ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবদের বিচার কেন করছেন না ?

Khaleda Ziaডেস্ক রিপোর্টঃ ওয়ান-ইলেভেনের ষড়যন্ত্রের বিচারের উদ্যোগ কেন নিচ্ছেন না- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সেই প্রশ্ন রেখেছেন জরুরি অবস্থার সময় তার মতোই কারাবন্দি খালেদা জিয়া।

মাহফুজ আনামের এক বক্তব্যের পর ওয়ান-ইলেভেন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার মধ্যে মঙ্গলবার রাতে নিজের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্যে এই প্রশ্ন রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

এই প্রসঙ্গে সোমবার সংসদে শেখ হাসিনার বক্তব্য ধরে খালেদা জিয়া বলেন, আমি বলব, তাদের (সরকার) যদি সততা থাকে, সত্যি যদি উনি (প্রধানমন্ত্রী) এটা মিন করে থাকেন, তাদের ধরে দেখিয়ে দেবেন, প্রমাণ করে দেবেন, উনি (প্রধানমন্ত্রী) এটা মিন করছেন, সত্যি বলছেন।

সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ডিজিএফআইয়ের ‘সরবরাহ করা’ করা খবর যাচাই ছাড়া প্রকাশের ভুল ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম স্বীকার করার পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ওই সময় ঘিরে নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত।

অগণতান্ত্রিক সরকারের ‘ক্ষমতারোহণে ভূমিকা’ রাখার জন্য মাহফুজ আনামের বিচারের দাবি যেমন উঠেছে, তেমনি ওই ষড়যন্ত্রের কুশীলবদের চিহ্নিত করতে কমিশন গঠনের প্রস্তাবও এসেছে সংসদে।

একদিন আগে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সংসদে ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর সমালোচনা করে বলেন, তখন তাকে গ্রেপ্তারের পথ তৈরি করতে মিথ্যা খবর ছাপিয়েছিল এই দুটি সংবাদপত্র।

তখন নিজের পাশাপাশি খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে বিতাড়িত করতে ষড়যন্ত্রের কথাও সম্প্রতি আরেকটি আলোচনা সভায় বলেছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। বলা হলেও সরকার সেই ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার করতে চায় কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে খালেদা জিয়ার।

তিনি বলেন, উনি (প্রধানমন্ত্রী) নিজে বলেছেন, মাইনাস টু ফর্মুলা। আমরা যদি একসঙ্গে থাকতাম, তাহলে এক-এগারোওয়ালাদের কিচ্ছু করার সাহস ছিল না। এই কেইস-টেইস কারা করেছে, তিনি বলেছেন।

‘মাহফুজ আনাম ( ডেইলি স্টার সম্পাদক) না। মাহফুজ আনাম তো স্বীকার করেছেন। তাহলে এখন গুটিকয়েক তো দেশেই আছে। তারা কেন এখনও বহাল তবিয়তে আছে? তারা কেন বাইরে আছে?’

‘তখন ডিজিএফআইয়ের প্রধান ছিল রুমি (মেজর জেনারেল সৈয়দ ফাতেমী আহমেদ রুমি), এখন দেশেই আছে। মাসুদ (লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী) তো অস্ট্রেলিয়ায় ছিলেন। কতবার এক্সটেশন পেয়েছেন। কার মাধ্যমে পেয়েছেন? এই সরকারের মাধ্যমে। কেন তাকে ধরা হয় না? এখন তো দেশেই আছেন। হাসান মাশহুদ চৌধুরী, যিনি এন্টি করাপশনে ছিলেন, দেশেই আছেন শুনেছি। সে দুর্নীতি দমন কমিশন এসব মামলা করেছে। তাদের কেন ধরা হয় না?’

ওয়ান-ইলেভেনে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ‘অবৈধ’ বলার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সঙ্গে একমত হলেও ওই সরকারকে ‘সমর্থন’ দেওয়ার জন্য শেখ হাসিনাকেও দায়ী করেছেন খালেদা।

‘তাদের (ফখরুদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন ওই সরকার) শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উনি (শেখ হাসিনা) গিয়েছিলেন। সবাই সব দেখেছেন। উনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আমাদের আন্দোলনের ফসল’। তার মানে উনি এটা (ওয়ান-ইলেভেন) করিয়েছেন। উনি বাদ পড়তে পারেন না।’

‘তার অর্থ তিনি (শেখ হাসিনা) গণতন্ত্রকে শেষ করে দিয়ে অবৈধভাবে অগণতান্ত্রিক সরকারের হাত ধরে ক্ষমতায় আসতে চান। যদি অন্যায় না করে থাকি তাহলে কীসের ভয়? তিনি (শেখ হাসিনা) তাদের সঙ্গে কাকুতি-মিনতি করে ১১ মাসে বেরিয়েছেন।’

নিজের কারাবাসের প্রসঙ্গ টেনে খালেদা জিয়া বলেন, আর আমি বলেছি, আমি করব না। তাদের (১/১১ কুশীলব) সঙ্গে রীতিমতো ফাইট করেছি। বলেছি, তোমাদের কথামতো আমি চলব না। আমাদের একটা নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গী আছে। আমি জনগণের সঙ্গে বেঈমানি করে কিছু করতে পারব না। দেশের মানুষের সঙ্গে বেঈমানি করতে পারব না।

‘সেজন্য আমি দেশ ছেড়ে কোথাও যাইনি, জেলখানায় ছিলাম। সেখানে আমি ১ বছর ৮ দিন ছিলাম। উনি ১১ মাসের পর বেরিয়ে বিদেশে চলে গেল, হাতে মেন্দি-টেন্দি লাগিয়ে। উনি যেসব কাজ করেছেন, এটা ঠিক করেননি।’

এই প্রসঙ্গে বিএনপিবিহীন সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘ও তো দালাল আছে, সব সময় দালালিই করেছে।’

অনুষ্ঠানের শুরুতে আন্দোলনে নিহত চট্টগ্রামের পাঁচলাইশের ষোলকবহরের হুমায়ুন কবিরের স্ত্রী জেসমিন আক্তার এবং আন্দোলনে আহত পাহাড়তলীর সাগরিকার দক্ষিন কাট্টলীর মো. আরাফাত, মো, ইয়াছির, মোহাম্মদ রাজিব, সরাইপাড়ার মো. বদরুল আলম, চাঁদগাঁওয়ের ৪ নং ওয়ার্ডের নওশাদ আল জামসেদুর রহমান ও খুলশীর ঝাউতলার শাহ আলম মুনের হাতে আর্থিক অনুদানের চেক প্রদান করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

আসন্ন ইউনিয়ন পরিদ নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, এটা নামমাত্র নির্বাচন। নির্বাচন নির্বাচন খেলা। গণতন্ত্রকে তারা হাস্যপ্রদ করে ফেলেছে। কারণ এই সরকার জনপ্রতিনিধির রায় নিয়ে ক্ষমতায় আসেনি। তারা অবৈধভাবে সরকারের আছে।

প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বক্তব্য উদ্ধৃতি করে খালেদা জিয়া বলেন, প্রধান বিচারপতি যেগুলো বলেছেন, অবসরের যাওয়ার পরে আর রায় লেখার সুযোগ খাকে না। তার মানে উনি ( সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক) অবসরে যাওয়ার আগে যে রায়টা দিয়েছেন, ওইটি কার্য্কর। অর্থাৎ আরো দুইটি টার্ম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। আমাদের দাবিও সেখানে।

‘‘২০১৪ সালে কোনো নির্বাচন হয়নি। কাজেই আমাদের দাবি আরেকটা নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। তাদের যদি কোনো ভয় না থাকে, তাহলে সকলকে সমান সুযোগ দিয়ে সব দলের অংশ গ্রহনের একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন।”

আন্দোলনে ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করা হবে বলে জানান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, এখানে কথা উঠেছে, যারা আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ গ্রহন করেছিলো, তাদেরকে দলে ভালো ভালো জায়গা দিতে হবে। আমিও করতে চাই, কিন্তু আমাকে সহযোগিতা করতে হবে। সত্যিকারভাবে যারা কাজ করেছে, তাদের নামগুলো আমাকে দিতে হবে। ছাত্র দল ও যুব দলের ছেলেরা এখন তারা ছোট নয়। এখন কিন্তু তাদের দলের দায়িত্ব নেয়ার সময় এসে গেছে।

‘‘আমি বলব, বয়স্ক নেতা যারা আছেন, তারা দলকে অনেক দিয়েছেন, বয়স হয়েছে, এখন তাদেরকে আমরা উপদেষ্টা পরিষদের নিয়ে তরুনদের সামনে আনবো যাতে তারা দেশ ও দলের জন্য কাজ করতে পারে- এটা আমার ইচ্ছ। আমি সবার সহযোগিতা চাই।” আন্দোলনে আহত নেতা-কর্মীদের সহযোগিতায় দলের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবানও জানান বিএনপি চেয়ারপারসন।

সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ফারহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন বক্তব্য রাখেন।

এ সময়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম খান, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খন্দকার প্রমূখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।