের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করতে পারে এমন বিশেষকে প্রভাবিত করার অভিপ্রায়ে এবং প্রভাবিত করতে পারে জেনে শুনে তারেক রহমান এমন উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদের স্থপতি, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে ‘রাজাকার’ ও ‘গণহত্যায়’ জড়িত মর্মে বক্তব্য দিয়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ সৃষ্টির নিন্দা ও সার্বভৌমত্ব বিলোপ সাধনের কুমানসে তীব্র সমালোচনাপূর্বক ও ষড়যন্ত্রমূলক এমন বক্তব্য দিয়েছেন তারেক। এর মাধ্যমে তিনি ১৮৬০ সালের দন্ডবিধির ১২৩ এ ধারার শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেন।’
মামলার বাদি পক্ষের আইনজীবী ও সিলেট জেলা জজ কোর্টের এডিশনাল পিপি শামসুল ইসলাম বলেন- তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাটি আদালত গ্রহণ করে রাষ্ট্রের অনমুতি সাপেক্ষে ৫ জানুয়ারির মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার বাদিপক্ষে আদালতে আরও উপস্থিত ছিলেন এডভোকেট মইনুল ইসলাম, এডভোকেট নিজাম উদ্দিন, মো. লালা, এডভোকেট জসিম উদ্দিন, এডভোকেট প্রসেন কান্তি চক্রবর্তী, এডভোকেট রণজিত সরকার, এডভোকেট আজমল আলী, এডভোকেট আলা উদ্দিন।