গুম-খুনে রক্তাক্ত সংবিধান কাঁদছে, সবাইকে জাগতে হবে
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ গুম-খুনে বাংলাদেশের সংবিধান এখন রক্তাক্ত। মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে না পেরে সংবিধান কাঁদছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী এলিনা খান।
শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে ‘মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটি’ আয়োজিত ‘গুম, খুন: আতঙ্কিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
এলিনা খানা বলেন, ‘সংবিধানে নাগরিকের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করার কথা থাকলেও রাষ্ট্র তা প্রদান করতে ব্যর্থ হচ্ছে। স্বাধীনভাবে চলাফেরা ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে না পারায় সংবিধান আজ কাঁদছে।’
তিনি বলেন, ‘সংবিধান একটি বই। এটাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য শুধু আমাদের সমালোচনা করলেই চলবে না, যা করার সব কিছুই করতে হবে। এখনই সময় আমাদের জেগে উঠতে হবে। এজন্য শুধু সুশীল সমাজকে কাজ করলেই চলবে না, রাজনৈতিক দলগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে।’
এই মানবাধিকার নেত্রী বলেন, ‘অনেক আগে থেকেই আমরা গুম-অপহরণ দেখছি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এটা অনেকগুণ বেড়ে গেছে।’
‘এখন আমরা এত আতঙ্কের মধ্যে আছি যে, আমাদের কোনো আপনজন বাইরে গেলে কিছুক্ষণ পর পর টেলিফোনে খবর নেয়া প্রয়োজন হয় সে ঠিক আছে নাকি অপহরণ হয়ে গেছে’ যোগ করেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জের সাত গুম-খুনে সন্দেহভাজন তিন র্যাব সদস্যকে অব্যাহতি দেয়া প্রসঙ্গে এলিনা খান বলেন, ‘কোনো আর্মি হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগে জড়িত থাকলে তার বিচার আর্মি কোর্ট মার্শালে নয়, সিভিল আদালতে হবে। জড়িতদের বিচার করা হলে আগামীতে অন্যরা এ ধরনের ঘটনা থেকে বিরত থাকবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ফেরদাউস হোসেন বলেন, ‘যে রাষ্ট্র জনগণের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ সেই রাষ্ট্রকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বললে হয়তো পক্ষে-বিপক্ষে যু্ক্তি আসবে। কিন্তু বাংলাদেশ যে তার কার্যাকারিতা আস্তে আস্তে হারিয়ে ফেলছে এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। রাষ্ট্র আমাদের ওপর নিপীড়ন করবে এজন্য আমরা স্বাধীনতা অর্জন করিনি। এখন রাষ্ট্রযন্ত্র মানুষের কাছে ভয়াবহ নিপীড়ন-যন্ত্রে পরিণত হয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যায়ন বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ বলেন, ‘নাগরিকের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও খাদ্যসহ সকল মৌলিক অধিকার বাদ দেন, অন্তত আপনার প্রাণ কেউ কেড়ে নিতে পারবে না এই অধিকার সবাই চান। এটা চান বলেই অনেক ঝুঁকি নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন।’
আমরা আবার ’৭৪-’৭৫ এ ফিরে গেছি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিক নির্মল সেন একটি সম্পাদকীয় লিখেছিলেন- স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই। এই লেখা পড়লে মনে হবে আমরা ২০১৪ সালের লেখা পড়ছি। কিন্তু এটা লেখা হয়েছিল ১৯৭৪ সালে।’
নিজউ টুডের সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আজ মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা নেই। আইনের রক্ষকদের কাছে গিয়ে অভিযোগ করতে ভয় পায় সেখানে গিয়ে সহায়তা পাবে না এই ভয়ে।’
সংগঠনের আহ্বায়ক সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর সভাপতিত্বে সেমিনারে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা দলের উপদেষ্টা ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব ব্যারিস্টার রুমিন ফারহান।