বাংলাদেশে হাসিনার গদি রক্ষা করলেও সোনিয়া ভারতে তার নিজের গদিই হারাল
বিশ্বের সর্বৃহৎ গনতান্ত্রিক দেশ এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ন প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের একমাসব্যাপী ১৬তম লোকসভা নির্বাচনের পর ১৬ মে ফলাফল ঘোষিত হয়ে গেল। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য ভারতের বিগত তিন যুগের নির্বাচনী ইতিহাসকে লন্ড-ভন্ড করে দিয়ে বিশাল গনতন্ত্রের ঐতিহ্যবাহী ও কথিত ধর্মনিরপেক্ষতার ধ্বজাধারী বর্তমানে সোনিয়া গান্ধির নেতৃত্বাধীন ভারতের প্রাচীনতম দল ক্ষমতাসীন কংগ্রেসকে বলতে গেলে দলিত মথিত করে একেবারে মাটির নীচে মিশিযে দিয়ে উগ্র হিন্দু জাতিয়তাবাদী ( মৌলবাদী ) ও সাম্প্রদায়িক শক্তি সর্বৃহৎ বিরোধীদল ভারতীয় জনতা পার্টি ( বিজেপি ) বিশাল ভোটে তথা নিরঙ্কুশ আসনে জয়লাভ করে ১২০ কোটি ভারতবাসীর জন্য এক নতুন ইতিহাস বা রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। লোকসভার ( কেন্দ্রীয় সংসদের ) মোট ৫৪৩ আসনের মধ্যে যে দল বা জোট ২৭২ আসন পাবে সে দলই বা জোটই সরকার গঠন করবে, সে হিসাবকেও ডিঙ্গিয়ে বিজেপি একাই জিতেছে ২৮৪ আসনে এবং তাদের জোট মোট আসন পেয়েছে ৩৩৬ টা, অপরদিকে ক্ষমতাসীন সোনিয়া গান্ধির কংগ্রেস জিতেছে ( ভারতের নির্বাচনী ইতিহাসে কংগ্রেসের লজ্জাষ্কর ও সর্বনিু ফলাফল ) মাত্র ৫৮ আসনে। অর্থাৎ কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধি বাংলাদেশের ৫ জানুয়ারীর কথিত নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে গদি ধরে রাখতে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করে সফল হলেও নিজ দেশের নির্বাচনে তার নিজের গদি রক্ষা করতে বা পুনরায় ক্ষমতায় আসতে ব্যর্থ হয়েছে। যদি পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেস অন্য কোন আঞ্চলিক দলের সাথে জোট বাঁধে তবে সংসদে কংগ্রেসের বিরোধীদল হওয়ার সম্ভাবনাও নাই। তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে লোকসভার মোট ৪২টা আসনের মধ্যে ৩৪টাতেই জয়লাভ করেছে।
ভারতের এই নির্বাচনে কংগ্রেসের এমন শোচনীয় ও লজ্জাষ্কর পরাজয়ের অনেক কারণ অবশ্যই রয়েছে। প্রায় ১০ বছরের অধিক একটানা ক্ষমতায় থেকে সোনিয়া গান্ধির কংগ্রেস দল প্রধানত দেশে সুশাসন দিতে ব্যর্থ হয়েছে, দূর্নীতির ব্যাপক প্রসার ঘটেছে, যার জন্য কোন রাজনৈতিক দলের নেতা না হয়েও অখ্যাত এক ব্যক্তি আন্না হাজারী সোনিয়ার কংগ্রেস সরকারের আমলেই সারা ভারতে কোটি কোটি লোককে সম্পৃক্ত করে দূর্নীতিবিরোধী ঐতিহাসিক আন্দোলন গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল। কংগ্রেস নেতা ও বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং নামকরা অর্থনীতিবিদ হওয়া সত্তেও কংগ্রেস ভারতের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে পারে নাই, জাতীয় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হারও কংগ্রেস শাসনামলে ৭ শতাংশ থেকে কমে ৫ শতাংশের নীচে নেমে এসেছিল, মার্কিন ডলারের বিনিময়ে ভারতীয় রুপির মূল্য মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে, দেশে বিদেশী বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে, ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ হ্রাস পাওয়ায় ভারতে বিশেষ করে শিক্ষিত মধ্যবয়সী বেকারের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমানে বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরদিকে মূখ্যমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি গুজরাটে অর্থনীতির হারও বৃদ্ধি করতে এবং তার রাজ্যে বৈদেশিক বিশেষ করে জাপান, কানাডা ও ইসরাইলের বিনিয়োগ প্রচুর পরিমানে বৃদ্ধি ও আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে, যে কারণে ভারতের জনগন মনে করেছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে পারলে মোদি তার নিজস্ব অর্থনৈতিক নীতি ও উদ্যোগের মাধ্যমে গোটা ভারতের অর্থনীতি ও বৈদেশিক বিনিয়োগের হার বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবে। তাছাড়া কংগ্রেসের সবচেয়ে বড় যে দূর্বলতা দেশের মানুষের সামনে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে তা হলো কংগ্রেসের নেতৃত্বের সংকট এবং পরিবারতন্ত্রের উপর নেক্কারজনকভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়া, ভারত বিশাল গনতস্ত্রের দাবীদার হলেও কংগ্রেসের মত এত পুরাতন ও ঐতিহ্যবাহী একটা দলের মধ্যে গনতন্ত্র নাই। এতবড় বিশাল জনগোষ্টির দেশ ভারতে কংগ্রেস পরিবারতন্ত্রের বাইরে গিয়ে দলের জন্য উপযুক্ত বা যোগ্য একজন নেতা তৈরী করতে চরমভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। জওহার লাল নেহেরুর পর নেহেরু পরিবারের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে ইন্দিরা গন্ধিই কংগ্রেসের তথা ভারতবর্ষের নেতৃত্ব সফলভাবে দিয়েছিল, এরপর রাজীব গান্ধি ও সোনিয়া গান্ধি কোন রকমে চলেছে, কিন্তু এখন তাদের অপরিপক্ক বা “নাবালক ছেলে” রাহুল গান্ধি কংগ্রেসের মত এত বড় দলের হাল ধরে বিশাল ভারতবর্ষের নেতৃত্ব দিতে পারবে বলে ভারতীয় জনগনই হয়ত আশ্বস্ত হতে পারে নাই বা বিশ্বাস করে নাই, তাই ভোট শুরুর শেষ সময়ে বোন প্রিয়াংকাকে ( যাকে ইন্দিরার প্রতিচ্ছবি বলে ধারনা করা হয় ) প্রচারনার জন্য মাঠে নামিয়েও কংগ্রেসের শেষ রক্ষা হলোনা। বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের মত কংগ্রেসের তথা গান্ধি পরিবারের ঘাটি বলে রাহুল আমেথি আসন থেকে নিজে জয়লাভ করেছে। একটানা ১০ বছর দেশ শাসন করতে গিয়ে কংগ্রেস অবশ্যই ভারতের অনেক উন্নয়ন করেছে, কিন্তু দেশে সুশাসন দিতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং দূর্নীতি ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করায় ভোটের সময় তা জনগনের মনে কোন রেখাপাত করেনি। যেমনটি হয়েছিল বাংলাদেশে, আওয়ামী লীগের গত মেয়াদের ৫ বছরে দেশে অনেক ভাল কাজ ও উন্নয়ন হলেও সুশাসন দিতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং দূর্নীতি, দলবাজি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও বিরোধী দলের উপর নীপিরন-নির্যাতন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ক্ষমতায় থেকেও দেশের ৫টা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা বিরোধীদল সমর্থিত প্রার্থীদের কাছে শোচনীয়ভাবে হেরেছিল।
প্রসঙ্গতই উল্লেখ্য যে, ভারতের কংগ্রেস দলের সাথে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের একটা ভাল বা বিশেষ সম্পর্ক বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই ( স্বাধীনতাযুদ্ধে কংগ্রেস নেত্রী তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিÍা গান্ধির বিশেষ অবদানের কারণে ) বিরাজমান। তখন দুই দেশের এই দুই দলের মধ্যে সম্পর্কটা গড়ে উঠেছিল দুই দেশের তথা জনগনের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, আন্তরিকতা ও সৌহার্দমূলক মূল্যবোধ ও আচরনের উপর ভিত্তি করে। কিন্তু বর্তমানে দুই দেশের এই দুই দলের সম্পর্কটা এসে দাড়িয়েছে কেবলই দলীয় স্বার্থ হাসিল করা ও বিনিময়ে কিছু পাওয়ার পরিবর্তে একতরফাভাবে এক দল কর্তৃক আর এক দেশকে সব উজার করে দেওয়ার নীতিতে। দুই দেশের বিশেষ করে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সম্পর্ক হওয়া উচিত দেশের সাথে দেশের সম্পর্ক, জনগনের সাথে জনগনের সম্পর্ক, দুই দেশের ব্যবসায়ীদের সাথে পারষ্পরিক সম্পর্ক, কিন্তু এখন আওয়ামী লীগের সাথে কংগ্রেসের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কেবল দলের সাথে দলের এবং আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে সম্পর্ক ছিল বর্তমান ক্ষমতাচ্যুত কংগ্রেস সরকারের । বাংলাদেশের বিগত ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে সোনিয়া গান্ধির কংগ্রেস সরকার শেখ হাসিনাকে একতরফা নির্বাচন করার ব্যাপারে যেভাবে প্রকাশ্যে সমর্থন ও সহযোগিতা করেছে তাতে এটাই প্রমানিত হয়েছে। ক্ষমতায় থেকে দলীয় সরকারের অধীনে শেখ হাসিনার একতরফা নির্বাচন করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অন্যতম ও প্রধান বিরোধী দল বি,এন,পিসহ নিবন্ধিত ৪২টা রাজনৈতিক দলের মধ্যে অধিকাংশ দলই নির্বাচন বর্জন করেছিল। সব দলের অংশগ্রহনের মধ্য দিয়ে একটা গ্রহনযোগ্য নির্বাচন হবেনা বলে পৃথিবীর বৃহৎ গনতান্ত্রিক দেশ ও সংস্থাসমূহ যেখানে বাংলাদেশের ৫ জানুয়ারীর একতরফা নির্বাচনকে গ্রহন করতে না পেরে কোন পর্যবেক্ষক পাঠায়নি এবং শেখ হাসিনা কর্তৃক গায়ের জোরে কথিত নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরেও সবার অংশগ্রহনের ভিত্তিতে আর একটা নির্বাচনের জন্য শেখ হাসিনার সরকারের উপর অব্যাহতভাবে চাপ দিয়ে যাচ্ছে সেখানে বিশ্বের অন্যতম প্রধান গনতান্ত্রিক দেশ ভারতের কংগ্রেস সরকার নির্লজ্জভাবে শেখ হাসিনাকে ৫ জানুয়ারী নির্বাচন করতে প্রত্যক্ষভাবে সমর্ধন ও সহযোগিতা করেছিল এবং নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার সরকারকে সবার আগে ভারতই স্বীকৃতি দিয়েছিল।
শেখ হাসিনার মহাজোটের শরীক এরশাদের জাতীয় পার্টিও যখন শেষ মূহুর্তে নির্বাচন করবেনা বলে জোরালো অবস্থান নিয়েছিল তখন সোনিয়া গান্ধির সরকার এরশাদকে নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে রাজী করানোর জন্য তার দেশের পররাষ্ট্র সচীব(সুজাতা সিং )কে দূতিয়ালী করতে ঢাকায় পাঠিয়েছিল । শুধু তাই নয়, ভারতীয় পররাষ্ট্র সচীব তখন এরশাদকে বলেছিল, “আপনি কি চান বাংলাদেশে বি,এন,পি-জামায়াত মৌলবাদী শক্তি আবারও ক্ষমতায় আসুক ?” একটা দেশের আভ্যন্তরীন ব্যাপারে আর একটা দেশের এমন ঔদ্ধত্যপূর্ন ও নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ কি কখনও প্রত্যাশিত ? বাংলাদেশের মানুষ কাকে ভোট দিয়ে কাকে ক্ষমতায় বসাবে এটা একান্তই বাংলাদেশের জনগনের ইচ্ছা ও মতামতের বিষয়, এ ব্যাপারে অন্য কোন বা প্রতিবেশী দেশ কি এভাবে প্রভাব খাটাতে পারে ? বিশ্বের বৃহত্তম গনতান্ত্রিক দেশের দাবীদার ভারতের সোনিয়া তথা কংগ্রেস সরকারের বাংলাদেশের ব্যাপারে এমন অগনতান্ত্রিক আচরন ভারতের সাধারন জনগনও তখন পছন্দ করেনি, এ জন্য তার নিজ দেশ ভারতেও তখন সোনিয়া সরকার ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছিল, ভারতের বিভিন্ন নামকরা সংবাদপত্রে তখন এ নিয়ে প্রচুর সমালোচামূলক লেখালেখি হয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনাকে ( ভারতের স্বার্থে ) ক্ষমতায় রাখার জন্য সোনিয়া গান্ধি তার দেশ ও দলের ঐতিহ্যবাহী গনতান্ত্রিক মূল্যবোধকেও তখন বিসর্জন দিয়েছিল। শেখ হাসিনার মত সোনিয়া গান্ধিও তার দেশের জনগনের øায়ূর স্পন্দন উপলব্ধি করতে পারে নাই, যে কারণে কংগ্রেসের সাথে ভারতের জনগনের দূরত্ব বেড়ে গেছে, সোনিয়া সরকার বাংলাদেশের হাসিনা সরকারের মত জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। তার দলের পরাজয়ের অতল গহ্বরে তলিয়ে যাওয়ার এটাও অন্যতম কারণ।
সোনিয়া সরকার ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে বিশেষ দূত পাঠিয়ে এরশাদের কাছে “আশংকা” প্রকাশ করে বলেছিল কথিত জংগী ও মৌলবাদের উত্থান ঠেকাতে হলে বি,এন,পি-জামায়াতকে ঠেকাতে হবে, অর্থাৎ বি,এন,পি-জামায়াত যাতে নির্বাচনে আসতে না পারে, শেখ হাসিনা যাতে একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতায় থাকতে পারে। কথায় বলে অন্যের জন্য গর্ত করলে সেই গর্তে নিজেকেই পড়তে হয়। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখার জন্য সোনিয়া গান্ধি বাংলাদেশে কথিত জংগীবাদ-মৌলবাদ ঠেকাতে এসেছিল, অথচ তার নিজ দেশের জংগীবাদ-মৌলবাদ ঠেকাতে সে ও তার কংগ্রেস দল সম্পূর্ন ব্যর্থ হয়েছে, কট্টর হিন্দু মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তি এবার কথিত ধর্মনিরপেক্ষতার ধ্বজাধারী সোনিয়ার কংগ্রেস দলকে হাই-কিক মেরে উড়িয়ে দিয়ে সারা ভারতকে দানবের মত গ্রাস করেছে। আর এইপারে বসে শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ এখন মাথায় হাত দিয়ে “বান্ধবীর” পরাজয়ের হতাশা প্রত্যক্ষ করছে। শেখ হাসিনা ভারত সফরে গিয়ে এবং দেশের ভেতরেও প্রায়ই বলে বেড়াত বাংলাদেশে তার দৃষ্টিতে জংগীবাদ ও মৌলবাদ মোকাবেলা করতে আঞ্চলিক সহযোগিতা বিশেষ করে ভারতকে সাথে নিয়ে যৌথভাবে কাজ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করত, এখন কি বলবে ? যে ভারতকে সাথে নিয়ে জংগীবাদ ও মৌলবাদ মোকাবেলা করার বুলি আওড়াত এখন সেই ভারতই সাম্প্রদায়িক জংগীবাদ ও মৌলবাদের গনজোয়ারে নিমজ্জিত হয়েছে, এখন শেখ হাসিনা বান্ধবী সোনিয়াকে কিভাবে উদ্ধার করবে বা বাংলাদেশে কথিত জংগীবাদ ও মৌলবাদ কিভাবে ঠেকাবে, ভারতীয় জংগীবাদী সরকারকে সাথে নিয়ে ? ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনী বৈতরনী পার করতে সহযোগিতার পর প্রতিদান হিসাবে ভারতের নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনার সরকার কি কোন বিশেষ দূত ভারতে পাঠিয়ে সাম্প্রদায়িক জংগীবাদ ও মৌলবাদ ঠেকাতে ভারতীয় দলগুলোর সাথে দূতিয়ালী করার কোন উদ্যোগ নিয়েছিল ? এ সাহস ও ধৃষ্ঠতা দেখানোর মত শক্তি ও সামর্থ কি বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকার বা শেখ হাসিনার কোনদিন হত ? সোনিয়া গান্ধির সরকার ও ভারতের জনগনও শেখ হাসিনা বা তার সরকারকে ভারতের মাটিতে এমন দু:সাহস দেখানোর সুযোগ দিতনা।
শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ও সোনিয়া গান্ধির কংগ্রেসের মধ্যে এমন অস্বাভাবিক সম্পর্কের অন্যতম প্রধান কারণ হলো শেখ হাসিনার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর ভারত সফরকালে তার ও সোনিয়া তথা মনমোহন সরকারের মধ্যে নিশ্চয়ই কোন গোপন সমঝোতা বা চুক্তি হয়েছিল, যার কারণে শেখ হাসিনার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত ভারত বাংলাদেশের কাছ থেকে যাই চাচ্ছে তাই পাচ্ছে, ভারতের তার সকল একতরফা সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের উপর চাপিয়ে দিতে সক্ষম হচ্ছে, বিনিময়ে বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে কি পাচ্ছে বাংলাদেশের জনগন তা শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের আমলে স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছে। সোনিয়া সরকারের আমলে ভারত তিস্তাসহ বাংলাদেশের প্রায় সব নদীকেই পানিশূন্য করে বাংলাদেশের বিশাল অঞ্চল ও জনগোষ্টিকে শুকিয়ে মারার উদ্যোগ নিয়েছে, এমনকি এত কিছু দেওয়ার পরেও শেখ হাসিনার সরকার বিানময়ে অন্তত সোনিয়া সরকারকে সীমান্তে নির্বিচারে বাংলাদেশী মানুষ হত্যা বন্ধ করতে বাধ্য করতে পারে নাই। ১০ম সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে অন্য দল ক্ষমতায় আসলে হয়ত বা খুব সম্ভবত শেখ হাসিনা ও মনমোহনের মধ্যে গোপন কোন সমঝোতা বা চুক্তির শর্ত প্রকাশ হয়ে যেতে পারে বলেই সোনিয়ার কংগ্রেস সরকার সমগ্র বিশ্ব বিবেককে উপেক্ষা করে ভারতের গনতান্ত্রিক রীতিনীতি ও ঐতিহ্যকে বিসর্জন দিয়ে শেখ হাসিনাকে ৫ জানুয়ারীর অগনতান্ত্রিক নির্বাচন করতে নির্লজ্জ ও নেক্কারজনকভাবে সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়েছিল। শুধু তাই নয় নিজ দেশে পরাজয়ের পর বিদায়ী কংগ্রেস সরকার বাংলাদেশ ও চীনের ব্যাপারে তার সরকারের বিভিন্ন নীতি ও অবস্থান ব্যাখ্যা করে যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে, সোনিয়া সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা শিব সংকর মেনন ( যে ব্যক্তি বাংলাদেশে ৫ জানুয়ারীর আগে শেখ হাসিনার সাথে কয়েকবার টেলিফোনে কথা বলে তাকে বুদ্ধি পরামর্শ দিয়েছিল ) এখন এই রিপোর্ট তৈরী করছে, অপরদিকে শেখ হাসিনাও নরেন্দ্র মোদিকে জয়লাভের জন্য শুভেচাছা জানানোর সময় দুই পৃষ্ঠার একটা চিঠিও তার কাছে পাঠিয়েছে, হয়ত এ অনুরোধ করার জন্য শেখ হাসিনা ও মনমোহন সিং এর মধ্যকার গোপন চুক্তি যাতে গোপনই রাখা হয় এবং হয়ত এ আশ্বাস দেওয়ার জন্য সোনিয়ার আমলে শেখ হাসিনার সরকার ভারতকে যেভাবে না চাইতেই সব উজার করে দিত “এমন উদারতা” মোদি সরকারের আমলেও বহাল রাখা হবে। তবে ভারতের জনগন ১৬তম লোকসভা নির্বাচের মধ্য দিয়ে সোনিয়াকে তার অপকর্মের যে উচিত ও চিরস্মরনীয় শিক্ষা দিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের জনগনও হয়ত আগামীতে তাদের ভোটের অধিকার ফিরে পেলে শেখ হাসিনা ও তার আওয়ামী লীগকেও এমন শিক্ষাই দিবে। জনগনের কথা বা স্বার্থ ভুলে গিয়ে যারা নিজের ক্ষমতা ধরে রাখা বা দলের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য জনগনের উপর নির্ভর না করে রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র শক্তি , দলীয় সন্ত্রাসী ও সশস্ত্র ক্যাডার ও বিদেশী প্রভুর উপর নির্ভরশীল হয়ে কৌশলের নামে অপকর্ম ও প্রতারনার রাজনীতি করে গায়ের জোরে ক্ষমতা ধরে রাখতে চায় তাদের জন্য ভবিষ্যতের পুরস্কার হিসেবে এমন পরিনামই নির্দিষ্ট করা থাকে।
লেখক : জাহিদ হাসান,
রিয়াদ, সউদী আরব।