সিলেটে শ্রমিক কর্মচারীরা ন্যায্য অধিকারবঞ্চিত- কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর ঠুঁটো জগন্নাথ

shisuমো.ফখরুল ইসলাম: সিলেটে কলকারখানা শ্রমিক ও দোকানকর্মচারীরা তাদের অধিকার হতে বঞ্চিত  হয়ে আছেন। দেশের অন্যান্য এলাকার চেয়ে সিলেটের কলকারখানা ও দোকানকর্মচারীরা খুবই অবহেলিত। আইন অনুযায়ী দোকান কর্মচারীদের সাপ্তাহিক দেড়-দিন ছুটি এবং কলকারখানা শ্রমিকদের একদিন ছুটি বাধ্যতামূলক। কিন্তু এ আইন মানছেন না নগরীর দোকান ও কলকারখানা মালিকরা। সরকারিভাবে প্রতিদিন কাজের সময়সূচি সকাল ১০ টা থেকে রাত্র ৮ টা পর্যন্ত। কিন্তুু সিলেটে শ্রমিকদের দিন-রাত প্রায় ১৮ ঘন্টা কাজ করতে হয়। দোকান কর্মচারীরা একদিনও ছুটি পান না।
গত শুক্রবার স্বরজমিন ঘুরে দেখা যায়, নগরীর জিন্দাবাজার, নয়াসড়ক, বারুতখানা,সুবহানীঘাট ,মিরাবাজার,শিবগঞ্জ, উপশহর, দক্ষিণসুরমা সহ বেশ কিছু দোকানপাঠ সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও খোলা রয়েছে।
সাধারণত শ্রমিকদের বিরতি ছাড়া ১০ ঘন্টা কাজ করার কথা। কিন্তু একাধিক শ্রমিক সংগঠনের অভিযোগ, সিলেটে শ্রমিকদের ১৮ ঘন্টা কাজ করতে হয়। সিলেটের শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়োগপত্র দেওয়া হয় না, নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে শ্রমিকদের কাজ করতে হয়, শ্রমিক কল্যাণ তহবিল নেই, নারী শ্রমিক-কর্মচারীরা মাতৃত্বকালীন সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। এককথায় সিলেটে শ্রম আইনের বাস্তবায়ন নেই। শ্রম আইন বাস্তবায়নের জন্য  সরকারি একটি বিভাগ  রয়েছে। এর নাম ‘কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর’। সিলেটে এই অধিদপ্তরের একটি অফিস থাকলেও কোনো তৎপরতা পরিলক্ষিত হয় না। এটি যেন ঠুঁটো জগন্নাথ।
স্ট্যান্ডিং অর্ডার ১৯৬৯-এ আছে, কোনো শ্রমিককে দৈনিক আট ঘণ্টার বেশি শ্রম করানো যাবে না, তবে বিশেষ ক্ষেত্রে ওভারটাইম করানো যাবে। কিন্তু সেক্ষেত্রে দুটি শর্ত রয়েছে।(ক) শ্রমিকের সম্মতির ভিত্তিতেই কেবল ওভারটাইম করানো যেতে পারে, (খ) কোনো অবস্থাতেই (এমনকি শ্রমিকের সম্মতি থাকলেও) দুই ঘণ্টার বেশি ওভারটাইম করানো যাবে না। ওভারটাইমের জন্য দ্বিগুণ মজুরি দিতে হবে। অর্থাৎ, কোনো অবস্থায়ই কোনো শ্রমিককে দশ ঘণ্টার বেশি শ্রম করানো যাবে না এবং ওভারটাইমের জন্য দ্বিগুণ মজুরি দিতে হবে।
তবে এসব কথা আইনের বইয়ে লেখা রয়েছে মাত্র। সিলেটের বাস্তব  চিত্র ভিন্ন রকম। সিলেটে এখনও বহু প্রতিষ্ঠানে একজন শ্রমিককে ১৪ ঘণ্টা, ১৬ ঘণ্টা এমনকি তার চেয়েও বেশি পরিশ্রম করানো হয় এবং ব্যতিক্রমহীনভাবে কোনো কলকারখানায় দ্বিগুণ হারে মজুরি দেয়া হয় না। উক্ত আইন ভঙ্গ করলে মালিককে শাস্তি পেতে হবে। এটাও আইনের বইয়ে লেখা আছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সিলেটে কোনো মালিক এই অবৈধ কাজের জন্য শাস্তি পাননি।
সিলেটে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন, শ্রমিকের নিরাপত্তা, নিয়োগপত্র ও শ্রম আইন বাস্তবায়নের জন্য ২০১৪ সালের মার্চ মাসে নগরীর মদিনা মার্কেট এলাকায় পরিদর্শক অধিদপ্তরের কার্যালয় স্থাপিত হয়। প্রতিটি জেলা শহরে শ্রমিকদের নিরাপত্তা,স্বাস্থ্য, কাজের পরিবেশ, ছুটি, বেতনভাতাসহ কারখানা আইনে প্রদত্ত সুবিধাগুলো শ্রমিকরা পাচ্ছেন কি-না সেটা দেখার দায়িত্ব এই অফিসের কর্মকর্তাদের। শর্ব শেষ প্রকাশিত হওয়া শ্রম আইনের বিধি অনুযায়ী ব্যবসা ও বাণিজ্যিক কর্মকান্ড চালায় এমন সব ধরনের প্রতিষ্ঠানকে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) লাইসেন্স নিতে হয় ।
কিন্তু শ্রম আইনের আইনের ফাঁক ফোকরকে পুঁজি করে  বিভিন্ন কারখানাও প্রতিষ্ঠান থেকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মাসোহারা আদায় করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, সিলেটে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের পরিদর্শক ঘরে বসেই ‘পরিদর্শনের’ ওপর ভিত্তি করে রিপোর্ট তৈরি করেন। সেই রিপোর্ট পাঠানো হয় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে। এভাবে কারখানাসমূহের শ্রমিক নিরাপত্তার ওপর সরকারি নজরদারি খাতাকলমে ঠিক থাকলেও বাস্তবে ঘটছে উল্টো ঘটনা। শ্রমিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে উল্লেখযোগ্য কোনো তৎপরতাই নেই এ প্রতিষ্ঠানের।
এ সব ব্যাপারে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর সিলেটের উপমহাপরিদর্শক আরিফুল ইসলাম বলেন,  ২০১৪ সালের মার্চ মাসে সিলেটে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে মাত্র একজন পরিদর্শক নিয়ে। বর্তমানে সিলেটে ৪জন পরিদর্শক আছেন।  শ্রমিকদের নিয়োগপত্র, শ্রমিকের নিরাপত্তাহীনতা, শ্রম আইনের বাস্তবায়ন, শ্রমিকদের কল্যাণ তহবিল ও মাতৃত্বকালীন সুবিধা আদায়ে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর সিলেটে যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে বলে তিনি দাবি করেন। তবে তিনি বলেন, এই অফিসে জনবল সংকট থাকার কারণে কলকারখানা শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার ঠিকমতো পূরণ হচ্ছে না। তিনি বলেন, সিলেটে শ্রমিকদের নিয়োগপত্র, শ্রম আইন বাস্তবায়ন ও শ্রমিদের কল্যাণ তহবিল গঠনে তিনি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।