ভারতে বিক্রি হওয়া এক ধর্ষিতার দেশে ফিরে আসার কাহিনী
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ ধর্ষণ শেষে হতভাগা ধর্ষিতাকে ভারতের একটি পতিতালয়ে বিক্রি করে দিয়েছে একটি সংঘবদ্ধ নারী পাচারকারী চক্র। হতভাগা ধর্ষিতা ওই কিশোরীর বয়স ১৭ বছর। তার বাড়ি চাঁদপুর জেলার উত্তর মতলব থানার সাড়ে পাঁচআনি গ্রামে।
জানা যায়, ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় ১২ বছর বয়সে ওই কিশোরীর বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের পর তার স্বামী তাকে তালাক দেয়। সে আবার লেখাপড়া শুরু করে নবম শ্রেণি পাস করে। অভাবের কারণে এরপর তার পক্ষে আর লেখাপড়া এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। তিনি চাকরির উদ্দেশ্যে ঢাকায় চলে আসেন।
ঢাকা এসে মিরপুর ১৩ নম্বরের ঈমাননগর এলাকার শাহাজাহান সাহেবের বাসায় উঠে। সেখান থেকে কাফরুলের ভিশন রয়েল গার্মেন্টসে চাকরি নেয়। গার্মেন্টসে চাকরি করার সময় সাবিনা (৩৫ ) নামের এক মহিলার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সাবিনা তাকে প্রায়ই ফোন করতো এবং বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে নিয়ে যেতে চাইতো।
হঠাৎ একদিন সাবিনা তাকে ফোন করে জানায় সে খুবই অসুস্থ, তাকে দেখার কেউ নেই। একথা শুনে সে ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখ বিকালে হাজী ভিলা, কুত্তামরা কবরস্থান, সেনপাড়া, মিরপুর ১০ নম্বর সাবিনার বাসায় যায়। সাবিনাকে দেখতে ডাক্তারও আসে। ডাক্তার চলে যায়। এ সময় সেখানে সাবিনাকে দেখতে তুষার (২৩), রাসেল, শামিম ও শান্ত নামের চার যুবক আসেন। ওই ছেলেদের খাওয়ানোর জন্য সাবিনা তাকে রান্না করতে বলে। সাবিনার কথামতো কিশোরী সবাইকে রান্না করে খাইয়ে যেতে চাইলেও সাবিনা তাকে যেতে দেয়নি। খাবার শেষ করে সবাই ঘুমিয়ে পড়ে।
তুষার নামের ছেলেটি রাতে ওই কিশোরীর ঘরে ঢুকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে ধর্ষণ করে এবং তা ভিডিওতে ধারণ করে। পরেরদিন সকালে চলে আসতে চাইলে সাবিনা এবং তুষার তাকে ওই ভিডিও দেখায়। তাদের কথা না শুনলে ভিডিও চিত্রটি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে একটি ঘরের মধ্যে বন্দি করে রাখে। বন্দি অবস্থায় তুষারসহ অন্যরা তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করতে থাকে। ধর্ষণকারীরা ধর্ষণ করেই থেমে থাকেনি তারা তাকে পতিতালয়ে বিক্রি করার জন্য প্রস্তুতি নেয়।
বন্দিশালা থেকে বের হওয়ার জন্য বারবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় কিশোরী। এভাবে প্রায় দুই মাস বন্দি রাখার পর একদিন তারা জোর করে কিশোরীকে চেতনানাশক ওষুধ খাওয়ায়।
ওই কিশোরী জানায়, ওষুধ খাওয়ানোর পর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি কিন্তু মাঝে মাঝে শুধু গাড়ির শব্দ শুনতে পেতাম। পরে জ্ঞান ফেরার পর দেখি অপরিচিত জায়গা। আশপাশে কিছু মেয়ে দেখতে পাই। তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম জায়গাটি ভারতের পুনে। ওই মেয়েগুলি আরো জানায় সাবিনা ও তুষার ষাট হাজার টাকার বিনিময়ে আমাকে এখানে বিক্রি করে দিয়েছে।
পরে পুনে থেকে আবার তাকে গোয়ার একটি হোটেলে রেখে জোরপূর্বক দেহ ব্যবসা করানো হতো। সেখানকার পুলিশ হোটেলে অভিযান চালিয়ে তাকে উদ্ধার করে গোয়ায় সরকারি হোমের আশ্রয়ে রাখে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সহযোগিতায় ১ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে কিশোরী দেশে ফিরে আসে।
দেশে আসার পর এ বিষয়ে সে বুধবার কাফরুল থানায় একটি মামলা দায়ের করে (মামলা নম্বর ৩৩)।- কিশোরী এখন সুষ্ঠু বিচার চায়। এ চক্রের সদস্যদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি জানান ভাগ্যাহত কিশোরী।
এ বিষয়ে হতভাগা ওই কিশোরী বলেন, ঢাকার গার্মেন্টস শিল্পকে ঘিরে নারী পাচারকারী একটি শক্তিশালী চক্র রয়েছে। এরা আমাদের মতো সহজ-সরল গার্মেন্টসকর্মীদের ভুলিয়ে ভালিয়ে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে বিক্রি করে দেয়।
এ ব্যাপারে কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, এ বিষয়ে থানায় একটি মামলা হয়েছে। আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। চক্রকে সনাক্ত করার চেষ্টা করছি।