মতিউল বারী চৌধুরী খুর্শেদ : ত্যাগই যার জীবন

Motiul Bari Chowdhury Khurshedগোলাপগঞ্জ থেকে আজিজ খানঃ চোখে অজানা জল টলমল করছে। মুখে কান্তি ও বিষন্নতার ছাপ। মতিউল বারী খুর্শেদের তো এমন কান্ত থাকার কথা নয়। তাঁর মধ্যে ছিল তারুণ্যের উচ্ছ্বাস। আজীবন অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের, অসত্যের বিরুদ্ধে সত্যের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন তিনি। কিন্তু এখন তাঁর দিকে তাকালে মনে হয় ভারী কষ্ট তাকে ঘিরে রেখেছে। বড় কষ্টে সময় পার করতে হচ্ছে তাকে। অসুস্থতা বাসা বেঁধেছে দেহে। ডাক্তারের পরামর্শে চলছেন তিনি। তবুও মনে ভয়, কখন কি হয়। তাকে শক্তি এবং সাহস দেয়ার এখনই সময়।
আজীবন সমাজের নির্যাতিত-নিপীড়িত, অধিকার বঞ্চিত মানুষের কল্যাণে মৃত্যুঞ্জয়ী সৈনিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে ছিনিয়ে এনেছেন বিজয়। দুঃখীর দুঃখে যার কেঁদেছে মন। কঠিন রোগে মৃত্যুর পথযাত্রীর জন্য যিনি ব্যবস্থা করেছেন চিকিৎসার পাথেয়। মোট কথা জীবন যার পরোপকারে কেটেছে। এমনি এক উদীয়মান তরুণ রাজনীতিক, সমাজসেবক, কলমসৈনিক মতিউল উল বারী চৌধুরী খুর্শেদ। যিনি আজ অসুস্থ।
জীবন যার আপোষহীন। দলাদলি-হানাহানি, গ্রুপিং, প্রভাব বিস্তারক, আধিপত্যবাদ, অনৈক্য আর অশান্তি সৃষ্ঠিকারীদের বিরোধী সংগ্রাম আর জাতীয়তাবাদী ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অগ্রসৈনিক, নির্যাতিত-নিপিড়িত মানুষের অধিকার আদায়ের বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর, দলমত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের পাশে দাঁড়ানোই যার জীবনের তপস্যা। দুঃখিজনের সেবা করা, আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেয়াই যার পেশা। তিনি বৃহত্তর সিলেট’র রাজনৈতিক, সামাজিক অঙ্গনের এক পরিচিত মুখ। নাম তাঁর মতিউল বারী চৌধুরী খুর্শেদ। পেশায় সাংবাদিক ও ব্যাংকার। দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগের বেশী সময় ছাত্র রাজনীতি করেছেন তিনি। বিভিন্ন দায়িত্বও সুচারুরূপে অনাদর্শের বিরুদ্ধে জীবন বাজী রেখে পালন করেছেন। রাজনীতিতে সব সময় বিরোধী বলয়ে নির্যাতিত-বঞ্চিতদের পক্ষে তার অবস্থান ছিল কঠোর। মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে তার লড়াকু মনোভাব তরুণ সমাজকে মুগ্ধ করেছে ভীষন।
এই তরুণ রাজনীতিক’র জীবনটা ত্যাগে ভরপুর। ত্যাগ-তিতীক্ষা, সংগ্রাম ছাড়া তাঁর রাজনৈতিক জীবনের ডায়েরির পাতাগুলোতে আর কিছুই নেই। পরোপকারী এই তরুণ-মেধাবি আর সাহসি সৈনিকের জীবনকে কোনো ধরণের ভাইরাস ছুঁতে পারেনি। স্পর্শ করতে পারেনি তাঁর জীবনকে কোনো বেড রেকর্ড। রাজনীতির পিচ্ছিল ময়দানে মরণপন যোদ্ধার মতো পা দু’টিকে শক্ত করে বুকে নীতি-নৈতিকতা ও আদর্শকে লালন করে এগিয়ে গেছেন সম্মুখপানে।
আজীবন সমাজের নির্যাতিত-নিপীড়িত, অধিকার বঞ্চিত মানুষের কল্যাণে মৃত্যুঞ্জয়ী সৈনিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে ছিনিয়ে এনেছেন বিজয়। রাজনীতি করে তাঁর সমবয়সি বা সহযোদ্ধা অনেক রাজনীতিকরা অনেক কিছ্ ুঅর্জন করলেও এই তরুণ রাজনীতিকের জীবন নামের ডায়েরিতে ‘অর্জন’ বলতে কোনো শব্দ নেই। অবশ্য ব্যক্তি জীবনে তিনি নিজের জন্য কিছু অর্জনের জন্য অপচেষ্ঠা করেননি বিধায় আজো সিলেটের রাজনীতিকদের অন্তরে ভালোবাসার মহলে জায়গা করে সক্ষম হয়েছেন।
যার অকাট্য প্রমাণ অতি সম্প্রতি তাঁর শুভ পরিণয়ের অনুষ্ঠানে সিলেটের সকল রাজনৈতিক ভেদাভেদ, মতামত, আভ্যন্তরীন কোন্দরের উর্ধ্বে উঠে সর্বস্থরের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, পেশাজীবী, সাংবাদিক, আইনজীবী, চিকিৎসক ও শিক্ষক সমাজ এক কাতারে এসে সমবেত হয়েছিলেন। যা তার প্রতি সিলেটবাসীর ভালোবাসার বহি:প্রকাশ।
শুধু তাই নয়, টাকা-পয়সার অভাবে সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত, কঠিন রোগে দুখে দুখে মরছে এমন মানুষের জন্য রয়েছে তাঁর সহমর্মীতা আর ভালোবাসা। নিজ উদ্যোগে সিলেটের স্থানীয় দৈনিক শ্যামল সিলেটে লিখনীর মাধ্যমে তিনি তুলে ধরেছেন সমাজের গরীব-দুঃখি আর অভাবী মানুষের চিত্র। পত্রিকার পাতায় প্রতিবেদনে এসব অভাবী মানুষের দুঃখ লাঘবে কার্যকর ভূমিকা রাখে। অনেকের জন্য চিকিৎসার আর্থিক ফান্ড’র ব্যবস্থা হয়। এখানেই শেষ নয় কঠিন আর দূরারোগে আক্রান্ত অনেকের জন্য কনসার্ট এর আয়োজনের মাধ্যমে চিকিৎসার অর্থের ব্যবস্থাকরণে ছিল তার প্রশংসনীয় ভূমিকা। শীতকালে উষ্ণ কাপড়ের অভাবে সমাজের হতদরিদ্র মানুষ, পথশিশু, ছিন্নমূল আর বিপন্ন মানবতার কল্যাণে এগিয়ে গিয়ে শীতার্তদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণেও রয়েছে তার অনস্বীকার্য ভূমিকা।
তাছাড়া যখন ভূমিখেকোরা সিলেটের সংখ্যালঘু উরাং সম্প্রদায় ও মনিপুরী সম্প্রদায়ের ভূমি দখল করে নিয়েছিল। সেই সম্প্রদায়ের ভূমি উদ্ধারে শ্যামল সিলেট পত্রিকায় তাঁর ক্ষুরধার লিখনীই অগ্রণী ভূমিকা পালনে করে। সিলেটকে সন্ত্রাস আর জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্যের অপচেষ্ঠা চলছিল আর ধর্মের নামে জঙ্গি তৎপরতা সৃষ্টি করে অশান্তি বিরাজ করে যাচ্ছিল মৌলবাদ গোষ্টি। ঠিক তখন জঙ্গিবাদ-বোমাবাজদের বিরুদ্ধে ২০০৪ সাল থেকে ২০০৬সাল পর্যর জঙ্গিবাদের মুখোশ উন্মোচনে তিনি সাহসী কলম সৈনিকের অবদান রাখেন।
আজ তিনি অসুস্থ। মনটা ভারাক্রান্ত। হৃদয়টা চিন্তিত। শরিরটা দূর্বল। তবে আছে এখনো সুদৃঢ় মনোবল। আপনাদের দোয়া, ভালোবাসা ও সাহস পেলে অসুস্থতার দুঃচিন্তাকে পেছনে ফেলে আবারো দুর্বার গতিতে সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামে শরীক হবেন। এই প্রত্যাশা সিলেটবাসীর।