মোবারকের মানবতাবিরোধী মামলার রায় কাল
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ মো. মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় আগামীকাল সোমবার ঘোষণা করবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। মোবারক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মোগরা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল আজ রোববার এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনাল-১ গত ২ জুন মামলাটির কার্যক্রম শেষে রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন।
গত বছরের ২৩ এপ্রিল হত্যা, অপহরণ, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে মোবারকের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ গঠন করেন এই ট্রাইব্যুনাল।
মোবারকের বিরুদ্ধে ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, অপহরণ, আটক ও নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী ৪ ধরনের অপরাধে ৫টি অভিযোগ আনা হয়েছে। গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন।
গত বছর ১২ মার্চ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। গত বছরের ১৬ মে সূচনা বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে মামলার বিচারকাজ শুরু হয়।
অভিযোগ গঠনের আদেশ অনুসারে, মুক্তিযুদ্ধকালে মোবারক জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি জামায়াতের ইউনিয়ন পর্যায়ের সদস্য (রুকন) হন। একাত্তরে তিনি স্থানীয় রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন।
পাঁচ অভিযোগ
মোবারকের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ হলো, একাত্তরের ২২ আগস্ট মোবারক ও অন্য রাজাকারেরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থানার টানমান্দাইল গ্রামের ২৬ জন ও জাঙ্গাইল গ্রামের সাতজনকে বাছাই করে তেরোঝুড়ি হাজতখানায় নিয়ে যান। ২৩ আগস্ট পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারেরা ওই ৩৩ জনকে দিয়ে গঙ্গাসাগর দীঘির পশ্চিম পাড়ে গুলি করে হত্যা করে মাটিচাপা দেয়।
দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধকালে মোবারক ও অন্য স্বাধীনতাবিরোধীরা মিলে ‘আনন্দময়ী কালীবাড়ী’ নামের একটি হিন্দুমন্দিরের মূর্তি ভাঙচুর ও মালামাল লুটের পর এটি দখল করেন। পরে মন্দিরটির নাম রাখেন ‘রাজাকার মঞ্জিল’। ২৪ অক্টোবর মোবারক শিমরাইল গ্রামের আশুরঞ্জনকে অপহরণ করে আহত অবস্থায় চার দিন রাজাকার মঞ্জিলে আটকে রাখেন এবং ২৮ অক্টোবর তাঁকে কুড়লিয়া খালের পাড়ে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেন।
তৃতীয় অভিযোগ অনুসারে, একাত্তরের ১১ নভেম্বর রাত আটটা-নয়টার দিকে মোবারক তাঁর সশস্ত্র রাজাকার সহযোগীদের নিয়ে ছাতিয়ান গ্রামের আবদুল খালেককে অপহরণ করে সুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যান ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। ওই রাতেই খালেককে তিতাস নদীর পশ্চিম পাড়ে বাকাইল ঘাটে নিয়ে গুলি ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়।
চতুর্থ অভিযোগ হলো, একাত্তরের ২৪-২৫ নভেম্বর বেলা দুইটা-আড়াইটার দিকে মোবারকের নেতৃত্বে রাজাকারের একটি দল খড়মপুর গ্রামের খাদেম হোসেন খানকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার স্টেশন রোড থেকে অপহরণ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে স্থাপিত সেনাক্যাম্পে আটকে রেখে নির্যাতন করে। ৬ ডিসেম্বর অন্য কয়েকজন বন্দীর সঙ্গে তাঁকেও কুড়লিয়া খালের পাড়ে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।
পঞ্চম অভিযোগ অনুসারে, একাত্তরের ২৮-২৯ নভেম্বর রাত ১১টার দিকে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে মোবারক খড়মপুর গ্রামের আবদুল মালেক ও আমিরপাড়া গ্রামের মো. সিরাজকে অপহরণ করেন। ৬ ডিসেম্বর সিরাজকে কুড়লিয়া খালের পাড়ে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে।