অপরাধীদের অলিখিত ইনডেমনিটি চলছে : ইমরান

Imran H Sarkarডেস্ক রিপোর্টঃ অপরাধীদের অলিখিত ইনডেমনিটি চলছে বলে মন্তব্য করেছেন ইমরান এইচ সরকার। তিনি বলেন “বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে অপরাধীরা একের পর এক অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে এবং নতুন আরেকটি অপরাধ সংগঠনে উৎসাহিত হচ্ছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, দেশে অপরাধীদের এক ধরনের অলিখিত ইনডেমনিটি চলছে। তারা জানে যত গুরুতর অপরাধই তারা করুক না কেনো, তারা বহাল তবিয়তে থাকবে, প্রশাসন তাদের কিছু বলবেনা”।

রোববার (৩ এপ্রিল) সকালে তনু হত্যা ও ধর্ষণের বিচার এবং ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডসহ চারদফা দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চের গণস্বাক্ষর কর্মসূচি চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় গণমাধ্যমকর্মীদের ব্রিফিং এ এসব কথা বলেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার। চারদফার মধ্যে অন্যান্য দাবিগুলো হলো হাইকোর্ট কর্তৃক প্রণীত ‘যৌননিপীড়ন বিরোধী নীতিমালা’র বাস্তবায়ন এবং নারীর মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

গত ১ এপ্রিল থেকে চারদফা দাবিতে দেশব্যাপী গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করছে গণজাগরণ মঞ্চ। ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ ও চারদফা দাবির পক্ষে জনমত গঠনের লক্ষ্যে জনসংযোগ করেছে গণজাগরণ মঞ্চ।

কর্মসূচী চলাকালে মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেন, “আমরা দেখছি, তনুর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে বারবার তদন্তকারী সংস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। এর মাধ্যমে আমাদের মধ্যে এক ধরনের আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে, এভাবে তদন্তকারী সংস্থার পরিবর্তনের আড়ালে হয়তো কোনোরকম ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হতে পারে। কেননা বারংবার তদন্ত সংস্থা পরিবর্তনের অতীত ইতিহাস সুখকর নয়। আমরা দেখেছি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্তের ভার একেকবার একেকটি সংস্থার উপরে দেয়া হয়েছে, আর তারা তদন্তের নামে কেবল সময়ক্ষেপণ করে ঘটনা ধামাচাপাতেই সহায়তা করেছেন।”

তিনি বলেন, “তনু হত্যার পরের ঘটনাপ্রবাহে এটা স্পষ্ট, অপরাধী শক্তিশালী কারো প্রশ্রয় পাচ্ছে। আমরা মনে করি অপরাধীকে রক্ষার এই যে নানামুখী চেষ্টা চলছে তাতে সামগ্রিকভাবে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। বরং আমরা যদি এই দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারি, অপরাধী সে যেই হোক না কেনো, তাকে আইনের আওতায় আসতে হবে, তাহলে একদিকে যেমন আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে অন্যদিকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হবে”।

“কিন্তু আমরা কি দেখছি, অপরাধীকে খুঁজে বের না করে ঘটনা ধামাচাপা দেয়াতে আমাদের প্রশাসন ব্যস্ত। ব্যাংক লুট হচ্ছে, রিজার্ভের টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে, দিনে দুপুরে মানুষ খুন হচ্ছে, প্রতিদিন তনুরা ধর্ষিত হচ্ছে, কিন্তু কোনোটির কোনো বিচার হচ্ছে না। তনুকে ধর্ষণ ও খুনের পর দেশজুড়ে চলমান আন্দোলনের মধ্যেই আমরা দেখলাম দেশের বিভিন্ন জায়গায় নারীরা ধর্ষিতা হচ্ছেন। এমনকি চলন্ত বাসের মধ্যেও কর্মজীবী নারীরা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এ থেকে বুঝা যায় অপরাধীরা এখন কতোটা বেপরোয়া আচরণ করছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, দেশে এখন অপরাধীরা এক ধরনের অলিখিত ইনডেমনিটি ভোগ করছে এবং এই অলিখিত ইনডেমনিটি তাদেরকে আরো বেপরোয়া করে তুলছে”- বলেন তিনি।

এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বর, দোয়েল চত্বর, শহিদ মিনার এলাকায় চারদফা দাবির পক্ষে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ ও জনসংযোগ করে গণজাগরণ মঞ্চ। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও পথচারীরা স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করেন।

আগামীকাল সকাল ১১ টায় ধানমন্ডিতে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস থেকে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচি শুরু হবে। সারা দেশে এবং দেশের বাইরেও প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে এ গণস্বাক্ষর কর্মসূচি চলছে, সর্বস্তরের মানুষকে যার যার এলাকায় এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ন্যায় প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার।