তনু হত্যার ঘটনায় আটক যুবকের হদিস মিলছে না

2কুমিল্লা প্রতিনিধি :: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যার ঘটনার প্রায় ২ সপ্তাহেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতির খবর জানাতে পারেনি র‌্যাব, পুলিশ, ডিবিসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। তবে এ ঘটনায় সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে বাড়ি থেকে মিজানুর রহমান সোহাগ নামের এক যুবককে আটকের খবর শনিবার বিকেলে পরিবারের পক্ষ থেকে গণমাধ্যম কর্মীদর জানানো হয়েছে।

আটক যুবক সোহাগ কুমিল্লা সেনানিবাস সংলগ্ন বুড়িচং উপজেলার নারায়নসার গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে। নিখোঁজ সোহাগের পরিবারের অভিযোগ, ‘গত ২০ মার্চ রাতে তনু হত্যাকাণ্ডের কয়েক দিন পর তনুর ভাই ও মা-বাবার ছবি টেলিভিশনে দেখে তনুর ছোট ভাইয়ের নিকট সোহাগ বন্ধু হিসেবে ফোন করে খোঁজখবর নেয়ার চেষ্টা করে, এটাই তার জন্য কাল হয়ে দাড়ায়, গত ২৮ মার্চ গভীর রাতে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তাকে বাসা থেকে তুলে আনা হয়।’

এ বিষয়ে গত ৩০ মার্চ তার পিতা বুড়িচং থানায় নিখোঁজের জিডি করেন, জিডি নং ১১৩২। নিখোঁজ সোহাগের বোন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শ্রেণির ছাত্রী খালেদা আক্তার ও চাচা গিয়াস উদ্দিন শনিবার বিকেলে সাংবাদিকদের জানান, ‘সোহাগের নিখোঁজের পর থেকে থানা, ডিবি, র‌্যাব ও জেলা পুলিশের বিভিন্ন দফতরে গিয়েও তার (সোহাগ) হদিস পাচ্ছি না।’

এমনকি কারাগার পর্যন্ত খোঁজ নেয়া হয়েছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সোহাগের পরিবারের সদস্যরা তাকে কেন আটক করা হয়েছে তা জানাতে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের বক্তব্য জানতে চেয়েছে।

তনুর বাবা-মাকে সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদ

শনিবার সিআইডি ঢাকার সিনিয়র বিশেষ পুলিশ সুপার ও মামলার তদন্ত সহায়ক দলের প্রধান আবদুল কাহ্হার আকন্দের নেতৃত্বে সিআইডির ঢাকা ও কুমিল্লার একটি দল দুপুর ১২টার দিকে কুমিল্লা সেনানিবাসে যায়। তদন্তকারী দল প্রথমে তনুর মরদেহ যে স্থান থেকে উদ্ধার করা হয় সে স্থানটি পরিদর্শন করে। পরে তনুর সেনানিবাস এলাকার অলিপুরে সেনাবাহিনীর যেসব কর্মকর্তাদের বাসায় প্রাইভেট পড়াতো সেসব বাসায় যান এবং আসা-যাওয়ার পথে তারা ঘটনাস্থল ও আশপাশের পুরো এলাকা পর্যবেক্ষণ করেন।

এসময় দলের অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন, সিআইডি-ঢাকার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার এহসান উদ্দিন চৌধুরী, পরিদর্শক মাওলা এবং কুমিল্লা থেকে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করিম খান, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন আহমেদ, সহকারী পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক, পরিদর্শক শাহনেওয়াজ, মামলার বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা গাজী ইব্রাহীম, সাবেক দুই তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি একেএম মনজুর আলম ও ক্যান্টনমেন্ট পুলিশ ফাঁড়ির এসআই সাইফুল ইসলামসহ পুলিশ-সিআইডির পদস্থ কর্মকর্তারা।

পরিদর্শন শেষে বিকেল ৩টার দিকে কুমিল্লা সেনানিবাসে তনুদের বাসা থেকে তনুর বাবা ইয়ার হোসেন, মা আনোয়ারা বেগম, দুই ভাই নাজমুল হোসেন ও আনোয়ার হোসেন রুবেল, চাচাতো বোন লাইজু জাহান লাইজুকে সিআইডি কুমিল্লা কার্যালয়ে এনে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

এ বিষয়ে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করিম খান সাংবাদিকদের জানান, তথ্য-উপাত্ত দিয়ে প্রমাণ করে মামলার তদন্ত কাজ এগুতে চাই। সবদিক যাচাই-বাছাই করে দেখছি। প্রাপ্ত তথ্য উপাত্তের সমন্বয় করা হচ্ছে।

তিনি জানান, তনুর মা-বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর রাতে তাদেরকে আবার সেনানিবাসের বাসায় পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার ও তদন্ত সহায়ক দলের প্রধান আবদুল কাহার আকন্দ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বিষয়টি দেখছি। এটা নিয়ে বিশ্লেষণ করছি। এর বাইরে আর কিছু বলা যাবে না।’

তনু হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন-বিক্ষোভ

তনু হত্যার বিচার দাবিতে শনিবার কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড়-রাণীর বাজার সড়কে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে মডার্ন হাইস্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এছাড়া নগরীর রামমালা সড়কে সার্ভে ইনস্টিটিউটের প্রতিবাদী শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।

একই দাবিতে জেলার দেবিদ্বার উপজেলার মফিজ উদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও আজগর আলী মুন্সী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।

কুমিল্লাস্থ গণজাগরণ মঞ্চের উদ্যোগে শনিবার বিকাল থেকে এক কোটি গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। গণজাগরণ মঞ্চ-কুমিল্লার সংগঠক খায়রুল আনাম রায়হান জানান, এক কোটি প্রতিবাদী জনতার স্বাক্ষর সংগ্রহ শেষে তা সংসদে প্রেরণ করা হবে।

এদিকে তনু হত্যার বিচারের দাবিতে কুমিল্লা নগরীর পূবালী চত্বরে কুমিল্লাস্থ গণজাগরণ মঞ্চের উদ্যোগে নাগরিক সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রতিবাদী জনতার সাথে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করে।

উল্লেখ্য, গত ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকার বাসার অদূরে একটি জঙ্গলে তনুর লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় তনুর বাবা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে কোতয়ালী মডেল থানায় মামলা করেন। পুলিশ ও ডিবির পর মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি।

গত ৩০ মার্চ সিআইডি ঢাকার সিনিয়র পুলিশ সুপার আবদুল কাহ্হার আকন্দকে প্রধান করে ৬ সদস্যের একটি তদন্ত সহায়ক কমিটি গঠন করা হয়।