ক্যাম্পাসে ফিরলেন শাবির সেই শিক্ষক, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সাথে সমঝোতার চেষ্টা

Dr ariful islamডেস্ক রিপোর্টঃ গাড়ি চাপার দু’জন নিহতের ঘটনায় দীর্ঘদিন পলাতক থাকা শাবি শিক্ষক ড. আরিফুল ইসলাম ক্যাম্পাসে ফিরেছেন। গত বুধবার ক্যাম্পাসে ফিরে দায়িত্বে যোগ দেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. আরিফুল ইসলাম।
শাবিপ্রবি’র প্রক্টর ড. কামরুজ্জামান চৌধুরী অধ্যাপক আরিফের ক্যাম্পাসে ফেরার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন, দুর্ঘটনার বিষয়টি সমাঝোতার চেষ্টা চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তপক্ষ তা তদারকি করছে।
যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ড. আরিফকে ‘খুনি’ অভিহিত করে তাঁর শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। আর কলেজ শিক্ষকরা নগরীতে মানববন্ধন করে ড. আরিফকে শাবি থেকে বহিস্কারের দাবি জানিয়েছিলেন।
গত ২৩ জানুয়ারি আরিফুল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের এক কিলোমিটার সড়কে গাড়ি চালানো শিখছিলেন। এসময় চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে গাড়ির নিচে চাপা পড়ে নিহত হন গিয়াস উদ্দিন (৭০) ও তার ভাতিজা কলেজ শিক্ষক আতাউর রহমান (৫০)। কলেজ শিক্ষকতার পাশাপাশি লেখালেখি করতেন আতাউর রহমান। এতে আহত হন আতাউর রহমানের স্কুল পড়ুয়া মেয়ে রাহিবা। রাহিবা এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
দুর্ঘটনার পরদিন নিহত আতাউর রহমানের স্ত্রী ফারহানা চৌধুরী রুমি জালালাবাদ থানায় ড. আরিফের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
হত্যা মামলা থাকা সত্ত্বেও ড. আরিফের ক্যাম্পাসে ফিরে আসা ও দায়িত্ব গ্রহণ নিয়ে সমালোচনা করেছেন অনেক শিক্ষার্থী। সুদীপ্ত বিশ্বাস নামে শাবির এক শিক্ষার্থী এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ফেসবুকে লিখেছেন,- ‌
‘পলাতক’ আরিফ স্যার ‘বীরের বেশে’, বিনা বাঁধায় ক্যাম্পাসে পদার্পণ করলেন। শুধু তাই নয় সবাইকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিভাগীয় প্রধানের পদে পুনরায় যোগদান করলেন। আমরা মানে যারা এক কি:মি হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার দাবি করেছিলাম, শেষ পর্যন্ত আমাদের করার কিছুই ছিল না। এটা দু:খজনক হলেও নির্মম সত্যি। …দুজন মানুষকে খুন করেও শুধুমাত্র সমাজের উঁচুতলার মানুষ হওয়ার কারণে আরিফ স্যারকে বিন্দুমাত্র শাস্তি ভোগ করতে হল না, হারাতে হল না কিছুই। ক্ষমতা এমনই এক জিনিস মাইরি! বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক থেকে মন্ত্রীপুত্র সবাই ক্ষমতার সিড়ি বেয়ে আইনের উর্ধ্বে উঠে বসে আছেন। আমরা নিচুতলার পাবলিকেরা অযথা “বিচার চাই, বিচার চাই” বলে কেঁদেকেটে মরি।’
তবে সিলেট জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আখতার হোসেন জানান, ড. আরিফুল ইসলাম আদালত থেকে জামিন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছেন।
জানা যায়, দুর্ঘটনার পর থেকেই পলাতক ছিলেন ড. আরিফ। গত বুধবার তিনি ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন। বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বও গ্রহণ করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছেন, গাড়ি চাপায় দু’জন মৃত্যুর ঘটনায় সমঝোতার চেষ্টা চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ব্যাপারে মধ্যস্থতা করছে। আতাউর রহমানের আহত মেয়ে রাহিবার চিকিৎসা ও ভবিষ্যতের দায়ভার নেওয়ার শর্তে এই সমঝোতার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সমঝোতা উদ্যোগের অংশ হিসেবেই ক্যাম্পাসে ফিরেছেন ড. আরিফুল ইসলাম।
সমঝোতার প্রচেষ্টার কথা স্বীকার করে শাবি প্রক্টর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রাহিবার চিকিৎসা করছে। তাঁর ভরণ পোষন-লেখাপড়ার দায়িত্ব নেওয়ার ব্যাপারে আলাপ আলোচনা চলছে।
এ ব্যাপারে ড. আরিফুল ইসলামের সাথে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, ২৩ জানুয়ারি ৭ম শ্রেণিতে পড়া মেয়ে রাহিবা আক্তারকে নিয়ে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় দেখাতে গিয়েছিলেন আতাউর রহমান। সঙ্গে ছিলেন তাঁর মামা গিয়াস উদ্দিন। তাদের বাসা নগরীর মজুমদারি এলাকায়।