হিন্দু ধর্মগুরু হত্যায় আটক ৩ : আইএস’র দায় স্বীকার

10436ডেস্ক রিপোর্ট :: পঞ্চগড়ের দেবিদ্বারে হিন্দু ধর্মগুরু যজ্ঞেশ্বর রায়কে খুনের দায় মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএস স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ। রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে উত্তরাঞ্চলীয় এ জেলার দেবিদ্বারের শ্রী শ্রী সন্তগৌরীয় মঠের অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায়কে হত্যা করে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা। করতোয়া নদীর পাড়ে অবস্থিত মঠে ঢুকে সকালে দৃর্বৃত্তরা গলা কেটে হত্যা করে এই ধর্মগুরুকে। রাতে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এ সংগঠন সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম অ্যাপ ও টুইটারে প্রচারিত আইএস’র খুদে বার্তা উদ্ধৃত করে নিজেদের ওয়েবসাইটে এ সংবাদ প্রকাশ করে। আরবিতে লেখা জঙ্গি সংগঠন আইএসের বার্তা উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেছে, ‘আল্লাহর ইচ্ছায় খলিফার সৈনিকরা’ দেবীগঞ্জ মন্দিরের পুরোহিতকে হত্যা করেছে। ওই সময় গুলিতে তার এক সহযোগীও আহত হয়েছে। খুদে বার্তায় আইএস আরো বলেছে, ‘মুজাহিদরা অক্ষত অবস্থায় তাদের আস্তানায় ফিরেছে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া।’ মন্দিরে ওই সময় উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী গোপাল চন্দ্র জানায়, মোটর সাইকেলে তিন হামলাকারী ওই মন্দিরে আসে। প্রথমে তারা ধর্মগুরু যজ্ঞেশ্বর রায়কে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায় এবং পরে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে। খুনিদের সঙ্গে ধারালো অস্ত্রের পাশাপাশি ছিল আগ্নেয়াস্ত্রও। গোলাপ চন্দ্র নিজেও দৃর্বৃত্তদের ছোঁড়া গুলিতে আহত হয়। গত বছর রংপুরে জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও হত্যা, পাবনায় গির্জায় ঢুকে ধর্মযাজককে গত্যার চেষ্টা, বগুড়ায় শিয়া মসজিদ এবং ঢাকায় আশুরার দিনে শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া মিছিলে গেনেড হামলার পরও জঙ্গি সংগঠন আইএসের দায় স্বীকারের খবর দিয়েছিল সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ।

এসব সন্ত্রাসী হামলায় মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএস’র সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি জানিয়ে সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের দাবি নাকচ করে দেয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। বাহিনীর শীর্ষ কর্তারা বলেছেন, বাংলাদেশে আইএস বা এ ধরনের কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীর তৎপরতা নেই। অভিন্ন কথা বলেন সরকারের নীতি নির্ধারকরাও।

আইএস’র তৎপরতা নিয়ে জোর আলোচনার মুখে কথা বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ‘আফগানিস্তান বা পাকিস্তানের মতো’ ব্যবহার করার জন্য সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া হত্যা ও হামলার পেছনে আইএস থাকার স্বীকারোক্তি দিতে সরকারের ওপর ‘চাপ’ আসছে।

এদিকে, হামলার পর জেলার পুলিশ সুপার গিয়াস উদ্দিন আহাম্মেদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘হত্যার পেছনে কারা জড়িত এবং কী কারণে নৃশংস এ খুন হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত করে দুষ্কৃতকারী খুঁজে বের করা হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘পঞ্চগড়ে এমন ঘটনা এটাই প্রথম। দুষ্কৃতকারীরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতেই এই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে বলে মনে হচ্ছে।’

এদিকে, নৃশংস এ হত্যায় জড়িত সন্দেহে রোববার রাতে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। এদের দুজন ‘জেএমবি সদস্য’ এবং অন্যজন ইসলামী ছাত্রশিবিরের স্থানীয় নেতা বলে দাবি করেছেন দেবীগঞ্জ থানার ওসি।

আটকরা হলেন- খলিলুর রহমান (৫৫), বাবুল হোসেন (২৮) ও জাহাঙ্গীর হোসেন। এর মধ্যে খলিলুর ২০০৫ সালের ১৭ অগাস্টের বোমা হামলা মামলার আসামি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।