হরতাল- মানুষ খুন এবং অগ্নিসংযোগ মানুষ যে গ্রহণ করে না তা খালেদার বোধদয় হয়েছে

নিউইয়র্কে গ্রন্থমেলার উদ্বোধনীতে অর্থমন্ত্রী মুহিত

ANA PIC-1
বক্তব্য রাখছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। ছবি- এনা।

নিউইয়র্ক থেকে এনা: আন্দোলনের নামে হরতাল- মানুষ খুন এবং অগ্নি সংযোগ বাংলাদেশের মানুষ পছন্দ করে না, তা মনে হয় খালেদা জিয়ার বোধদয় হয়েছে। গত ৭ বছরে শেখ হাসিনার সরকার বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতির জন্য যা করেছে গত ৪৫ বছরে তা কোন সরকার করেনি। বাংলা ভাষা হচ্ছে মজার ভাষা, আর আমরা এই ভাষার জন্য জীবন দিয়েছি, পৃথিবীর অন্য কোন দেশের মানুষকে ভাষার জন্য আমাদের মত জীবন দিতে হয়নি। যদিও আসমের মানুষরা তাদের ভাষার জন্য আন্দোলন এবং রক্ত দিয়েছিলো। যার সাথে আমাদের আত্মাহূতির তুলনা চলে না। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের পিএস ৬৯ স্কুল অডিটোরিয়ামে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন এবং বাঙালি চেতনা মঞ্চ আয়োজিত একুশের গ্রন্থমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এসব কথা বলেন।

ফিতা কেটে গ্রন্থমেলার উদ্বোধন করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। ছবি- এনা।
ফিতা কেটে গ্রন্থমেলার উদ্বোধন করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। ছবি- এনা।

মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের কর্ণধার বিশ্বজিত সাহার পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশ মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন, নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কন্স্যুলেটের কন্সাল জেনারেল শামীম আহসান, সোসাল ইসলামিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান মেজর (অব:) ডা. রেজাউল হক, কেপিসির চেয়ারম্যান কালীপ্রদীপ চৌধুরী। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন একুশে পুরস্কারপ্রাপ্ত নাট্যকার জামালউদ্দিন হোসেন, ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ, অভিনেত্রী রওশন আরা হোসেন, লেখক ফেরদৌস সাজেদীন, সাংবাদিক হাসান ফেরদৌস, নিনি ওয়াহেদ, বাঙালি চেতনা মঞ্চের চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বাদশা, কলামিস্ট পার্থ ব্যানার্জি, সোনালী এক্সচেঞ্জের সিওও আতাউর রহমান, ফাহিম রেজা নূর, জীবন বিশ্বাস, সুব্রত বিশ্বাস, সোলায়মান আলী, আব্দুল হামিদ, শাহাদত হোসেন, গোপাল স্যান্যাল প্রমুখ।
দুই দিনব্যাপী গ্রন্থমেলার প্রথম দিনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত তিনটি পর্বে অংশগ্রহণ করেন। প্রথম পর্বে ফিতা কেটে উদ্বোধন শেষে তিনি বলেন, পৃথিবীর নানা দেশে ভাষার জন্য আন্দোলন হয়েছে কিন্তু আমরা যেভাবে ভাষার জন্য জীবন দিয়েছি অন্য কোন দেশের মানুষ সেভাবে জীবন দেয়নি। যদিও আসামের মানুষ তাদের ভাষার জন্য আন্দোলন করেছিলো। সেখানে ১৩ জন মানুষ জীবন দিয়েছে কিন্তু তা আমাদের সাথে তুলনা চলে না। তিনি বলেন, বাংলা ভাষা হচ্ছে মজার ভাষা। এই ভাষার অধিকার আমরা আদায় করেছি ১৯৫২ সালে। ভাষা আন্দোলন থেকেই আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরু। সেই আন্দোলনের পথ ধরেই জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৬৬ সালে ৬ দফা ঘোষণা করেন। যা আমাদের মধ্যে জাগরণ সৃষ্টি করে। পাকিস্তানীরা কোন মতেই আমাদের দাবি মেনে নিতে প্রস্তুত ছিলো না। যে কারণে আমরা যুদ্ধ করে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করি। ভারত আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করলেও আমেরিকাসহ কোন কোন অনেক পরে স্বীকৃতি দিয়েছে। তিনি বলেন, মধ্যযুগে অনেক দেশ স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছে কিন্তু ৭০ এর দশকে শুধু আমরাই যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। দেশ স্বাধীনের পর বিশ্ব ব্যাংক আমাদের সহযোগিতা করেছিলো, জাতিসংঘ তিন বছর আমাদের সহযোগিতা করে। তিনি বলেন, বলতে গেলে আমরা প্রায় ২৩ বছর যুদ্ধ করেছি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যে সব সামরিক বাহিনী দেশ শাসন করেছে, তারা পাকিস্তানী স্বৈরশাসকদের চেয়েও অপদার্থ ছিলো। ১৯৭৫ সাল থেকে ৯০ সাল পর্যন্ত কোন গণতন্ত্র ছিলো না। ১৯৯১ সালে আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করি। তিনি বলেন, গত ২১ বছরে আমাদের প্রবৃদ্ধির হার ছিলো ৩% এর মত। বর্তমান শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে আমাদের প্রবৃদ্ধির হার ৬%। আগামীতে তা ৭% হবে। তিনি বলেন, ভাল দিক হচ্ছে খালেদা জিয়ার বোধদয় হয়েছে। তিনি উপলদ্ধি করতে পেরেছেন যে, বাংলাদেশের মানুষ হরতাল চায় না, মানুষ হত্যা চায় না এবং অগ্নিসংযোগ চায় না। তিনি বলেন, হতাশ হয়ে মনে করেছিলাম ২০০০ সালে অবসর নেবো। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে অবসর না নিয়ে ভালই করেছি। যে স্বপ্ন নিয়ে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলাম, এখন সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে, এখন মহা আনন্দে মরতেও পারি। তিনি বলেন, সন্ত্রাসের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে মৌলবাদও বিদায় হচ্ছে। তবে অন্য একটি পর্বে হাসান ফেরসৌদের মুক্তমনা লেখকদের হত্যার ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গুপ্ত হত্যা বন্ধ করা যাবে না। ঐ অনুষ্ঠানে তিনি তার ছাত্রজীবন, কলেজ জীবন এবং রাজনৈতিক জীবন তুলে ধরেন। নিনি ওয়াহেদের পরিচালনায় আলোচনা পর্বে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এটাই আমাদের সাকসেস। তিনি বিদ্যুৎ, শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য সেবা এবং যাতায়ত ব্যবস্থার উন্নতি নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, আমাদের প্রাইমারি শিক্ষা ব্যবস্থা ভাল, মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থা পচা এবং উচ্চ শিক্ষা স্থিতিশীল।
আলোচনা সভাটি পরিচালনায় ছিলেন সেমন্তি ওয়াহেদ। এ ছাড়াও প্রথম দিনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করে উদীচী স্কুল, কানেকটিকাটের শুদ্ধস্বর ও সঙ্গীত পরিষদ।