‘বুড়ো’দের দিয়ে সিলেট ছাত্রদলের নতুন কমিটি
কমিটি প্রত্যাখান করে নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ
অহী আলম রেজাঃ শেষ পর্যন্ত ‘বুড়ো’দের দিয়ে ঘোষণা করা হলো সিলেট ছাত্রদলের কমিটি। স্থান পেয়েছেন অছাত্র, বিবাহিত ও বিতর্কিতরা। এক যুগ আগেই যাদের ছাত্রত্ব চলে গেছে তারাও স্থান করে নিয়েছেন কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে। কমিটি নিয়ে সন্দিহান ছাত্রদল নেতা কর্মীরা বলছেন- সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে কোন আলাপ না করেই বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য এসব করা হচ্ছে। যদি এ ধরণের কিছু হয় তবে তা প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। কমিটি প্রত্যাখান করে গতকাল রাতে নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ছাত্রদলের বৃহৎ একটি অংশ। মিছিলে বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের নেতাকর্মী অংশ নেন। এমনকি নতুন কমিটিতে স্থান পাওয়া কয়েকজন নেতাও বিক্ষোভে অংশ নেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব এ কমিটি অনুমোদন দেন। দুই কমিটির ৮ পদে নেতাদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক নাজমুল হাসান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সিলেট জেলা ছাত্রদলের ঘোষিত কমিটিতে সভাপতি পদে সাঈদ আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক পদে রাহাত চৌধুরীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
এছাড়া জেলা কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন সিনিয়র সহ সভাপতি আহমেদ চৌধুরী ফয়েজ, সহ সভাপতি চৌধুরী মোহাম্মদ সুহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক এখলাছ মুন্না, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মকসুদ আহমেদ, মিজানুর রহমান নেসার, সহ সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন পান্না।
মহানগর কমিটির সভাপতি পদে নূরুল আলম সিদ্দিকী খালেদ ও সাধারণ সম্পাদক পদে আবু সালেহ মোহাম্মদ লোকমান রয়েছেন।
এছাড়া মহানগর কমিটিতে রয়েছেন- সিনিয়র সহ সভাপতি মাহফুজ করিম জেহিন, সহ সভাপতি ফখরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রকিব, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুমেল শাহ, আজিজ হোসেন ও সহ সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক স্বপন।
নবনির্বাচিত কমিটিকে আগামী একমাসের মধ্যে ৮১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা এবং সম্মেলনের মাধ্যমে অধিনস্থ সকল সাংগঠনিক কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া সম্পন্নেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে কেন্দ্র থেকে।
এ ব্যাপারে তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ মোহাম্মদ লোকমান বলেন, সিলেট ছাত্রদলের জন্য এই ক্রাইসিস মূহুর্তে কমিটি গঠন ছিল খুবই জরুরি। সবাইকে নিয়ে পুর্নাঙ্গ কমিটি গঠন ও দলকে সংগঠিত করা হবে আমাদের প্রথম কাজ।
সর্বশেষ ২০০২ সালের নভেম্বর মাসে এমরান আহমদ চৌধুরীকে সভাপতি ও সাফেক মাহবুবকে সাধারণ সম্পাদক করে সিলেট জেলা ছাত্রদল ও জিয়াউল গণি আরেফিন জিল্লুরকে সভাপতি ও নূরুল আলম সিদ্দিকী খালেদকে সাধারণ সম্পাদক করে মহানগর ছাত্রদলের ৮১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দুই বছর পরই শেষ হয়ে যায় ওই কমিটির মেয়াদ। কিন্তু বারো বছর পার হলেও সিলেট ছাত্রদলের কমিটি হয়নি। ওই কমিটির একাধিক সদস্য যুবদল কিংবা বিএনপি; কেউ প্রবাসে আবার কেউ জড়িয়েছেন পেশার তারে। তবে কেউ কেউ ছিলেন আশায় আবারো কমিটিতে স্থান পাবেন। হয়েছেও তাই।
কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সিলেট ছাত্রদলের কমিটি গঠনের জন্য বারবার উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও ভেস্তে গেছে এ প্রক্রিয়া। দল ক্ষমতায় থাকলেও বিএনপি’র নেতাকর্মীরাও ছিলেন উদাসীন। ক্ষমতা প্রদর্শন করতে গিয়ে একাধিক গ্রুপ উপগ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে ছাত্রদল। বিএনপি’র প্রভাবশালী নেতারাও এক একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দেন সেই সময়। নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে গিয়ে ছাত্রদলকে ব্যবহার করেন ঢাল হিসেবে।
২০১০ সালের আগষ্ট মাসে কমিটি গঠনের জন্য সিলেট ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সে সময়ও ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন নেতাকর্মীরা। দীর্ঘদিন কমিটি না থাকায় চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে যায় ছাত্রদলের।
কমিটি প্রত্যাখান করে ছাত্রদল নেতা রেজাউল করিম নাচন বলেন- ছাত্রদল নেতাকর্মীদের অন্ধকারে রেখে যারা কমিটি ঘোষনার নামে নাটক করছে তাদের প্রতিহত করার জন্য ছাত্রদলের হাজার হাজার নেতাকর্মী প্রস্তুত রয়েছে।