‘এক নিষ্পাপ চোখের গল্প’
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ আলোকিত মানুষ গড়ার স্বপ্নপুরুষ স্যার আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ৭৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানের মঞ্চ আলোকিত করে বসেছিলেন তিনি। বক্তৃতা নয়, যেন কথার জাদুতে মুগ্ধ করেন সবাইকে। কলেজের প্রাক্তন শিক্ষক ছিলেন তিনি। বলেছেন সে কথাও। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেছেন, সিলেট মহিলা কলেজে চাকরী পাওয়া ছিলো এক নিষ্পাপ চোখের গল্প। তিনি বলেন, সাতান্ন থেকে একষট্টির দিনগুলো মনে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ ছায়ায় কাটছে আমার সুন্দর দিনগুলো। মনে আছে শীতের তীক্ষ হাওয়ায় কার্জন হলের সামনে বিদেশি গাছগুলোর চিরল চিরল পাতাগুলো কেমনভাবে এদিক ওদিক নড়াচড়া করতে থাকত আর আমার বুকের ভেতরটা বিষন্ন বেদনায় কনকন করে উঠত।
এম.এ পরীক্ষার পর মুন্সীগঞ্জ কলেজে চার মাসের মেয়াদে একটা খন্ডকালীন চাকরি জুটল। কাজেই হন্যে হয়ে তড়িঘড়ি করে একটা চাকরি খুঁজে বেড়াবার দায় এসে গেল। হঠাৎ আতাউর এমনভাবে ধরল আর বলল সিলেট মহিলা কলেজে একটি প্রভাষকের পদ খালি হয়েছে। ওর বোন চাকরি ছেড়ে চলে এসেছে সেখান থেকে। তাকে জানালাম চেষ্টা করে দেখতে পারি। পলকেই চোখের ওপর এক হাজার রঙ্গিন বেলুনের ওড়াউড়ি। রঙিন কমলার দেশ সিলেট। তার ওপর মহিলা কলেজের রক্তিম সম্ভাবনা।
রাতের ট্রেনেই সিলেটে পৌছে পরদিন দেখা করলাম অধ্যকার সঙ্গে। চাকরির জন্য সব যোগ্যতায় টিকে গেলাম, কিন্তু গোল বাধাল ভিন্ন একটা বিষয়। কিছু দিন আগে ওই কলেজেরই একজন তরুন অধ্যাপক সহৃদয়-গোছের প্রস্তাব করেছিলেন ওই কলেজেরই একটি মেয়ের কাছে। সে-সময়কার রক্ষণশীল সিলেট ব্যাপারটার খুবই নির্দয়ভাবে নিয়েছিল। তাকে বিদেয় দেয়া হয় কলেজ থেকে। ওই ঘটনায় অপাতত কোনো পুরুষ-শিক্ষককে আর কলেজে নেওয়া হবেনা। তবু অদ্ভুতভাবে আমার চাকরিটা হয়ে গেল।
কলেজের অধ্যকার ঘরে প্রায় ঘন্টাখানেক ইন্টারভিল চলল। কলেজের বেশ কজন বর্ষীয়ান অধ্যাপিকা যতদিক থেকে সম্ভব আমাকে যাচিয়ে, খুঁটিয়ে, বাজিয়ে কনে দেখার মত করে দেখলেন। তারপর স্টাফ রুমে বসেও আমি টের পাচ্ছিলাম। আধঘন্টা পরে অধ্যক্ষার অফিসে আবার ডাক পড়ল। হ্যা চাকরি হয়েছে। কিন্তু কেন হল চাকরিটা? এমন অসম্ভব কী করে সম্ভব হল। কিছু দিন পরে ওই বর্ষীয়ান অধ্যাপিকাদের একজন জানালেন নিষ্পাপ চোখের কারণেই আমার চাকরিটি হয়েছিল।