কুলাউড়ায় হরিপদ মালাকারের হত্যাকারী আটক

Kulaura atok juelবিশ্বজিৎ রায়, কমলগঞ্জ প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থানা পুলিশ মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে গলাকাটা যুবকের মূল আসামী জুয়েল আহমেদ চৌধুরী প্রকাশ আজিজ আহমদ চৌধুরী (৩৫)কে গ্রেফতার করে কোর্টে সোপর্দ করেছে।
উল্লেখ্য যে, ২১ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার কুলাউড়া উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নের মন্দিরা গ্রাম থেকে হরিপদ মালাকার (৩০) নামক যুবকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছিলো পুলিশ। এঘটনায় কুলাউড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। ২০ জানুয়ারী বুধবার রাত ১০ টায় মন্দিরা গ্রামের বাঁশঝাড়ের মধ্যে হরিপদ মালাকারের লাশ উপুড় হয়ে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন হাজিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে জানায়। ইউপি চেয়ারম্যান বিষয়টি কুলাউড়া থানা পুলিশকে অবহিত করেন। খবর পেয়ে কুলাউড়া থানা পুলিশ ঘটানস্থলে যায়। পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ হরিপদের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মৌলভীবাজার মর্গে প্রেরণ করে। এব্যাপারে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হলে হত্যাকারীকে ধরতে দায়িত্ব দেয়া হয় কুলাউড়া থানার এসআই ফরিদ আহমদকে। ২৭ জানুয়ারী বুধবার রাতে শমসেরনগর চা-বাগান থেকে শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির সহযোগিতায় হত্যাকারী দলের মূল হোতা জুয়েল আহমেদ চৌধুরী প্রকাশ আজিজ আহমদ চৌধুরী (৩৫)কে গ্রেফতার করে পুলিশ। সে বারইগাওয়ের মুহিবুর রহমান মবুর ছেলে।
যে কারনে খুন হয়েছিলেন হরিপদ মালাকার ঃ শারিরিকভাবে অক্ষম থাকার পরও বহু বিবাহে আসক্ত ছিলো হরিপদ মালাকার। দুই বউ ঘরে থাকার পরও গেলো বছরের জানুয়ারী মাসে রাজনগর উপজেলায় আরেকটি বিয়ে করেছিলো হরিপদ মালাকার। বাসর রাতে প্রকাশ পায় হরিপদ মালাকার শারিরিকভাবে অক্ষম। এ নিয়ে সকালে বসে সালিশ। সালিশে ধার্যকৃত ক্ষতিপূরন এক সপ্তাহের মধ্যে পরিশোধ করার শর্তে হরিপদ মালাকারকে জিম্মায় নিয়ে আসে বন্ধু জুয়েল আহমেদ চৌধুরী প্রকাশ আজিজ আহমদ চৌধুরী। পরবর্তীতে হরিপদ মালাকারের পিতার কাছ থেকে টাকা নিয়ে জুয়েল আহমেদ চৌধুরী হরিপদ মালাকারকে নিয়ে রাজনগরে গিয়ে ৩য় বিয়ের বিষয়টি সমাধান করে দেয়। রাজনগরের বিষয়টি সমাধান করতে যত টাকা লেগেছিলো তার দ্বিগুন টাকা হরিপদ মালাকারের পিতার কাছ থেকে নিয়েছিলো জুয়েল আহমেদ চৌধুরী। বাড়তি টাকা ফেরত চাইলে দুই বন্ধুর মধ্যে শুরু হয় শত্রুতা। কয়েক মাস অপেক্ষার পর টাকা আদায় করার জন্য হরিপদ মালাকার বিভিন্ন দপ্তরে জুয়েল আহমেদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে হরিপদকে খুন করার ষড়যন্ত্র করে জুয়েল আহমেদ চৌধুরী। ভাড়া করে আরো ৩/৪জনকে। ২০ জানুয়ারী বুধবার রাত ৯টার দিকে হুরপদ মালাকার বাজার থেকে ফেরার পথে জুয়েল আহমেদ চৌধুরী তার সঙ্গীদের নিয়ে নির্মমভাবে খুন করে হরিপদ মালাকারের লাশ মন্দিরা গ্রামের বাঁশঝাড়ের মধ্যে ফেলে বাড়ীতে চলে যায়।
যেভাবে আটক করা হয় জুয়েল আহমেদ চৌধুরী ঃ কুলাউড়া থানার অপমৃত্যুর মামলা দায়েরের পর এই নির্মম খুনের তদন্তভার দেয়া হয় এসআই ফরিদ আহমদকে। তিনি দায়িত্বভার নিয়েই ঐ এলাকায় ৭/৮ জন সোর্স নিয়োগ করেন। সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে জুয়েল আহমেদ চৌধুরীর বাড়ীর দরজায় রক্তের দাগ দেখে অনেকটা নিশ্চিত হন এই খুনের সাথে জুয়েল আহমেদ চৌধুরী জড়িত। জুয়েলকে ধরতে তিনি ফাঁদ পাতেন শমসেরনগর এলাকায়। সোর্সের তথ্যমতে ২৬ জানুয়ারী রাতে শমসেরনগর চা-বাগানে অভিযান চালালেও অল্পের জন্য আটক করা যায়নি জুয়েল আহমেদ চৌধুরীকে। পরদিন তিনি অফিসের কাজে মৌলভীবাজারে অবস্থান করাবস্থায় খবর আসে জুয়েল শমসেরনগর বাগানে অবস্থান করছে। এসআই ফরিদ মৌলভীবাজার থেকে সেখানে ছুটে গিয়ে শমসেরনগর ফাঁড়ির পুলিশের সহায়তা জুয়েলকে গ্রেফতার করে কুলাউড়া থানায় নিয়ে আসেন। পরদিন মৌলভীবাজার কোর্টে সোপর্দ করলে জুয়েল হরিপদ মালাকারের খুনের বর্ণনা দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্ধি দেয়। প্রকাশ করে তার সঙ্গী আরো ৩/৪ জনের নাম।