‘বন বিভাগের প্রকল্প বন্ধ না করলে কঠোর আন্দোলন’
রাতারগুল রক্ষায় নগরীতে মানববন্ধন : কাল স্মারকলিপি পেশ
প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বন রক্ষায় কোনো স্থাপনা কিংবা অবকাঠামো নির্মাণ নয়, বনের বেড়ে ওঠায় চাই শুধু নজরদারি। বনকে বনের মতো থাকতে দেওয়ার মধ্যে বনের আসল সুরক্ষা। তাই রাতারগুলের জলার বনে অবকাঠামো নির্মাণ অবিলম্বে প্রত্যাহার করে বন সুরক্ষায় বন বিভাগকে উদ্যোগী হতে হবে। অন্যথায় সিলেটের পরিবেশ সচেতন মানুষকে নিয়ে বন বিভাগের প্রকল্পবাজি বন্ধ করতে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।
সিলেটের রাতারগুলে বন বিভাগের জাতীয় উদ্যান পরিকল্পনায় পর্যবেক্ষন টাওয়ার, বিশ্রামাগার ও রাস্তা নির্মাণ বন্ধ করে বন সুরক্ষার দাবিতে মানববন্ধনে একাত্ম হওয়া মানুষেরা এ আহবান জানান। গতকাল শুক্রবার বিকেলে সিলেট নগরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন হয়। সিলেটের পরিবেশবাদী সংগঠনের সমন্বয়ে নবগঠিত ‘রাতারগুল জলার বন সংরক্ষন কমিটি’র উদ্যোগে মানববন্ধন হয়।
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নে অবস্থিত রাতারগুল বাংলাদেশের সমৃদ্ধ জলার বন (সোয়াম্প ফরেস্ট) ১৯৭৩ সালে সংরক্ষিত ঘোষণা করে বন বিভাগ। নদী ও হাওর বেষ্টিত ৫০৪ দশমিক ৫০ একর আয়াতনের পুরো এলাকা প্রকৃতিপ্রেমীদের নিকট পরিচিতি হয়ে ওঠলে বন বিভাগ প্রস্তাবিত জাতীয় উদ্যান পরিকল্পনায় রাতারগুলে পর্যবেক্ষন টাওয়ার, বিশ্রামাগার ও রাস্তা নির্মাণসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ পরিকল্পনা শুরু করে। সংরক্ষিত বন এলাকায় অবকাঠামোগত স্থাপনা নির্মাণে বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে জানিয়ে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো বন বিভাগের এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আপত্তি তোলে। এ অবস্থায় বন বিভাগ সম্প্রতি জাতীয় উদ্যান পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশবাদী ও নাগরিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত রাতারগুল জলার বন সংরক্ষন কমিটি মানববন্ধন কর্মসূচির ডাক দেয়।
‘বনকে বনের মতো থাকতে দাও’Ñএ আহবানসংবলিত ব্যানারে মানববন্ধনে একাÍ হন সিলেটের পরিবেশ সচেতন ব্যক্তিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা। বন রক্ষায় বন বিভাগের প্রকল্পবাজি বন্ধ করে বাস্তব সম্মত ও পরিবেশবান্ধব উদ্যোগের দাবিতে বিভিন্ন কথার স্লোগান প্রদর্শন করা হয় প্লে-কার্ডের মাধ্যমে। সংরক্ষন কমিটির সদস্য সচিব আবদুর করিম কিমের সঞ্চালনায় মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক শরীফ জামিল ও সংরক্ষন কমিটির আহবায়ক লোকমান আহমদ।
প্রায় এক ঘন্টাব্যাপী চলা মানববন্ধনে সিপিবির সভাপতি অ্যাডভোকেট বেদানন্দ ভট্টাচার্য, বাপা সিলেটের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, হবিগঞ্জ বাপার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল, পরিবেশ ও প্রকৃতিবিষয়ক ব্লগার হাসান মোরশেদ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বন বিদ্যা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী অনিমেষ ঘোষ, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ সংগঠন প্রাধিকারের সাধারণ সম্পাদক জয় প্রকাশ রায়, অ্যাডভোকেট দেওয়ান মিনহাজ গাজী, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রিণ এক্সপ্লোর সোসাইটির সভাপতি হাসান আহমেদ, লিডিং ইউনিভার্সিটির শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলম, সিলেট বিভাগ উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদ সিলেট মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছামির মাহমুদ, ছাত্র ইউনিয়ন সিলেটের সাধারণ সম্পাদক সহিদুজ্জামান পাপলু, অ্যাডভোকেট সৈয়দ ফজলে এলাহী, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাজনিন আক্তার, টেংরাটিলা দাবি আদায় সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক নুরুল আমিন, রাতারগুলের বাসিন্দাদের পক্ষে যুব সংগঠক সোনা মিয়া, সংস্কৃতিকর্মি বিমান তালুকদার, জয়দ্বীপ দাশ সুজক, রয়েল পাল, বাংলার মুখ এর সভাপতি নিপু মল্লিক, হাওর পাড়ের ধামাইল এর সভাপতি সজল কান্তি সরকার,বাউলা অন্তরের সদস্য মাহবুব আলম ফারুকী, বাপা সিলেটের সদস্য সুপ্রজিত তালুকদার, রুবেল আহমদ কুয়াশা, সমাজকর্মী শফিকুর রহমান শফিক, শাবি শিক্ষার্থী অর্চিশমাম দত্ত ও সিকৃবি শিক্ষার্থী অনুপ চৌধুরীসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রকৃতি, বন ও পরিবেশ সচেতন শতাধিক শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
কাল স্মারকলিপি পেশ: রাতারগুল বন রক্ষায় বন বিভাগের প্রকল্প বন্ধের দাবিতে আগামীকাল রোববার রাতারগুল সংরক্ষন কমিটি সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে স্মারকলিপি দেবে। রোববার দুপুরে নগরের তোপখানায় বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। সংরক্ষন কমিটির আহবায়ক জানান, স্মারকলিপি দিয়ে বন বিভাগের অবস্থান সম্পর্কে অবহিত হয়ে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।