সস্তার তিন অবস্থা ! সাধু সাবধান : তুর্কিশ এয়ারলাইন্সের সহজলভ্য টিকেট নাকি প্রতারণা?

turkish airlines.jpgতানভীর ইউসুফ রনী সিবিএনএ কানাডা থেকেঃ প্রবাস মানেই কষ্টকঠিন জীবন। অপ্রতিরোধ্য জীবন সংগ্রামে নিজের দেশ জন্মভূমি-মাতৃভূমি প্রিয় স্বদেশ দেখার জ্য সব প্রবাসীরাই পাগলপ্রায়। নিজের জীবনকে কষ্টে রাখলেও প্রিয় জন্মভূমিতে থাকা স্বজনের প্রতি রয়েছে মায়া-মমতা। তাইতো স্বদেশে স্বজনকে দেখার জন্য প্রতিনিয়ত খুঁজতে হয় সহজলভ্য টিকিট। সেই সহজলভ্য টিকিট কিনতে গিয়ে প্রায়ই প্রতারিত হচ্ছেন সহজসরল প্রবাসীরা। এটার প্রমান তুর্কিশ এয়ারলাইনস। মাত্র ৭০০ থেকে ৮০০ ডলারে বাংলাদেশে ভ্রমণ, তাও আবার রাউন্ডট্রপি! অবাক করা মূল্যই বটে। কিছুদিন আগে তুর্কিশ এয়ার লাইনস ও কাতার এয়ার লাইনস বাংলাদেশের জন্য বিমান টিকেট সুলভমূল্যে (প্রমোশন) দেয়। র্মাচে সপ্তাহ কিছুসময়ের জন্য মার্চ ব্রেকের ছুটি কিংবা জরুরি প্রয়োজনে বিপুল সংখ্যক কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশী এবার বাংলাদেশ ভ্রমণ করেছেন কিংবা করবেন। কাতার এয়ার লাইনস ঠিক থাকলেও তুর্কিশ এয়ারলাইন্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে প্রচুর। সদ্য তুর্কিশ এয়ারলাইন্সে ভ্রমণ করেছেন এমন বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী অভিযোগ করেছেন সিবিএনএ। ভুক্তভোগী যাত্রীদের অভিজ্ঞতা তুর্কিশের ব্যাপারে মোটেই সুখকর নয়। এর মধ্যে একজন যাত্রী রায়হান জানালের তাঁর তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা। তাঁর ভাষ্যমতে ৫০% স্পেশাল সেল দেওয়া তুর্কিশরে টিকেট ক্রয় করাই ছিল সবচেয়ে বড় ভুল। প্রথমেই তাদের বহনকারী উড়োজাহাজটি ৪৫ মিনিট দেরীতে উড্ডয়ন করে তারপর আসার সময় আবার দেড় ঘণ্টা। এই নভেম্বরে তার প্রবীন বাবা মা সহ ভ্রমণ করেন বাংলাদেশ। যাত্রাপথে বিরতি হয় ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে। ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরের বিভীষিকাময় পরিস্থিতির বর্ণনা দিতে গিয়ে রায়হান বলেন যে, ‘জীবনের সবচাইতে খারাপ সময়ের মুখোমুখি হতে হয়েছে আমাদের। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বোডিং গেটে যাওয়ার জন্য কোন ঘোষণা না দিয়েই শুধু ২০ মিনিট সময় দেয় সেখানে পৌঁছানোর যা শুধু ২/১ টি টিভি স্ক্রীনেই প্রচারিত হয় কিছু সময়ের জন্য।’ রায়হানের বাবা স্বাস্থ্যগত জটিলতার কারনে দ্রুত চলতে পারেন না যার ফলে তাঁরা গেট বন্ধ হওয়ার ১৫ মিনিট আগে পৌছান। কিন্তু এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ তাদের উড়োজাহাজে উঠতে না দিয়ে সরাসরি পাঠিয়ে দেয় কাষ্টমার সার্ভিসে। সেখানে তাঁদেরকে মাথাপিছু ৫০০ মোট ১৫০০ মার্কিন ডলার জরিমানা করা হয়। সেই সাথে আরও ৬০ মার্কিন ডলার যোগ করা হয় ভিসার জন্য। প্রায় ২৫০০ কানাডীয় ডলার জরিমানা করার পরও তাদের থাকার জন্য কোন ধরনের হোটেল, খাওয়া এমনকি পানিরও ব্যবস্থা করেনি তুর্কিশ এয়ারলাইনস কতৃপক্ষ। কিন্তু জরিমানার ১৫০০ ডলার নেয়ার সময় তাদের বলা হয়েছিল তাদের থাকার জন্য হোটেলের ব্যবস্থা করা হবে। এটাই যদি ভোগান্তি বলা হয় তাহলে ভুল হবে পাঠক। সবচেয়ে বড় ভোগান্তিটি ছিল এই জরিমানার টাকা পরিশোধ করা। কাস্টমার সার্ভিসে কর্তব্যরত কোন কর্মকর্তাই বলতে পারেনি কোথায়, কিভাবে এই টাকা পরিশোধ করতে হবে। প্রায় সবাই তাদের স্মার্ট কোন নিয়েই ব্যস্ত ছিলো। শুধু জরিমানা কোথায় পরিশোধ করতে হবে তা খুঁজতেই রায়হানের সময় লেগেছে দীর্ঘ ৪ ঘন্টা। ৪ ঘন্টা পরও যখন তেমন কিছুই হচ্ছিল না রায়হান সখোনে যোগাযোগ করনে বিমানবন্দর পুলিশ প্রধানরে সাথে, যিনিও সেই এই ধাচরে লোক। সেই পুলিশ প্রধান (!)ও খারাপ ব্যবহার করেন রায়হানের সাথে। পুরো ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরের অবস্থাই লেজেগোবরে বলে অভিযোগ করেন রায়হান। সামান্য পানি পান করার মতো ব্যবস্থাও রাখা হয়নি কোথাও। পানি পান করতে হলে চড়াদামে ইউরো দিয়ে কিনতে হবে। ইউরোপের বিখ্যাত এয়ারলাইন্স দাবি করলেও বিমানবন্দরের ৯৯% কর্মচারীই ইংরেজীতে বলেন না, কিংবা বলতে চান না! একটি আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনসরে এমন যাচ্ছে তাই অবস্থায় হতবাক রায়হানের মতো অনেক যাত্রী। খনার বচন আছে ‘সস্তার তিন অবস্থা, অর্ধেক দামে কোন বিমান কর্তৃপক্ষ যখন বিমানের টিকেট প্রদান করে তারাও চেষ্টা করবে তাদের অংশটা কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে। আমরা যারা প্রবাসে কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে একটু আরাম করে নিজ দেশের আত্মীয় স্বজনদের সান্নিধ্য পেতে চাই আমাদের উচিৎ ভ্রমনের আগে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্স এর ব্যাপারে যথেষ্ট জেনে নেয়া। প্রতারণা চলছে, চলবে বিভিন্ন ভাবে, বিভিন্ন খাতে। অতএব, সাধু সাবধান।
প্রবাসীদের প্রতি সবিনয় অনুরোধ ট্রেভেলস এজেন্সীর চমকধারী বিজ্ঞাপনে আপনার কষ্টকঠিন জীবনের ম্যলবান সময় আর কষ্টার্জিত ডলার নষ্ট না করে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিন। একটু বেশী খরচেও আরামদায়ক দুঃশ্চিন্তাহীন ভ্রমন করুন।