১৫ লাখ টাকা গচ্ছা, হচ্ছে না সুরমা ফুট ওভারব্রিজ

2নুরুল হক শিপু :: পথচারীদের পারাপারের সুবিধার্থে সিলেট মহানগরের সুরমা মার্কেট পয়েন্টে ফুট ওভারব্রিজের নির্মাণকাজ শুরু হয়েই বন্ধ হয়ে গেছে। কাজ পুনরায় শুরু হওয়া সম্ভাবনা ক্ষীণ। ইতোমধ্যে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা।
গেল বছরের ৫ নবেম্বর সুরমা মার্কেট পয়েন্টে নির্মাণকাজ শুরু হয় ফুট ওভারব্রিজটির। ৯০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু পিলার স্থাপনের কাজ অসম্পূর্ণ থাকাবস্থায় অর্থমন্ত্রীর নির্দেশে স্থগিত হয়ে গেছে ওভারব্রিজ নির্মাণের কাজ। এখন অনিশ্চয়তায় রয়েছে ফুট ওভারব্রিজের ভবিষ্যৎ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যে-টুকু কাজ করেছে, সে কাজের বিল প্রাপ্তিতেও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
সুরমা মার্কেট পয়েন্টে ওভারব্রিজ হলে আদালতের কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হতে পারে-এ আশঙ্কায় কাজ স্থগিত করা হয় বলে জানা গেছে। আর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোর্ট পয়েন্টের ওভারব্রিজ মানুষ ব্যবহার করছেন না; তাই সুরমা মার্কেট পয়েন্ট ওভারব্রিজও ব্যবহার না করতে পারেন বলে ধারণা থেকে এ ওভারব্রিজের কাজ স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। কাজ একেবারেই বন্ধ হয়ে যাবে কি না তাও সঠিক জানা নেই জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের। তারা পরবর্তী নির্দেশনার অপেক্ষা রয়েছেন। যদি ওই স্থানে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করা না হয়, তাহলে সরকারের ১৫ লাখের বেশি টাকা গচ্ছা যাবে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ সবুজ সিলেটকে বলেন, সুরমা মার্কেট পয়েন্ট সংলগ্ন আদালতের প্রধান সড়ক। ওই সড়ক দিয়ে জজ, আইনজীবী, মক্কেল, সাক্ষী সবাই প্রবেশ করেন। তাই এ স্থানে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হলে মানুষকে বিড়ম্বনায় পড়তে হবে। আমরা সবাই মিলে বিষয়টি অর্থমন্ত্রীকে অবহিত করি। এরপর মন্ত্রী ওভারব্রিজস্থল পরিদর্শন করে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন।
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে সিলেট জেলা পরিষদের মাধ্যমে সুরমা মার্কেট পয়েন্টে ফুট ওভারব্রিজের আরসিসি অবকাঠামো ও স্টিল অবকাঠামোর মাধ্যমে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণের ব্যয় ধরা হয় ১ কোটি ৭৮ লাখ ৪ হাজার ৮৭৩ টাকা। এর মধ্যে আরসিসি অবকাঠামো ব্যয় ২২ লাখ ২৫ হাজার ২শ’ ৮৩ টাকা এবং স্টিল অবকাঠামোর ব্যয় ধরা হয় ১ কোটি ৫৫ লাখ ৭৯ হাজার ৫৯০ টাকা। আরসিসি কাঠামো নির্মাণ ব্যয় ২২ লাখ ২৫ হাজার ২৮৩ নির্ধারণ করা হলেও এর প্রাক্কলিত মূল্য ১৯ লাখ ৮৩ হাজার ২৯৫ টাকা দাঁড়ায় । যার চুক্তিমূল্য শতকরা ৫ ভাগ কমে ১৮ লাখ ৮৪ হাজার ১৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। স্টিল অবকাঠামোর ব্যয় ধরা হয় ১ কোটি ৫৫ লাখ ৭৯ হাজার ৫৯০ টাকা। সে হিসেবে মন্ত্রণালয় সিলেট জেলা পরিষদকে কাজ শেষ করতে ১ কোটি ৭৮ লাখ ৪ হাজার ৮২৮ টাকা বরাদ্দ প্রদান করে। আরসিসি কাঠামোর কাজটি পায় মেসার্স স্বপ্না এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটি গেল বছরের ৫ নমেম্বর আরসিসি অবকাঠামোর কাজ শুরু করে। আরসিসি অবকাঠামোর কাজ ৮০ ভাগ শেষ করার পর গত ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে কাজ বন্ধ করতে মৌখিক নির্দেশ দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। সর্বশেষ গত ১৬ ফেব্রুয়ারি অর্থমন্ত্রী ফুট ওভারব্রিজের নির্মাণস্থল পরিদর্শন করেন। এরপরই মন্ত্রী কাজ স্থগিত রাখতে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে নির্দেশ দেন।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, সুরমা পয়েন্টে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করতে কয়েকটি পিলার নির্মাণ করা হয়েছে। সেগুলোও পুরোপুরি সম্পন্ন করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পিলারের উপরের রডগুলো বের হয়ে আছে।
অবশ্য জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল কাদের মুজাহিদ বলেছেন, অর্থমন্ত্রী ফুট ওভারব্রিজস্থল পরিদর্শন করার প্রায় ১৫ দিন আগে মৌখিকভাবে কাজটি স্থগিত রাখতে নির্দেশ দেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রী লিখিত নির্দেশ দেন। প্রকৌশলী আব্দুল কাদের মুজাহিদ বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু দিকে কাজ বন্ধ করা হয়। যার ফলে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি; কাজের মেয়াদ পেরিয়ে যায়। তিনি আরো বলেন, প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে আরসিসি অবকাঠামোর ৮০ ভাগ কাজ শেষ করা হয়। পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত কাজ স্থগিত থাকবে।
স্বপ্না এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জামাল আহমদ বলেন, অর্থমন্ত্রীর নির্দেশে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আমরা একবার ৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা বিল পেয়েছি। বাকি টাকা পরবর্তী নির্দেশনা না এলে পাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, আমরা শুধু আরসিসি অবকাঠামোর কাজটি পেয়েছি। হঠাৎ কাজ বন্ধ করার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা জেনেছি; এখানে ফুট ওভারব্রিজ হলে কোর্টের কিছু সমস্যা হবে। তাই কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। কাজটি বন্ধ হওয়ায় আমরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। যে পরিমাণ টাকা কাজে ব্যয় হয়েছে, এর ৩ ভাগের একভাগ পেয়েছি। বাকি টাকা কবে পাব তার ঠিক নেই।
স্বপ্না এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জামাল আহমদের ব্যবসায়িক সহযোগী আব্দুল মতিন বেলাল বলেন, কোর্ট পয়েন্টের ওভারব্রিজ ব্যবহার হচ্ছে না। এ ধারণা থেকে সুরমা পয়েন্ট ওভারব্রিজের কাজ স্থগিত করা হয়। আমরা ওভারব্রিজ নির্মাণের জন্য ৪টি বড় পিলার ও ১০টি স্ট্যাম্প নির্মাণ করি। কাজে যে পরিমাণ ব্যয় হয়েছে, তার পুরো বিল মেলেনি। জেলা পরিষদ থেকে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে; পরবর্তী নির্দেশনা এলে বাকি টাকা পাওয়া যাবে।
উল্লেখ্য, পথচারীদের পারাপারের সুবিধার্থে সিলেট মহানগরে প্রথমবারে মতো ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হয় কোর্ট পয়েন্টে। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুমোদনপ্রাপ্ত সম্পূর্ণ স্টিল স্টাকচার দিয়ে নির্মিতব্য ওভারব্রিজে প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হলেও নগরবাসীর কোনো কাজে লাগছে না। ফুট ওভারব্রিজটি ব্যবহার না করে রাস্তা দিয়েই মানুষ যাতায়াত করেন সব সময়। ওভারব্রিজটিতে মানুষ ওঠেন শখের বশে।