পুরুষ শিকারী এক বহুরূপী যুবতি বিয়ানীবাজারের ফুলি

muntaha-fuliডেস্ক রিপোর্টঃ কত পুরুষে গা ভাসিয়েছেন সিদরাতুল মুনতাহা চৌধুরী ফুলি? কতজনকে করেছেন বিয়ে? প্রেম, অভিসার, বিয়ে যেন তার কাছে নস্যি। যখন যাকে পটাতে পারলেন তার সঙ্গেই করলেন প্রেম। এরপর বিয়ের নাটক। আর এভাবেই সিলেটে একের পর এক ঘটনার জন্ম দিয়েছেন তিনি। দু’দফা গিয়েছেন কারাগারেও। এরপরও ঘটনার শেষ নেই সিদরাতুল মুনতাহা চৌধুরীর ফুলির। টাকার লোভে পুরুষ পটানোকেই এখন রীতিমতো পেশা হিসেবে নিয়েছেন। এ কারণে তার বেপরোয়া জীবন এখন সিলেটের যুবকদের কাছে আতঙ্কের। এই ফুলি কখনো প্রেমিককে নিয়ে করেছেন অভিসার, কারও সঙ্গে বিয়ে বিয়ে নাটক করেছেন, আবার কারও বুকে মাথা রেখে নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখিয়েছেন, কারও সঙ্গে করেছেন প্রেমের নাটক। আর এসব কর্মকাণ্ডের সচিত্র ছবি এখন ভাসছে সামাজিক মাধ্যমে। বেপরোয়া জীবনের অধিকারী এই ফুলির কাছে এসবের কোনো তোয়াক্কা নেই। বরং টাকা ধান্দার নতুন নতুন পথই খুঁজে বেড়াচ্ছেন তিনি। আর পিছু ছাড়ছেন না আগের স্বামী কানাডায় অবস্থারনত মাহবুব ইসলাম চৌধুরীরও। বিয়ানীবাজার উপজেলার কাদিমল্লিক গ্রামের সিদরাতুন মুনতাহা ফুলির সঙ্গে  গোলাপগঞ্জের রফিপুর গ্রামের কানাডা প্রবাসী মাহবুব উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে বিয়ে হয় কয়েক বছর আগে। দেশে থাকা মুনতাহা চৌধুরী ফুলির প্রেমে পাগল হয়েই মাহবুব তাকে বিয়ে করেছিলেন। বিয়ের পর ফুলির বহুগামিতার চরিত্র প্রকাশ পায় স্বামী মাহবুবের কাছে। সেই থেকে দ্বন্দ্ব। দ্বন্দ্বের ঘটনার পর প্রেমিককে দিয়ে ভাসুরপুত্রকে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণের জন্য অপহরণ করাতে চেয়েছিল। বার বার ভাসুরপুত্রকে অপহরণের হুমকি দিয়ে ফোন করায় ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে বড় জা মাহবুবা নোমান চৌধুরী হয়েছিলেন পুলিশের দ্বারস্থ। করেছিলেন থানায় ডায়েরি। আর এ ঘটনার তদন্তে গিয়ে পুলিশ নেপথ্যের নায়িকা হিসেবে সিদরাতুল মুনতাহা চৌধুরী ফুলিকে প্রেমিক নাজমুলসহ গ্রেপ্তার করেছিল। আর এই গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে কানাডিয়ান বধূ ফুলির বেপরোয়া জীবন কাহিনী প্রকাশ পেয়েছিল। আর এসব ঘটনায় ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়েছিলেন মুনতাহা চৌধুরী ফুলি। কিন্তু ২০১৫ সালে ফুলিকে নিয়ে ঘটেছে আরও ঘটনা। এসব ঘটনা ইতিমধ্যে মানবজমিন-এর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। এরই মধ্যে কানাডা প্রবাসী মাহবুব চৌধুরীর সঙ্গে ডিভোর্স হয়েছে ফুলির। ভাসুর বেলাল আহমদ চৌধুরী স্ত্রীর মাহবুবা নোমান চৌধুরী তার সন্তান কানাডা সিটিজেন ওয়াসিফ চৌধুরীকে অপহরণের হুমকির ঘটনায় ২০১৪ সালের ২৮ আগস্ট কোতোয়ালি থানায় মোবাইল নম্বর দিয়ে জিডি করেন। ওই জিডি’র সূত্র ধরে সিলেট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ খোঁজ পেয়েছিল ফুলির প্রেমিক জগন্নাথপুর এলাকার হাড়গ্রামের রেহান উল্লাহর ছেলে দিলদার হোসেন নাজমুলকে। পরবর্তীতে নাজমুলকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশই প্রথমে কানাডা প্রবাসী মাহবুব ইসলাম চৌধুরীর স্ত্রী সিদরাতুল মুনতাহা চৌধুরী ফুলির খবর পায়। পরবর্তীতে সে গ্রেপ্তারও হয়। আর ওই সময় গ্রেপ্তারকৃত নাজমুল আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে জানিয়েছিল ফুলির প্ররোচনায় সে দেশে থাকা মাহবুবা চৌধুরী ও প্রবাসে থাকা মাহবুব চৌধুরীর কাছে ১০ লাখ টাকা চায়। এবং না দিলেও মাহবুবার সন্তান কানাডা সিটিজেন ওয়াসিফ চৌধুরীকে অপহরণের হুমকি দেয়। এদিকে, এ ঘটনায় মামলা দায়ের করার পর সিলেটের কোতোয়ালি থানা পুলিশ তদন্ত শুরু করে। দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে সিলেটের কোতোয়ালি থানার পুলিশের তৎকালীন সাব-ইন্সপেক্টর এসআই হারুনুর রশীদ চার্জশিট দাখিল করেন। ওই চার্জশিটে তিনি ঘটনার সঙ্গে সিদরাতুল মুনতাহা চৌধুরী ফুলি ও তার প্রেমিক দিলদার হোসেন নাজমুলকে দোষী করা হয়। গত বছরের ১৬ই নভেম্বর আদালতে দায়ের করা চার্জশিটে এসআই হারুনুর রশীদ কানাডিয়ান বধূ ফুলির বেপরোয়া জীবনের সত্যতা খুঁজে পান। তার উচ্ছৃঙ্খল ও মদ্যপ জীবনের খোঁজ পায় পুলিশ। এদিকে, এই চার্জশিটের পরও সিলেটের সিআইডি আলোচিত এ ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত করে। সিলেট সিআইডি জোনের বিশেষ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেহেরুন নেছা পারুল এ ব্যাপারে গত বছরের ৫ই মে সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করেন। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে তিনি ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ২৩ জনের জবানবন্দি, ৮ টি আলোকচিত্র ও পত্রিকার ফটোকপি সংযুক্তি প্রেরণ করেন। ওই প্রতিবেদনে সিআইডি কর্মকর্তা জানান, ফুলির সঙ্গে দিলদার হোসেন নাজমুলের গভীর সম্পর্ক হয়। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ১৯শে জুন সিলেট নগরীর একটি হোটেলে ফুলির সঙ্গে নাজমুলের বিয়ে হয়। আর সেই বিয়ের ছবি তদন্তকালে সিআইডি কর্মকর্তারা পেয়েছে। কথিত বিয়ের পর নাজমুল ফুলিকে নিয়ে নগরীর ১৭-২ সাগরদিঘীরপাড়ার বাসায় বসবাস করে। আর এই বাড়িতে বাস করার সময় রিপন নামে আরও এক যুবক সব সময় ফুলির বাসায় যাতায়াত করতো। একই সময় ফুলি আরিফ নামে এক যুবকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে সব সময় কথা বলতো। একই সঙ্গে প্রতিদিনই নেশা করতো ফুলি। নেশা করে গভীর রাতে বাসায় ফিরতো। এসব কারণে নাজমুলের সঙ্গে ফুলির দূরত্ব সৃষ্টি হয়। সিআইডি রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়, ফুলির প্রায় সব নাজমুলকে দিয়ে তার কানাডার স্বামী মাহবুব ও দেশে থাকা জা’কে ফোন করাতো এবং মুক্তিপণ দাবি করতো। ফুলির নেশাগস্ত জীবনের অনুসন্ধানের তথ্যে জানিয়ে সিআইডি’র ওই কর্মকর্তারা আদালতকে জানিয়েছেন, প্রতিদিন ফুলি সিলেটের রোজভিউ হোটেলে বারে নাজমুল, রিপন ছাড়াও একেক দিন একেক জন যুবককে নিয়ে সময় কাটাতো। অতিরিক্ত মদ সেবন করার কারণে বারে বারের মধ্যে উগ্র ও উচ্ছৃঙ্খল আচরণসহ একেক দিন একেক যুবককে নিয়ে বার-রুমে সময় কাটানোর কারণে বার কর্তৃপক্ষ তাকে আসা নিষিদ্ধ করে দেয়। রোজভিউ বারে না গেলেও সে শহরের বিভিন্ন স্থানে নেশা করে বেড়ায় বলে সিআইডি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে সিআইডি’র ওই কর্মকর্তা জানান, ২০১৪ সালের আগস্ট মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ফুলির কথিত প্রেমিক আরিফ ঢাকায় আসে। এরপর সিলেটে এসে দরগার গেইটের সামনে হোটেলে এক সঙ্গে অবস্থান করে এবং নেশা কার্যক্রম বাড়িয়ে দেয়। আর এ খবর পেয়ে নাজমুল হোটেল থেকে আরিফ ও ফুলিকে তার সাগরদিঘীরপাড় বাসায় নিয়ে আসে। সেখানে আসার পর নাজমুল অপর যুবক আরিফকে জানায় ফুলি তার স্ত্রী। একই সময় আরিফও জানায় ফুলি তার বিবাহিত স্ত্রী। কানাডা থাকা অবস্থায় তারা বিয়ে করেছে। ফলে ফুলিকে নাজমুল ও আরিফের নিয়ে টানাটানি হয়। একপর্যায়ে ফুলির কাছে আরিফ ও নাজমুল মতামত জানতে চায়- কাকে নিয়ে সে থাকবে। এ সময় ফুলি আরিফকেই বেছে নেয়। এ সিদ্বান্তের পর নাজমুল ফুলির সঙ্গ ত্যাগ করে চলে যায়। এদিকে, সিআইডি’র প্রতিবেদনের পরও দমেনি সিদরাতুল মুনতাহা ফুলি। সে এরপরও জা মাহবুবা নোমান চৌধুরীকে একের পর এক হুমকি দিতে থাকে। এ ঘটনায় ২০১৫ সালের ২২শে মার্চ, একই বছর ১০ই জুন ও ১১ই নভেম্বর কোতোয়ালি থানায় তিনটি জিডি দায়ের করেন। ওই জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, পরপর দু’দফা কারাবরণের পর সিদরাতুল মুনতাহা চৌধুরী ফুলি তার সঙ্গী কয়েকজন যুবককে নিয়ে তার বাসার আশপাশে মহড়া দেয়। এ কারণে তিনি ছেলেকে নিয়ে স্কুলে যেতে পারছেন না বলে জিডিতে উল্লেখ করেন তিনি। মাহবুবা নোমান চৌধুরী মানবজমিনকে জানিয়েছেন, গেল বছরের মাঝামাঝি সময়ে কানাডা প্রবাসী মাহবুব ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে ফুলির ডিভোর্স হয়েছে। একমাত্র মেয়ে মানহা এখন ফুলির কাছে রয়েছে। কয়েক মাস আগে মেয়ের অসুস্থতার কথা জানিয়ে ফুলি মাহবুব চৌধুরীর কাছ থেকে কয়েক লাখ এনেছে। তিনি জানান, কানাডা থাকাকালে ফুলি এক চাইনিজ মহিলার কাছ থেকে ভুয়া চেক দিয়ে ১২ হাজার ডলার নিয়ে আসে। একই সময় তার স্বামীর ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি করে ১ লাখ ডলার নিয়ে এসেছে। এসব ঘটনায় কানাডায় মামলা চলছে বলে জানান তিনি। (মানবজমিন)